শনিবার, ৩০ মে, ২০২০, ০৭:৩৬:২১

যে কারণে ভারতের ওপর এতো বেশি আ'ক্রমণা'ত্মক হয়ে পড়ছে চীন

যে কারণে ভারতের ওপর এতো বেশি আ'ক্রমণা'ত্মক হয়ে পড়ছে চীন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং যখন গত সপ্তাহে চীনা সেনাবাহিনীকে ''সার্বভৌমত্ব র'ক্ষায় যু'দ্ধের জন্য তৈরি থাকার'' পরামর্শ দেন তাকে অধিকাংশ পর্যবেক্ষক ব্যাখ্যা করেছেন সীমান্তে নতুন করে শুরু হওয়া স'ঙ্ক'টে ভারতের প্রতি চীনের প্র'চ্ছন্ন একটি হু'মকি হিসাবে। 

কারণ চীনা কম্যুনিস্ট পার্টির মুখপাত্র দি গ্লোবাল টাইমসেও গত কয়েকদিনে ভারতকে লক্ষ্য করে একই ধ'রণের আ'ক্রম'ণা'ত্মক লেখালেখি হচ্ছে। চীন এবং ভারতের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে বিরো'ধ নতুন কোনো বিষয় নয়, কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এখন হঠাৎ করে এই করোনা ভাইরাস প্যানডেমিকের ভেতর এই স'ঙ্ক'ট শুরু হলো কেন? পশ্চিমা এবং ভারতীয় অনেক বিশ্লেষক লিখছেন, বিশ্বে নিজেদের প্রভাব বলয় বিস্তারের চেষ্টা চীন বেশ কিছুদিন ধ'রে করে চলেছে, এবং করোনা প্যানডেমিকে সারা বিশ্ব যখন ব্যতিব্যস্ত, তখন বেইজিং এটাকে একটা লক্ষ্য হাসিলের সুযোগ হিসাবে ব্যবহার করছে। 

শুধু সীমান্তে চা'প তৈরি নয়, হংকংয়ে সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠায় আরো ক'ঠো'র পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে চীন। এসব পর্যবেক্ষক বলছেন, ২০০৮ সালের বিশ্ব অর্থনৈতিক ম'ন্দার পরও স'ঙ্ক'টে পড়া দেশগুলোকে ঋণ-সাহায্য দিয়ে অনেকটা একইভাবে বেইজিং তাদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছে।

লাদাখে অবকোঠামো নিয়ে উ'দ্বি'গ্ন চীন : তবে অনেক বিশ্লেষক বলছেন, লাদাখ সীমান্তের গালোয়ান উপত্যকায় গত কয়েকবছর ধরে ভারত যেভাবে রাস্তাঘাট সহ অবকাঠামো তৈরি করছে তাতে চীন সত্যিই উ'দ্বিগ্ন হয়ে পড়ছে, এবং ভারতের এই কর্মকাণ্ড তারা আর মেনে নিতে রাজি নয়। কুয়ালালামপুরে মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব চায়নার অধ্যাপক সৈয়দ মাহমুদ আলী বলছেন, চীন ও ভারতের সীমান্ত রেখা নিয়ে অ'স্প'ষ্টতা এবং বিরো'ধ ঐতিহাসিক, ''কিন্তু গত দশ-বারো বছরে সীমান্তের পাহাড়ি এলাকায় ভবিষ্যতে সম্ভাব্য যু'দ্ধের প্রস্তুতি হিসাবে ভারত যেভাবে ব্যা'পক হারে অবকাঠামো নির্মাণ করে চলেছে তাতে চীন বেশ কিছুদিন ধ'রে উ'দ্বিগ্ন।''

তিনি বলেন, ভারতে ক'ট্ট'র জাতীয়তাবা'দী একটি সরকারের ক্ষমতা-গ্রহণ এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তাদের সামরিক এবং রাজনৈতিক নৈকট্যে বেইজিংয়ের উদ্বে'গ দিন দিন আরো বাড়ছে। হংকং ভিত্তিক এশিয়া টাইমসে তার এক লেখায় সুইডিশ বিশ্লেষক বার্টিল লিনটার বলছেন, লাদাখে ভারতের সড়ক নির্মাণকে চীন একটি হু'মকি হিসাবে দেখতে শুরু করেছে। তিনি বলছেন, বিশেষ করে পশ্চিম জিনজিয়াং প্রদেশের কাসগর শহর থেকে তিব্বতের রাজধানী লাশা পর্যন্ত সামরিক কৌশলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যে মহাসড়ক চীন তৈরি করেছে তার নিয়'ন্ত্রণ নিয়ে চীনের মধ্যে উদ্বে'গ তৈরি হয়েছে।

এমনিতেই এই দুটো প্রত্যন্ত প্রদেশ এবং সেখানকার বাসিন্দাদের আনুগত্য নিয়ে চীন সবসময়েই উদ্বে'গে। উপরন্তু এই মহাসড়কটি আকসাই চীন নামে যে এলাকার মধ্য দিয়ে গেছে সেটিকে ভারত তাদের এলাকা বলে বিবেচনা করে। এলাকাটি ভারতীয় মানচিত্রের অংশ। সুতরাং, মি. লিনটার বলছেন, সেই অঞ্চলের কাছে ভারতের অবকাঠামো নির্মাণের তৎপরতা চীন মেনে নিতে পারছে না।

ভারতের সেনাবাহিনীকে চ'রম মূল্য দিতে হবে : চীনের গ্লোবাল টাইমসে গত কয়েকদিনে বেশ কিছু সম্পাদকীয় এবং উপ-সম্পাদকীয়তে ভারতের বি'রু'দ্ধে এমন সব ক'ড়া ক'ড়া ভাষা ব্যবহৃত হয়েছে যা সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যায়নি। ১৯শে মে প্রকাশিত সংখ্যায় তারা লাদাখের গালোয়ান উপত্যকায় ''অবৈধ প্রতিরক্ষা স্থাপনা'' তৈরির জন্য ভারতকে সরাসরি অভিযুক্ত করেছে।

লেখা হয়েছে, ''ভারত যদি উস'কানি অব্যাহত রাখে তাহলে তাদের সেনাবাহিনীকে চরম মূল্য দিতে হবে।'' ১৯৬২ সালে চীন-ভারত যু'দ্ধের প্রসঙ্গ টানছে গ্লোবাল টাইমস। ২৫মে মে এক সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে - ''যদিও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে চীনের সম্পর্কে উত্তে'জনা চলছে, তারপরও ১৯৬২ সালের যু'দ্ধের সময়কার তুলনায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চীনের অবস্থান এখন অনেক সুদৃঢ়। চীনের অর্থনীতি এখন ভারতের চেয়ে পাঁচগুণ বড়।'' চীনা কম্যুনিস্ট পার্টির মুখপাত্রে এ ধরণের কথাবার্তাকে অনেক বিশ্লেষক বিরল হু'মকি হিসাবে ব্যাখ্যা করছেন।

চীন-বিরো'ধী অক্ষশ'ক্তির অগ্রভাগে ভারত? চীন ও ভারতের মধ্যে তাদের ১৩০০ কিলোমিটার সীমান্ত নিয়ে বিরো'ধ নতুন কিছু নয়। আকসাই চীন অঞ্চলের ১৫০০০ বর্গমাইল এলাকাকে ভারত তাদের এলাকা বলে দাবি করে। অন্যদিকে ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্য অরুণাচলকে চীন তাদের এলাকা বলে মনে করে। ১৯৬২ সালে সীমান্ত নিয়ে দুদেশের মধ্যে যু'দ্ধ পর্যন্ত হয়েছে। ২০১৭ সালে ভুটানের সীমান্তে দোকলাম নামক একটি এলাকায় চীনের রাস্তা তৈরি নিয়ে চীন ও ভারতের সৈন্যরা ৭২দিন ধ'রে মুখো'মুখি দাঁড়িয়ে ছিল। যু'দ্ধ বেঁধে যাওয়ার আশ'ঙ্কা তৈরি হয়েছিল।

তবে অনেক বিশ্লেষক বলছেন, লাদাখে ভারতের রাস্তা নির্মাণ ছাড়াও ভারত চীনের জন্য অন্য মাথাব্য'থারও কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জোট বে'ধে চীনকে কো'ণঠা'সা করার যে চেষ্টা যুক্তরাষ্ট্র শুরু করেছে, ভারতকে সেই জোটের অংশ হিসাবে দেখছে চীন। ড. সৈয়দ মাহমুদ আলী, যিনি ভারত-চীন বৈ'রিতা নিয়ে গবেষণা-ধর্মী একটি বই লিখেছেন, বিবিসিকে বলেন, চীনের ক্র'মব'র্ধমান প্রভা'ব প্রতিপ'ত্তিকে বাগে আনার চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র গত এক দশকে যে একটি ''অক্ষশক্তি'' তৈরি করেছে, ভারত তার অগ্রভাগে।''

আমেরিকা মনে করে চীনকে শায়ে'স্তা করার ক্ষেত্রে যে দেশটি তাদের সবচেয়ে বেশি সাহায্য করতে পারে সেটি হলো ভারত। এজন্য গত দশ বছরের তারা ভারতের কাছে ২০০ কোটি ডলারের মত অত্যাধুনিক সমরা'স্ত্র বিক্রি করেছে।'' গ্লোবাল টাইমস সম্প্রতি তাদের বিভিন্ন লেখায় এমন কিছু মন্তব্য এবং তুলনা টেনেছে যাতে বোঝা যায় যে ভারতকে চীন এখন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে চীন বিরো'ধী একটি অক্ষের অংশ হিসাবে মনে করছে।

২৫ মে চীনা একজন বিশ্লেষক লং শিং চুং এক উপ-সম্পাদকীয়তে লেখেন, ''ভারত সরকার যেন তাদের দেশকে যুক্তরাষ্ট্রের কামানোর গোলা হিসাবে ব্যবহৃত না হতে দেন। যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপার দুই দেশকেই সত'র্ক থাকবে হবে, কারণ যে কোনো সুযোগেই শান্তি এবং স্থিতিশীলতা ন'ষ্ট করা যুক্তরাষ্ট্রের স্বভাব।''

ভেঙ্গে পড়ছে সম্পর্কের স্থিতি : ১৯৮৮ সালে চীন এবং ভারতের মধ্যে এক ধ'রনের বোঝাপড়া হয় যে তারা সীমান্ত নিয়ে কোনো বিরো'ধে জড়াবে না, যাতে দুটো দেশই অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে মনোনিবেশ করতে পারে। কিন্তু গত ৩২ বছরে পরি'স্থিতি আমূল ব'দলে গেছে। ১৯৮৮ তে ভারত ও চীনের অর্থনীতি ছিল প্রায় একই মাপের। একই পরিমাণ অর্থ তারা প্রতির'ক্ষায় খরচ করতো।

কিন্তু এখন চীনের অর্থনীতি ভারতের পাঁচগুণ বড়। প্রতির'ক্ষায় ভারতের চেয়ে চারগুণ বেশি খরচ করছে চীন। ''সম্পর্কের হিসাব বদলে গেছে, ''যুক্তরাষ্ট্রে প্রতির'ক্ষা এবং কূটনীতি বিষয়ক সাময়িকী ফরেন পলিসিতে লিখেছেন সুমিত ব্যানার্জি। চীন ভারতের প্রধাণ বাণিজ্যিক সহযোগী, যদিও চীনের রপ্তানির চেয়ে অনেক বেশি আমদানি করে ভারত। গতবছর বাণিজ্য ঘা'টতির পরিমাণ ছিল ৫৩০০ কোটি ডলার।

বাণিজ্য কী সং'ঘা'ত ঠেকাতে সাহায্য করবে? ড. মাহমুদ আলী মনে করেন, বিশাল এই ঘাটতির কারণেই ভারতের মধ্যে এখন চীনের সাথে বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়েও আর তেমন আগ্রহ নেই। ''বরঞ্চ ভারত এখন খোলাখুলি বলছে, চীন থেকে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা এলে ভারত সবরকম সাহায্য দেবে।''

ড. আলী মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে যে বৃহত্তর কৌশলগত বিরো'ধ - যেটাকে নতুন এক শীতল যু'দ্ধের সাথে তুলনা করা হচ্ছে- চলছে তার ভেতর ভারত ঢুকে পড়েছে। যেটা, তার মতে, পারমাণবিক অ'স্ত্রধ'র দুই প্রতিবেশির মধ্যে সীমান্ত স'ঙ্ক'ট মো'কাবেলার পথকে দিনকে দিন ক'ঠিন এবং বি'পদসং'কুল করে ফেলছে। সূত্র : বিবিসি বাংলা।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে