আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কে ছড়ালো করোনা ভাইরাস- যুক্তরাষ্ট্র, চীন না ব্রিটেন? আসলেই কি এটি জীবজ'ন্তুর দেহ থেকে মানুষের শরীরে ঢু'কেছে নাকি জীবা'ণু অ'স্ত্রের ল্যাবরেটরি থেকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে এটি ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে? সং'ক্র'মণ যত ছড়িয়ে পড়ছে, তার সাথে পাল্লা দিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে নানা ষ'ড়য'ন্ত্র তত্ত্ব।
শুধু যে সোশ্যাল মিডিয়াই এসব ষ'ড়য'ন্ত্র তত্ত্বে ছয়লাব তাই-ই নয়, কিছু দেশের মূলধারার কিছু কিছু মিডিয়াও এসব ত'ত্ত্ব প্রচার করছে। ষ'ড়য'ন্ত্র এসব ত'ত্ত্বগুলো আসছে প্রধানত যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন এবং ইরান থেকে। এসব দেশের সরকারগুলো সরাসরি এসবের পেছনে না থাকলেও, সরকারের সাথে সম্পর্কিত কিছু ব্যক্তির কথায় এবং মিডিয়ায় এগুলো স্থান পাচ্ছে। কে কাকে স'ন্দে'হ করছে?
চীন এবং ইরানের ভেতর থেকে স'ন্দে'হের তীর যুক্তরাষ্ট্রের দিকে। চীনের ভেতর সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষজন হর'দমসে লিখছে এবং শেয়ার করছে যে চীনকে শায়ে'স্তা করতে যুক্তরাষ্ট্র জী'বাণু অ'স্ত্র হিসাবে চীনে এই ভাই'রাস ছড়িয়ে দিয়ে গেছে। শুধু সোশ্যাল মিডিয়া নয়, একজন চীনা কূট'নীতিক তার টুইটার অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে সরাসরি ই'ঙ্গি'ত করেছেন, উহানে গত বছর অক্টোবর মাসে একটি ক্রী'ড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে আসা মার্কিন সেনাবাহিনীর একটি দল এই ভাইরাস ছড়িয়ে গেছে।
চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্রও ঝাও লিজিয়িান টুইটারে মার্চের ১১ তারিখে মার্কিন একটি কংগ্রেস কমিটির সামনে সেদেশের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের (সিডিসি) প্রধান রবার্ট রেডফিল্ডের একটি শুনানির ভিডিও ক্লি'প পোষ্ট করেছেন। ওই ফুটেজে রেডফিল্ড যুক্তরাষ্ট্রে কিছু ই'নফ্লুয়ে'ঞ্জাজনিত মৃ'ত্যুর ঘটনা সম্পর্কে বলছেন, পরীক্ষায় দেখা গেছে কোভিড-নাই'ন্টিনের কারণেই ঐ মৃ'ত্যু।
যদিও মি রেডফিল্ড বলেননি কখন ঐসব মৃত্যু হয়েছে, কিন্তু চীনা ঐ কূটনীতিক টুইটারে ঐ ভিডিও ক্লিপ পোস্ট করে সাথে লিখেছেন, "সিডিসি ধ'রা পড়ে গেছে। কখন প্রথম রোগীটি যুক্তরাষ্ট্রে মা'রা গিয়েছিল? কত মানুষ সং'ক্র'মিত হয়েছিল? কোন কোন হাসপাতালে? হতে পারে যেসব মার্কিন সেনা উহানে ঐ ভাইরাস এনেছিল তারাই... স্বচ্ছ হোন। মানুষকে সত্য জানান। যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ব্যাখ্যা চাই।"
ঝাওয়ের ঐ টুইট চীনা রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত টিভি সিসিটিভিতে প্রচার হয়। চীনের গ্লোবাল টাইমসেও তা ছাপা হয়। এছাড়াও, চীনের ভেতর থেকে একাধিক বিজ্ঞানী বলেই চলেছেন করোনা ভাইরাসের মহামা'রি চীনে শুরু হলেও, এই ভাইরাসের উৎপ'ত্তি চীনে হয়নি।
ইরানের অঙ্গুল আমেরিকার দিকে : চীনের পাশাপাশি ইরানের ভেতরেও ব্যা'পক মানুষের বিশ্বাস এই জীবা'ণু যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি। এমনকি ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডের কম্যা'ন্ডার মেজর জেনারেল হুসেইন সালামি সরাসারি বলেছেন, করোনা ভাইরাস যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি একটি জীবাণু অ'স্ত্র।
গত পাঁচই মার্চ সালামি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে চীনে এবং পরে ইরানের বি'রু'দ্ধে "জী'বাণু-অ'স্ত্রের সন্ত্রা'সী হা'মলা" চালিয়েছে। পরদিনই ইরানের জাতীয় নিরা'পত্তা কমিটির একজন প্রভা'বশালী সদস্য হেশমাতোল্লাহ ফাতালহাতপিশে মন্তব্য করেন, "ট্রাম্প এবং পম্পেও করোনা নিয়ে মি'থ্যা কথা বলছেন, এটা কোনো সাধারণ রোগ নয়, এটা ইরান এবং চীনের বি'রু'দ্ধে জীবাণু অ'স্ত্রের হা'মলা।"
রাশিয়ার ভূমিকা : রাশিয়ার ভেতর থেকে সোশ্যাল মিডিয়া ছাড়াও রাশিয়ার সরকারের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন মিডিয়ায় চীন এবং ইরানের এসব অ'ভিযো'গ-তত্ত্ব জো'রে-সোরে প্রচার করা হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ফাঁ'স হয়ে যাওয়া একটি গো'পন রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইইউ'এর একটি মনিটরিং দল মার্চের ১৬ তারিখ পর্যন্ত দু'মাসের এক অনুস'ন্ধানে ৮০টি প্রমাণ পেয়েছে যে ক্রে'মলিনের সাথে ঘনি'ষ্ঠ মিডিয়ায় করোনা ভাই'রাস নিয়ে নানা ধরণের অ'প্র'চার চালানো হচ্ছে।
রুশ বিভিন্ন মিডিয়ায় এই ভাইরাস ছড়ানোর জন্য ব্রিটেনকেও দা'য়ী করা হচ্ছে। সরকার সমর্থিত স্পু'টনিক রেডিওতে একটি অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়েছে যেখানে বলা হয়েছে, ব্রেক্সিটের পর বাজার খুলে দেওয়ার জন্য চীনকে বা'ধ্য করতে ব্রিটেন এই কা'ণ্ড ঘ'টিয়ে থাকতে পারে। রুশ একটি জনপ্রিয় টিভি টকশোতে (দি বিগ গেম) ইগর নিকুলিন নামে রুশ একজন মাইক্রো'বায়োলজি'স্ট বলেন, ব্রিটেন এই করোনা 'অ'স্ত্র' তৈরি করেছ।
তিনি বলেন, "(ব্রিটেনের) পোর্টান ডাউনে একটি গবেষ'ণাগারে বহুদিন ধরেই নানা জী'বাণু এবং রাসা'য়নিক অ'স্ত্র তৈরির কাজ চলছে।" তবে রুশ সরকার দাবি করেছে, এসব বক্তব্যের সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। অন্যদিকে, আমেরিকার ভেতরেও করোনা ভাইরাস নিয়ে নানা ষ'ড়য'ন্ত্র তত্ত্ব ছড়িয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্বয়ং ঘুরে ফিরে বলেই চলেছেন, করোনা ভাইরাস চীনের কাজ, তারাই দা'য়ী।
ট্রাম্পের সমর্থক হিসাবে পরিচিত অনেক ব্যক্তিই খোলাখুলি বলছেন, করোনা ভাইরাস চীনের তৈরি একটি জীবাণু অ'স্ত্র। ক্যালিফোর্নিয়া থেকে কংগ্রেসে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন এমন এক রিপাবলিকান রাজনীতিক জোয়ান রাইট টুইট করেছেন, "উহান ল্যাবরে'টরিতে এই করোনা ভাইরাস তৈরি করা হয়েছে, এবং ঐ গবেষণায় চীনাদের সহায়তা করেছেন বিল গেটস।"
স'মালো'চনার মুখে পরে তিনি ঐ টুইট ডিলিট করে দেন। তবে আমেরিকার ক'ট্ট'র ডানপ'ন্থী বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া সাইটে করোনা ভাইরাস নিয়ে ষ'ড়য'ন্ত্র তত্ত্বের কোনো শেষ নেই। পরি'স্থি'তি দেখে উ'দ্বি'গ্ন একদল বিজ্ঞানী মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেটে একটি বিবৃতি দিয়েছেন যেখানে তারা বলেছেন, "জীবজ'ন্তুর শরীর থেকেই এই করোনা ভাইরাস ছড়িয়েছে। ষ'ড়য'ন্ত্র তত্ত্ব শুধুই ভ'য়, গু'জব এবং ঘৃ'ণা ছ'ড়াবে যাতে এই সং'কট মো'কাবে'লায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ব্যাহ'ত হবে।" সূত্র: বিবিসি বাংলা