রবিবার, ০১ মার্চ, ২০২০, ০২:০৭:৩৫

মোদির নাগরিক সনদ নেই, জানাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়

মোদির নাগরিক সনদ নেই, জানাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) বিরোধী ও সমর্থকদের সং'ঘ'র্ষে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভারতের দিল্লিতে দ'ফায় দ'ফায় সং'ঘ'র্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ৪২ জনের প্রা'ণহা'নির খবর পাওয়া গেছে। আহ'ত হয়েছেন দুই শতা'ধিক।

পুলিশের সামনেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদসহ মুসলিমদের অসংখ্য বাড়িঘর ও দোকানপাটে বেছে বেছে আ'গু'ন ধ'রিয়ে দেয়া হয়েছে। ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি দিয়ে মুসলমানদের প্রকাশ্যে পে'টা'নো হয়েছে। সিএএ-এর জেরে ভারতে সবচেয়ে না'জেহা'ল অবস্থায় রয়েছেন সেখানকার মুসলমানরা। তাদের প্রতিটা দিনই কাটছে উ'দ্বেগ-উ'ৎক'ণ্ঠায়।

যেই নাগরিকত্ব আইন নিয়ে এত কিছু, সেখানে কি-না জানা গেল, খোদ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নাগরিকত্বের কোনো কাগজপত্র নেই; জন্মসূত্র তিনি ভারতীয়।

তথ্যের অধিকার আইনে (আরটিআই) মোদির নাগরিকত্ব নিয়ে এক ব্যক্তির প্রশ্নের জবাবে এমনটাই জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দফতর (পিএমও)। ভারতের প্রভাবশালী পত্রিকা আনন্দবাজার রোববার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি শুভঙ্কর সরকার নামে এক ব্যক্তি আরটিআই-এর মাধ্যমে জানতে চান প্রধানমন্ত্রীর নাগরিকত্বের কাগজপত্র রয়েছে কি-না। তারই উত্তরে পিএমওর সচিব প্রবীণ কুমার জানান, ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের ৩ ধারা অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী জন্মসূত্রেই ভারতীয়।

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) নিয়ে দেশজুড়ে বি'ক্ষো'ভের মধ্যেই এই তথ্য চা'ঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে খোদ রাজনৈতিক মহলে। তবে মোদির নাগরিকত্বের প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এ জবাবকে ‘অস্প'ষ্ট’ বলেছে ভারতের হায়দরাবাদের উ'র্দুভা'ষী পত্রিকা সিয়াসাত।

সিমি পাশা নামের এক প্রবীণ সাংবাদিক প্রশ্ন তুলেছেন, ‘১৯৫৫ সালের ভারতের নাগরিকত্ব আইনের ৩ ধারা অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যদি তার নাগরিকত্ব নিবন্ধনের প্রয়োজন না হয়, তাহলে অন্যদের বেলায় এ নির্দেশ কেন?’

ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে এর আগে একাধিকবার জানানো হয়, ২০১১ ও ২০১৫ সালের জাতীয় জনগণনা প'ঞ্জি অনুসারে যাদের পরিচয়পত্র দেয়া হয়েছে, এই পরিচয়পত্র যাদের কাছে পাওয়া যাবে না তারা নাগরিক না।

তবে দেশের জনগণের বড় অংশের কাছেই সেই পরিচয়পত্র নেই। আর এ কারণেই বিরোধীরা বরাবর একটা প্রশ্ন ছু'ড়ে দিচ্ছেন-যদি এই বিরাট গোষ্ঠী দেশের নাগরিকই না হয়ে থাকে, বিজেপি তাহলে কাদের ভোটে পেয়ে ক্ষ'ম'তায় এল। অবশ্য তার জবাব দেননি মোদি।

নতুন নাগরিকত্ব আইনে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে প্রতিবেশী বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে ভারতে পা'ড়ি জমানো হিন্দু, শিখ, জৈন, পার্সি, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানরা নাগরিকত্ব পাবেন বলে বিধান রাখা হয়েছে। তবে এই আইনে দেশটিতে আশ্রয় নেয়া মুসলিমদের নাগরিকত্বের ব্যাপারে কোনও কিছুই বলা হয়নি।

গত বছর ভারতের পার্লামেন্টের উভয়কক্ষে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাস হয়ে যাওয়ার পর দেশটির বিভিন্ন প্রান্তে সব ধর্মের মানুষ এর বিরোধিতায় বি'ক্ষো'ভ শুরু করে। বি'ক্ষো'ভ দমনে ভারতের নিরাপত্তাবাহিনীর স'হিং'স অ'ভি'যানে কয়েক ডজনের বেশি মানুষের প্রা'ণহা'নি ঘটেছে।

গত বছরের আগস্টে আসামের চূ'ড়ান্ত জাতীয় নাগরিক তালিকা প্রকাশ হয়। এই তালিকা থেকে সেখানকার প্রায় ১৯ লাখ মানুষ ভারতীয় নাগরিকত্ব হা'রান। এই ১৯ লাখ মানুষ তখন থেকেই তাদের নাগরিকত্বের প্রমাণ দেয়ার চেষ্টা করে আসছেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে জানায়, আসামে অ'বৈধ অ'নুপ্র'বেশকারীদের চি'হ্নিত করতে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) বাস্তবায়নের সময় নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে জমি এবং ব্যাংকের কাগজপত্রের নথি গ্রহণ করে ভারত সরকার।

তবে দেশটির আদালত বলেছেন, ভোটার আইডি কার্ড, জমির রাজস্বের রসিদ, ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং স্থায়ী অ্যাকাউন্ট নম্বর (প্যান) কার্ডের কোনোটিই নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। কয়েক দশক ধ'রে ভারতে বসবাস করে এলেও গত বছরের আগস্টে এনআরসির পর বিদেশি ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এক নারী আবেদন করলে আসামের গুয়াহাটি হাইকোর্ট তার এ আবেদন না'কচ করে দেয়।

আসামে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) তৈরির পর অসংখ্য মানুষ নাগরিকত্ব প্রমাণে ব্য'র্থ হওয়ায় তাদের ‘ডি'টেন'শন’ক্যা'ম্পে ব'ন্দি রাখা হয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে।

ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে ভারতের আসামেই রয়েছে ছয়টি ব'ন্দি'শি'বির। জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) ঘিরে আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে অনেককে বন্দি রাখা হয় ওই সব শি'বি'রে।

গণমাধ্যমের খবরে আরও বলা হয়, আসাম রাজ্যে দেশটির সবচেয়ে বড় ব'ন্দিশি'বির নির্মাণের কাজ চলছে। আসামের রাজধানী গুয়াহাটি থেকে ১২৯ কিলোমিটার দূরে গোয়ালপাড়ার মাতিয়ায় ২৫ বিঘা জমির ওপর নির্মিত হচ্ছে এই ডি'টে'নশ'ন ক্যাম্প বা ব'ন্দি'শি'বির। ২৫ বিঘা জমির ওপর নির্মাণাধীন দেশটির সবচেয়ে বড় ব'ন্দিশি'বি'রের প্রাথমিক ব্যয় ধ'রা হয়েছে ৪৬ কোটি রুপি। ন্দি'শিবি'রের চারদিকে তোলা হয়েছে ২০ থেকে ২২ ফুট উঁচু দেয়াল।

আসাম সরকারের সূত্র উল্লেখ করে সংবাদমাধ্যম জানায়, আরও ১০টি ব'ন্দিশি'বির তৈরি করা হবে আসামে। ২০০৯ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে আসামে ছয়টি ব'ন্দি'শি'বির তৈরি হয়। তবে ব'ন্দিশি'বিরের বিষয়টি সবসময়ই অ'স্বী'কার করে আসছে ভারত সরকার।-জাগো নিউজ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে