রবিবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৫, ১২:০৫:০০

২০ লাখ শিশুকে বাঁচালেন যিনি

২০ লাখ শিশুকে বাঁচালেন যিনি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : দ্য ম্যান উইদ দ্য গোল্ডেন আর্ম অর্থাৎ, ‘সোনালি বাহুর মানুষ’ নামে পরিচিত মানুষটি আরো পাঁচজন সাধারণ মানুষের মতোই জীবন যাপন করেন অস্ট্রেলিয়ার । তার দৈনন্দিন কাজ আর পরিবারের সাথে সময়ও কাটানোর পাশাপাশি যে জিনিসটি তাকে অসাধারণত্ব এনে দিয়েছে তা হলো, তার শিরা উপশিরায় বয়ে চলা রক্ত। তিনি গত ৬০ বছর ধরে অস্ট্রেলীয় রেড ক্রস ব্লাড সার্ভিসে তার ডান হাত থেকে সপ্তাহে একবার রক্তদান করে আসছেন। রেড ক্রস ব্লাড সার্ভিস জানিয়েছে, এ পর্যন্ত তিনি রক্ত দিয়ে বাঁচিয়েছেন ২০ লাখ শিশুর জীবন। ছোটবেলার একটি ঘটনাই তাকে উদ্বুদ্ধ করে আসছে এই রক্তদানে। সেই সময়ের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, এটা ১৯৫১ সালের ঘটনা। তখন আমার বয়স ১৪। আমার বুকে একটি অস্ত্রোপচার হয়েছিল। আমার একটি ফুসফুস অপসারণ করা হয়েছিল। অস্ত্রোপচারের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে হ্যারিসন বলেন, অস্ত্রোপচার শেষ হওয়ার দুইদিন পর আমি আমার বাবার কাছে শুনেছিলাম কী ঘটেছিল। আমার জীবন বাঁচাতে ১৩ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়েছিল। অনেক অচেনা মানুষ আমাকে রক্ত দিয়েছিল। তারা স্বেচ্ছায় আমাকে রক্ত দিয়েছিল। বড় হওয়ার পর আমি ভাবলাম, আমি এখন বড় হয়েছি। আমিও একজন রক্তদাতা হবো। নিয়মিত রক্তদাতা হওয়ার পর থেকেই তার ব্যাপারে উদ্বেগ করেছে চিকিৎসকেরা। তারা বলেছে, হ্যারসিনের ঘন ঘন রক্তদান তার জন্য ভয়াবহ সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। অস্ট্রেলীয় রেড ক্রস ব্লাড সার্ভিসের জেমা ফকেনমারে জানান, দেশটিতে ১৯৬৭ সালের আগ পর্যন্ত প্রতিদিন হাজার হাজার শিশু মারা যেতে থাকে। চিকিৎসকরা এর কোনো কারণ খুঁজে বের করতে পারছিল না। পরিস্থিতি ছিল খুবই ভয়াবহ। একের পর এক নারীদের গর্ভপাত হচ্ছিল এবং যেসব শিশু জন্মগ্রহণ করছিল, তারা মস্তিষ্কের সমস্যা নিয়ে জন্মগ্রহণ করছিল। তিনি জানান, এটা হয়েছিল রেসাস রোগের কারণে। এ রোগে গর্ভবতী নারীর রক্ত তার গর্ভের সন্তানের কোষে সংক্রমিত হয় এবং এতে শিশুর মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এমনকি শিশু মারাও যেতে পারে। ১৯৬০ সালে হ্যারিসনের রক্তে আবিষ্কার করা হয় বিশেষ এক ধরনের অ্যান্টিবডি, যা রেসাস রোগ প্রতিরোধে সক্ষম। তার রক্তের অ্যান্টিবডি ব্যবহার করে চিকিৎসকরা তৈরি করেন ‘অ্যান্টি-ডি’ নামের ইনজেকশন। এটি রেসাস রোগে আক্রান্ত গর্ভবতী নারীদের চিকিৎসায় ব্যবহার করে রক্ষা করা হয় তাদের সন্তানদের। এরপর থেকে প্রতি সপ্তাহে রক্ত দিয়ে আসছেন হ্যারিসন। এক হাজারেরও বেশিবার রক্ত দিয়েছেন তিনি। অস্ট্রেলিয়াবাসীদের কাছে তিনি জাতীয় বীর। এ পর্যন্ত পেয়েছেন অনেক পুরস্কার ও খেতাব। এ ধরনের রক্ত অস্ট্রেলিয়াতেই প্রথম আবিষ্কার করা হয়েছিল। সে সময়ের বৈপ্লবিক আবিষ্কার ছিল এটি। তিনি বলেন, অনেক দাম দিয়ে হলেও হয়তো এক ব্যাগ রক্ত পাওয়া যায়। তবে হ্যারিসনের রক্ত হচ্ছে বিশেষভাবে অসাধারণ। তার রক্ত অসংখ্য শিশুর জীবন বাঁচিয়েছে এবং অনেক মাকে ঝুঁকিমুক্ত করেছে।’ তবে এতে কোনো অহঙ্কার নেই হ্যারিসনের। তিনি বলেন, ‘আমি একবারও আমার বাহুতে সুচ বিদ্ধ হতে দেখিনি। রক্ত দেয়ার সময় আমি উপরের দিকে অথবা নার্সদের দিকে তাকিয়ে থাকি। আমি রক্ত সহ্য করতে পারি না।’ ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/প্রদিপ/পিবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে