ক্রমশ আধিপত্যে চীনকে চাপে রাখছে ভারত
নিউজ ডেস্ক : বিতর্কিত সীমান্তে আধিপত্য ধরে রাখতে শক্তি প্রদর্শনই সবচেয়ে বড় ভরসা৷ আর সেই তত্ত্বে ভর করেই ভারতের অরুণাচল প্রদেশে চীন সীমান্তে ক্রমশ নজরদারি বাড়াচ্ছে ভারতীয় সেনা৷
সীমান্তে নজরদারির আগে ভারতীয় জওয়ানদের কার্যত হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন ভারতীয় সেনা মেজর, ''আগামী পাঁচদিন কারও সঙ্গে তোমাদের যোগাযোগ থাকবে না৷" পাহাড়ের খাঁজে তার সামনে তখন বসে ১২ জন জওয়ানের দল৷ সকাল থেকে বরফ পড়তে শুরু করেছে৷ ক্রমশ সাদা হয়ে উঠছে পাহাড়ের বাদামি ঢালগুলি৷ মেজর বলে চলেছেন, "প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর চীন সেনার উপর কড়া নজর রাখবে৷ ওদের প্রতিটি পদক্ষেপের নোট নেবে৷ কোনও নতুন জায়গায় ঘাঁটি তৈরি করলে সঙ্গে সঙ্গে রিপোর্ট করবে৷"
আবহাওয়া যতই খারাপ হোক না কেন, প্রায় ৯০০ কিমি দীর্ঘ ম্যাকমোহন লাইন বরাবর ভারতীয় জওয়ানদের পায়ে হেঁটে পাহারা দেওয়ায় বিরাম নেই৷ ভারত-চীন সীমান্ত চিহিত করতে ১৯১৪ সালে ব্রিটিশ বিদেশসচিব হেনরি ম্যাকমোহন যা তৈরি করেছিলেন৷ আজ সেটাই অলিখিত সীমান্তরেখায় পরিণত হয়েছে৷ অবশ্য এমন অনেক জায়গা রয়েছে, যা নিজেদের বলে দাবি করে উভয় পক্ষই৷ যার পরিণতিতে ইতিমধ্যে একটি যুদ্ধও হয়ে গিয়েছে৷ ছোটখাটো সংঘর্ষ, বিবাদও লেগেই থাকে৷ ১৪ হাজার ফিট উঁচু পাহাড়ি এলাকায় কার্যত প্রতিদিন চলে ইঁদুর-বিড়াল খেলা৷ ভারতীয় সেনার এক শীর্ষ কর্মকর্তার মতে, "চীনা সেনাকে আমাদের উপস্থিতি জানান দেওয়াটাও জরুরি৷ ওরা বুঝুক যে, ওদের প্রতিটি পদক্ষেপ আমরা নজরে রাখছি৷"
অতীতে শুধু তাওয়াং জেলা নয়, গোটা অরুণাচল প্রদেশকেই নিজেদের বলে দাবি করে চীন৷ এখনও সেই অবস্থান থেকে তারা পুরোটা সরেনি৷ তাই পাহাড়ি এলাকার প্রতিটি উপত্যকায়, গিরিপথে পায়ে হেঁটে, ছাউনি গড়ে নিজেদের এলাকায় আধিপত্য প্রমাণে ব্যস্ত ভারতীয় সেনা৷ জবাবে চিন সীমান্তে নিজেদের শক্তিও বাড়িয়েছে পিপলস লিবারেশন আর্মি৷
এক সেনা কমান্ডার বলেছেন, "যেখানেই ওরা সীমানা অতিক্রম করার চেষ্টা করবে, সেখানেই দেখবে সামনে আমাদের জওয়ানরাও রয়েছে৷ ওদের বুঝিয়ে দিতে হবে, আমাদের সীমানা রক্ষা করতে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ৷" যার ফলে পাহাড়ি এলাকায় পায়ে হেঁটে, শৃঙ্গে চড়ে গড়ে প্রায় ২৫ কিমি অতিক্রম করে প্রত্যেক জওয়ান৷ কয়েক বছর ধরে সীমান্তে কর্মরত ভারতীয় জওয়ানদের চীনা ভাষাও শেখানো হচ্ছে৷
২০১৩ সালে ভারত ও চিন 'বর্ডার ডিফেন্স কো-অপারেশন' চুক্তি সই করার পর অবশ্য পরিস্হিতি কিছুটা পাল্টেছে৷ দু'পক্ষই এখন নিয়মিত বৈঠক করে৷ বিতর্কিত সীমান্ত এলাকা নিয়ে আলোচনা করে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করে৷ কিন্ত্ত তাওয়াং ও অরুণাচল প্রদেশের পশ্চিমাঞ্চল রক্ষার দায়িত্বে থাকা ফোর কর্পস-এর সদর দফতর তেজপুরে সকলেই নিশ্চিত, সীমান্তে ভারত যত পরিকাঠামো তৈরি করবে, আর্থিক উন্নয়ন করবে, ততই আগ্রাসী হয়ে উঠবে চীনা সেনাবাহিনী৷
২৮ ডিসেম্বর,২০১৫/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস
�