বৃহস্পতিবার, ০৯ এপ্রিল, ২০২০, ১০:৩১:১৩

'মরতে মরতে বেঁচে ফিরেছি', জানালেন করোনা জয়ী তরুণী

'মরতে মরতে বেঁচে ফিরেছি', জানালেন করোনা জয়ী তরুণী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকলে অনেক সময় খাওয়ার কথা মনে থাকে না। কিন্তু শ্বাস নেওয়ার কথা কি কাউকে কখনও মনে করিয়ে দিতে হয়? আর পাঁচটা মানুষ এই সম'স্যায় না পড়লেও, মনে করে শ্বাস নেওয়াই এখন রোজকার কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে সদ্য করোনা থেকে সুস্থ হওয়া রিয়া লাখানির।

ভারতীয় বংশোদ্ভূত রিয়া লন্ডনের বাসিন্দা। সম্প্রতি নোভেল করোনায় আক্রা'ন্ত হন তিনি। শেষমেশ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন যদিও, কিন্তু এখনও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি। বাড়িতে বসে বিবিসি-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেই লড়াইয়ের কথা তুলে ধরেছেন তিনি। রিয়ার কথায়, ''নিশ্বা'স-প্রশ্বা'স একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু আজকাল এই কাজটাই মনে করে করতে হচ্ছে আমাকে।''

সাত বছর আগে একাট রো'গ ধ'রা পড়ে রিয়ার, চিকিৎসার ভাষায় যাকে বলে আকালেসিয়া। এই রোগে খাবার খাবার গিলতে সম'স্যা হয় রোগীর। তাই শ'ক্ত খাবার এড়িয়েই চলতেন তিনি। সম্প্রতি অ'স্ত্রো'পচারের কথা ছিল তার। সেই মতো হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানেই কোভিড-১৯ ভাইরাসে সং'ক্র'মিত হন তিনি।

রিয়া জানিয়েছেন, হাসপাতালে প্রথমে শ্বা'সক'ষ্ট শুরু হয় তার। তার পর গায়ে জ্বর আসে। অ'স্ত্রো'পচারের সাইড এফেক্ট ভেবে প্রথমে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে চাননি তিনি এবং চিকিৎসকদের কেউই। কিন্তু চারিদিকে করোনার প্রকো'পের কথা মাথায় রেখে তার লালারসের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। তাতেই তার শরীরে কোভিড-১৯ ভাইরাসের উপস্থিতি ধ'রা পড়ে।

হাসপাতালে রিয়ার অবস্থার অ'বন'তি হলে লন্ডনে একটি কোভিড-১৯ সেন্টারে স্থানা'ন্তরিত করা হয় রিয়াকে। সেখানে চিকিৎসকদের চোখেমুখে তাকে নিয়ে উদ্বেগ স্পষ্ট ধ'রা পড়ে বলে জানিয়েছেন তিনি। তার কথায়, ''পরি'স্থিতি এতটাই খা'রাপ হয়ে দাঁড়ায় যে, শ্বাস নেওয়া পাহাড় চড়ার মতোই ক'ঠিন হয়ে দাঁড়ায়। আমাকে নিয়ে সকলেই দু'শ্চি'ন্তায় ছিলেন। ডাক্তাররা নিচু স্বরে নিজেদের মধ্যে কথা বলতে শুরু করেন।''

একটা সময় বেঁচে ফেরার আশাও ছেড়ে দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন রিয়া। তিনি বলেন, ''মরতেই বসেছিলাম আমি। ওখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারব ভাবিনি। আর দেখা হবে কি না হবে, তার জন্য পরিবারের লোকেদের জন্য শেষ চিঠি লেখাও শুরু করে দিয়েছিলাম। মরতে মরতে বেঁচে ফিরেছি। কিন্তু স্বাভাবিক জীবনে ফিরব কী করে, তা এখনও জানি না।''

অক্সিজেন জোগানোর পাশাপাশি য'ন্ত্র'ণা কম করতে হাসাপাতালে তাকে মরফিনও দেওয়া হত বলে জানিয়েছেন রিয়া। তার জেরে কথা বলতেও কষ্ট হত বলে জানিয়েছেন তিনি। শেষমেশ বাড়ি যদিও ফিরতে পেরেছেন, কিন্তু বাড়িতে এখনও একঘরেই রয়েছেন রিয়া। স্বামী, মা-বাবা, বন্ধুবান্ধব কারও সঙ্গেই সাক্ষাতের অনুমতি নেই তার।

তবে করোনা তাকে অনেক কিছু শিখিয়ে গেল বলে জানিয়েছেন রিয়া। তিনি বলেন, ''একটা সময় এমন এসেছিল, যখন ফের দিনের আলো দেখতে পাব কি না জানতাম না। সবকিছুই অনি'শ্চিত হয়ে পড়েছিল। তখনই পরিবারের অভাবটা আরও বেশি করে বুঝতে পারছিলাম। যে মুহূর্তে হাসপাতাল ছেড়ে বেরোলাম, সে যে কী অনুভূতি বলে বোঝাতে পারব না। তবে একটা কথা নি'শ্চিত করে বলতে পারি, জীবনে আর কখনও কোনওকিছুকেই আর বাঁধাধ'রা বলে ধরে নেব না।'' সূত্র : বিবিসি ও এনডিটিভি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে