শনিবার, ২৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২০, ০১:০৪:১৩

'মানুষটা কেমন, তা জানতেও পারলাম না,' দিল্লির হিং'সায় স্বামীহা'রা নববধূ ফতিমার হা'হাকার

'মানুষটা কেমন, তা জানতেও পারলাম না,' দিল্লির হিং'সায় স্বামীহা'রা নববধূ ফতিমার হা'হাকার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : একসঙ্গে অনেকটা পথ যাওয়ার কথা ছিল দু'জনের। কিন্তু বিয়ের ১২ দিনের মাথাতেই ভে'ঙে গেল সব স্বপ্ন। হু'জ্জুতি মাথায় নিয়ে দুপুরে ভাত খেয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন সদ্য বিবাহিত ২২ বছরের আশফাক হুসেন। আর বাড়ি ফেরা হয়নি তার। এমনকি তার মৃ'তদেহের জন্য বসে রয়েছে গোটা পরিবার। তিন দিন ধরে ঘরের কোণে পড়ে রয়েছেন ২১ বছরের তসলিন ফতিমা। 

ঘুমের মধ্যেও মৃ'ত স্বামীকে হাতড়ে চলেছেন তিনি। স্বামীকে জানার, চেনার সুযোগটাই যে মিলল না! পূর্ব দিল্লির গোকুলপুরীর অন্তর্গত মুস্তফাবাদের ঘিঞ্জি গলির এক পাশে কোনও রকমে মাথা গোঁজার একটা জায়গা। সপরিবারে সেখানেই বাস ছিল আশফাক হুসেনের। পেশায় বিদ্যুৎকর্মী তিনি। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহরের সাখনিতে তসলিনের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। পরিবার পরিজনকে নিয়ে সবকিছু মেটাতেই বেশ কয়েক দিন লেগে যায়।

ভেবেছিলেন সব কিছু মিটিয়েই দিল্লি ফিরবেন। তসলিনকে নিয়ে সেখানেই নতুন জীবনে পা রাখবেন। একে অপরকে চিনবেন, জানবেন। কাজের প্রয়োজনে রবিবার রাতে একাই মুস্তফাবাদের বাড়িতে ফিরে আসেন আশফাক। ঠিক ওই সময়ই জাফরাবাদ এবং মৌজপুরে বি'ক্ষো'ভের আ'গুনে হাওয়া লাগে। উত্তরপ্রদেশেও সে খবর পৌঁছায়। ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে পর দিন ফিরে আসেন তসলিনও। 

নতুন বউ হিসাবে ওই দিন তার কাঁধেই রান্নার ভার পড়ে। তা সেরে দুপুর ২টা নাগাদ সকলে একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া সারেন। সেই প্রথম পাশাপাশি বসে খাওয়ার সুযোগ হয় তসলিন ও আশফাকের। কিন্তু দুপুরে খাওয়ার পরই একটি ফোন আসে আশফাকের কাছে। ফোনের পর ১২ দিনের স্ত্রীকে রেখে বাড়ি থেকে বেরোন আশফাক। পরস্পরকে সেই শেষ দেখা তাদের। তার পর আর ফেরা হয়নি আশফাকের। 

গু'লিবি'দ্ধ হন তিনি। পরিবারের লোকজন কিছু জানার আগে স্থানীয়রাই তাকে নিউ মুস্তফাবাদের আল হিন্দ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেই মৃ'ত্যু হয় আশফাকের। ম'য়নাতদ'ন্তের জন্য পরে গুরু তেগবাহাদুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তার দেহ। কিন্তু শুক্রবার পর্যন্ত তার দেহ হাতে পায়নি পরিবার।

প্রত্য'ক্ষদ'র্শীদের দাবি, রবিবার রাত থেকেই ব'ন্দু'ক, লাঠি এবং পেট্রোল বো'মা নিয়ে মুস্তফাবাদে ঢুকতে শুরু করে তা'ণ্ড'বকারীরা। ধীরে ধীরে পরি'স্থি'তি নিয়'ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। পুলিশ এবং দমকলবাহিনীকে একাধিক বার ফোন করা হলেও, কারও দেখা মেলেনি। বুধবার এলাকায় অ্যাম্বুল্যান্স পর্যন্ত ঢুকতে পারেনি। এলাকার একটি মসজিদে আ'গু'ন ধরিয়ে দেয় দু'ষ্কৃ'তীরা। আ'গুন ধরানো হয় একটি স্কুলেও। একাধিক বাড়িতে ভা'ঙ'চুর চালানো হয়।  

পুলিশ সময় মতো দায়িত্ব পালন করলে প'রি'স্থি'তি এতদূর গড়াত না বলে দাবি আশফাকের কাকা মুখতার আহমেদ। গত তিন দিন ধরে ছেলের ওয়ার্কশপে বসে কেঁ'দে চলেছেন আশফাকের বাবা। শুধু নিজের ছেলে নয়, চার দিন ব্যাপী হিং'সায় যারা প্রাণ হা'রিয়েছেন, তাদের সকলকে শ'হিদ ঘোষণা করতে হবে বলে দাবি তার। এই পরি'স্থি'তিতেও সরকার অপরা'ধীদের ক'ড়া শা'স্তি দেবে বলে আশাবাদী তিনি।

আর তসলিন ফতিমা? কিছু বলার মতো অবস্থায় নেই তিনি। উপরের একটি ঘরে গত তিন দিন ধরে জ্বর নিয়ে পড়ে রয়েছেন তিনি। এই তিন দিনে একটি দা'নাও মুখে তোলেননি তিনি। জল পর্যন্ত ছুঁয়ে দেখেননি। মুখে একটাই আ'ফশো'স, ''মানুষটা কেমন, তা জানতেও পারলাম না।''

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে