রবিবার, ১৫ মার্চ, ২০২০, ০৭:০৬:৫৩

মুখে মাস্ক পরে কালশিটে দাগ, চোখে ক্লান্তি; তবুও থেমে নেই লড়াই

মুখে মাস্ক পরে কালশিটে দাগ, চোখে ক্লান্তি; তবুও থেমে নেই লড়াই

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : করোনার ছো'বলে এখন সবচেয়ে খা'রাপ অবস্থা ইতালির। চীনের চেয়েও ভ'য়াব'হ অবস্থা সেখানে। শহরগুলো পরিণত হয়েছে ভুতুড়ে নগরীতে। গৃহব'ন্দী হয়ে পড়েছে দেশটির সাড়ে ৬ কোটিরও বেশি মানুষ। হাসপাতালগুলো উ'পচে পড়ছে করোনা রোগীতে। ডাক্তার-নার্সসহ দেশটির চিকিৎসা পেশায় কর্মরত মানুষেরা জীবনের ঝুঁ'কি নিয়ে রাতদিন সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। 

আক্রা'ন্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে চলায় হিম'শিম খাচ্ছেন তারা। দিন কয়েক আগেই ঝকঝকে একটি ছবি পোস্ট মিলানের একটি হাসপাতালের সুন্দরী নার্স অ্যালেসিয়া বোনারি। কোথাও হয়তো ঘুরতে গেছিলেন, খাচ্ছিলেন পছন্দের কোনও খাবার। চোখে-মুখে অদ্ভুত এক ঝকঝকে, শান্ত মাধুর্য। ইনস্টাগ্রামে নিজে সেই ছবিটি পোস্ট করে অসংখ্য প্রতিক্রিয়াও পেয়েছিলেন তরুণী নার্স। কে জানত, মাত্র কয়েক দিনেই আমূল বদলে যাবে তার জীবন! এতটাই সে বদল, যা কালশিটের মতো দ'গদ'গে ছাপ এঁকেছে অ্যালেসিয়ার মুখের সুন্দর চামড়ার উপরেও!

গত কয়েক সপ্তাহে মারণ করোনা ভাই'রাসের প্রকো'পে তো'লপা'ড় হয়ে গিয়েছে ইতালি। মাত্র কয়েক দিনে মৃ'তের সংখ্যা ছুঁয়েছে প্রায় ১৩০০। আক্রা'ন্ত প্রায় ২০ হাজার। হঠাৎ এমন পরি'স্থিতি তৈরি হওয়ায় রীতিমতো দিশে'হারা সে দেশের চিকিৎসক ও নার্সরা। রাতারাতি ২৪ ঘণ্টার জন্য মোতায়েন হয়ে গেছেন তারা হাসপাতালগুলিতে। হু হু করে রোগী আসছে, পরীক্ষা করে ধ'রা পড়ছে করোনা ভাই'রাস পজ়িটিভ। চিকিৎসা সেবা দিতে দিতে হাঁফ ফেলার সময়ও নেই তাদের। সেই সঙ্গে নিজেও সং'ক্রা'মিত হতে পারেন, এই মা'নসিক চা'প তো সর্বক্ষণ রয়েছেই।

আরও পড়ুন : 'আমার শরীর স্পর্শ করলেই বিষ খাব', বাসর রাতে স্বামীকে হু'মকি নববধূর

কয়েক দিন আগে কাজের ফাঁকে কয়েক মুহূর্তের জন্য ফেস মাস্কটা মুখ থেকে নামিয়ে একটি সেলফি তুলে ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেন অ্যালেসিয়া। মাস্ক পরে থেকে থেকে দাগ বসে গেছে মুখের চামড়ায়। চোখে অপরিসীম শ্রান্তি। ক্লান্ত চেহারায় ছাপ ফেলেছে একটানা পরিশ্রম। হবে না-ই বা কেন। করোনা ভাই'রাসের বি'রু'দ্ধে সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে লড়ছেন তারা। এই মুহূর্তে গোটা পৃথিবীর স্বাস্থ্য সেবায তাদের ভূমিকা ঈশ্বরসম। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানেন না, তাদের লড়া'ইটা ঠিক কতটা!

অ্যালেসিয়ার ছবিটি যেন সেই উত্তরই দিয়ে দিচ্ছে। ছবিটা বলছে, করোনা ভাইরাসের আক্র'মণে হওয়া কোভিড-১৯ মহামা'রির বি'রু'দ্ধে লড়তে লড়তে তারা শারীরিক ও মানসিক ভাবে বি'ধ্ব'স্ত। মন ভেঙে যাচ্ছে তাদের। তবু একটা বারের জন্যও নিজেকে বিশ্রাম দেওয়া যাচ্ছে না পেশাদারি দায়ব'দ্ধতার স্বার্থে। অ্যালেসিয়া ছবিটির সঙ্গে লেখেন, 'আমি একজন নার্স। আমি এই মুহূর্তে হেল্থ এমার্জেন্সির একজন সৈনিক। আমি ভ'য় পাচ্ছি। আমি আমার কাজে ভ'য় পাচ্ছি, কাজের বাইরে কোথাও যেতে ভ'য় পাচ্ছি।

আমি ভয় পাচ্ছি, হয়তো আমার মাস্কটা আমার মুখকে ভালভাবে ঢাকতে পারেনি, কিংবা হয়তো আমি নিজের অজান্তেই নিজেকে স্পর্শ করে ফেলব নিজের ময়লা গ্লাভস দিয়ে। হয়তো আমার চোখের লেন্সের ফাঁক দিয়ে কিছু ঢুকে গেল। আমি শুধু ভী'ত নই, আমি ভ'য়াব'হ ক্লা'ন্ত। টানা ছ'ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় আমি না পারি এক ফোটা পানি খেতে, না পারি টয়লেটে যেতে। আমি একা নই, আমার সমস্ত সহকর্মীরও এই অবস্থা। কিন্তু এতে আমরা কাজ থামাতে পারব না। 

কারণ দিনের শেষে আমি আমার পেশা নিয়ে গর্বিত। এই পোস্ট যদি কেউ পড়েন, আমি তাকে অনুরোধ করব, নিঃ'স্বা'র্থ ভাবে কোনও কিছু চেষ্টা করলে, দয়া করে হতা'শ হবেন না। আর এমনও হতে পারে, আমি নিজে করোনা ভাইরাসে অ'সু'স্থ হয়ে পড়লাম বা আমার কারণে অন্য কেউ সং'ক্রা'মিত হল। কিন্তু কী করব, আমি তো নিজেকে কোয়ারেন্টাইন করে রাখতে পারব না! আমায় তো কাজটা করতেই হবে। এই সবটুকুই আপনাদেরই জন্য।'

আরও পড়ুন : হু হু করে বাড়ছে মৃত্যু, করোনা মো'কাবিলায় ভারতের সাহায্য চাইছে ইরান

চীনের পরে ইতালিতেই করোনা ভাইরাসের ছো'বল সবচেয়ে গু'রুতর। মাত্র কয়েক সপ্তাহে যেন মৃ'ত্যুপুরীতে পরি'ণত হয়েছে দেশটি। করোনা ভাইরাসের সং'ক্র'মণে প্রতিদিন সেখানে আক্রা'ন্তের সংখ্যা গড়ে একশো জন করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এই পরিসংখ্যান চীনের থেকেও বেশি মা'রা'ত্মক পরি'স্থিতি তৈরি করতে চলেছে। এমনই দ্রু'ততায় করোনা ছড়াচ্ছে, যে সামাল দেওয়াই কার্যত অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই অবস্থায় অ্যালেসিয়ার এই পোস্টটি দ্রুত ভাই'রাল হয়ে যায় অনলাইনে। প্রশংসা, অভিনন্দন, কুর্নিশে ভরিয়ে দেন সকলে। একবাক্যে সতলেই স্বী'কার করেন, এই পরিস্থিতিতে চিকিৎসক, নার্স ও চিকিৎসাকর্মীরা যেন দেবদূতের মতোই কাজ করছেন ইতালিতে। নিজদের প্রাণ বি'পন্ন করছেন তারা। তাদের এই স্বার্থত্যাগ ছাড়া আরও কত খা'রাপ হতো পরি'স্থিতি, তা যেন কল্পনাও করা যায় না।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে