শনিবার, ২৮ মার্চ, ২০২০, ০৬:৩৬:০৪

যে কারণে যুক্তরাষ্ট্রে ভ'য়াবহ রূপ করোনা ভাইরাস

যে কারণে যুক্তরাষ্ট্রে ভ'য়াবহ রূপ করোনা ভাইরাস

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : করোনা ভাইরাসে সবচেয়ে বেশি আক্রা'ন্তের দেশ এখন যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবার পর্যন্ত দেশটিতে আক্রা'ন্তের সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রই প্রথম দেশ যেখানে কোভিড-১৯ এ আক্রা'ন্ত রোগীর সংখ্যা ১ লাখ ৪ হাজার ২৫৬ জন। মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে হু হু করে। মা'রা গেছে ১ হাজার ৭০৪ জন। অথচ কয়েক সপ্তাহ আগেও দেশটিতে করেনার প্রাদু'র্ভাব খুবই কম লক্ষ করা যাচ্ছিলো। 

মার্কিন প্রকাশন, এমনকি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও করোনা ভাইরাসকে একেবারেই খাটো করে দেখছিলেন। থোড়াই কেয়ার করায় ভাইরাসটির থা'বায় এখন জেরবার যুক্তরাষ্ট্র। শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রে দ্যা সেন্টার্স ফর ডিজিস কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশ (সিডিসি)ও করোনা ভাইরাসকে যথযথো গুরুত্ব দেয়নি। এই ভাইরাস রু'খতে কী ধরণের পদক্ষেপ নেয়া হবে সে বিষয়ে স্থানীয় এজেন্সিগুলোকে দিক নির্দে'শনা দেয়ার ক্ষেত্রে লেজেগোবরে করে ফেলেছে তারা। 

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনভেস্টিগেটিভ সাংবাদিকদের সংগঠন প্রপাপলিকা কয়েকশ পৃষ্ঠার ডকুমেন্ট প্রকাশ করেছে। যেখানে উঠে এসেছে করোনা ভাইরাস নিয়ে দেশটির শীর্ষ পাবলিক হেল্থ এজেন্সি সিডিসির তাচ্ছিল্যের চিত্র; যা কিনা দেশটিতে মরণঘাতি ভাইরাসটি মো'কাবেলায় প্রস্তুতির গতি একেবারেই কমিয়ে দেয়। জানুয়ারি থেকে মার্চের শুরুর দিকে চীনে যখন করোনা ভাইরাস ভ'য়াব'হ রূপ নিয়েছে তখন যুক্তরাষ্ট্রে এটি নিয়ে কি ধরণের পদক্ষেপ নিয়েছে সেটি যাচাই করার চেষ্টা করে প্রপাপলিকা। 

আর এই কাজের জন্য তারা ফেডারেল এবং স্টেট পাবলিক হেল্থ অফিসগুলোর মধ্যে চালাচালি হওয়া বহু বার্তা জড়ো করেছে। ১৩ ফেব্রুয়ারি সিডিসি জ'রুরি সাহায্য চেয়ে একটি ইমেইল পাঠায়। তখনও এজেন্সিটিকে যুক্তরাষ্ট্রে করোনার সন্দে'হভা'জন রোগীদে নিয়ন্ত্রণে রাখতে রীতিমতো ল'ড়াই করতে হচ্ছিলো। এরমধ্যে একটি ই-মেইলে সিডিসি লিখেছে, ''জরুরি ভিত্তিতে সাহায্য দরকার''। 

ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে সিডিসির ইমেইল যখন প্রকাশ পায় তখন যুক্তরাষ্ট্রে করোনা ভাইরাস বেশ ভালোভাবেই জায়গা করে নিয়েছে। ততদিনে ১৫ জন আক্রা'ন্ত শনা'ক্ত হয়ে গেছে। এর দুই সপ্তাহ পর ওয়াশিংটনে করোনা রো'গী শনা'ক্তের সঙ্গে ক্যালিফোর্নিয়ায় দুইজন কমিউনিটি ট্রান্সফামিশনের দুজন রোগী ধ'রা পড়ে। প্রপাবলিকার প্রকাশিত ডকুমেন্টগুলোর অধিকাংশই ই-মেইল। এসব করোনার প্রাদু'র্ভাবের প্রথম দিকে যুক্তরাষ্ট্রের হযবরল চিত্র উঠে এসেছে। 

বিষয়টি নিয়ে তারা যে দ্বিধান্বিত ছিলো সেটি স্পষ্ট বুঝা যায়। তারা স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সঠিক দিক নির্দে'শনা দিতেও ব্য'র্থ হয়েছে। সিডিসি যখন স্থানীয় কর্মকর্তাদের কাছে মেইলটি পাঠায় ঠিক ওই সপ্তাহেই নাভাদার কর্মকর্তারা ৮০ জন করোনা রো'গীর ব্যাপারে সত'র্ক করেন যাদের মধ্যে ৪ জন স্থানীয় নাগরিক নন। করোনা সংক্রা'ন্ত তথ্য নিয়ে সিডিসি এবং স্থানীয় এজেন্সিগুলোর মধ্যে ভুল বুঝাবুঝির ঘটনাও ঘটেছে অসংখ্যবার। 

প্রপাপলিকা প্রকাশিত ডকুমেন্টে দেখা গেছে, ৪ মার্চ নাভাদার হেল্থ ডিপার্টমেন্টের প্রোগ্রাম ম্যানেজার সিডিসির কাছে কভিড-১৯ এর জন্য ফান্ডের আবেদন করেন। এসময় সিডিসির পক্ষ থেকে লেখা হয়, ''দুঃখজনক যে, আপনার জন্য কোনো পরিস্কার জবাব নেই। সিডিসির কর্মকর্তা ক্ষমা চেয়ে বলেন, আমরা এমন অনেক গু'জবও শুনতে পাচ্ছি।'' এরপর নাভাদার কর্মকর্তা জবাবে ক্ষু'ব্ধ হয়ে বলেন, ''আপনাকে ধন্যবাদ, আমাদের দুজনেরই বিভ্রা'ন্তির মধ্যে থাকাই ভালো।'' এমন ঘোলাটে পরি'স্থিতির মধ্যে সিডিসি প্রধান ড. রবার্ট রেডফিল্ড অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। 

এমনটাই উঠে এসেছে প্রপাপলিকার ডকুমেন্টে। ২৮ জানুয়ারি যখন সিডিসি যখন পাঁচজন করোনা রোগী শনা'ক্ত করেছে তখন তিনি স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীদের কাছে পাঠানো মেইলে তিনি গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁ'কির বিষয়টি স্বী'কার করেন। তবে তিনি আশ্বস্ত করেন যে, এই ভাইরাস যুক্তরাষ্ট্রে এই মুহূর্তে ছড়াবে না এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ নাগরিকদের জন্য এটির ঝুঁ'কি অত্যন্ত কম। অথচ সেই যুক্তরাষ্ট্রই এখন করোনার প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। গতকাল ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে ৪০১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রা'ন্ত হয়েছে ১৮ হাজার ৬৯১ জন।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে