বুধবার, ০৩ জুন, ২০২০, ০৭:১৭:০৫

পাকিস্তানি প্রেমিকার সাথে দেখা করতে গিয়ে বাংলাদেশি যুবক আটক

পাকিস্তানি প্রেমিকার সাথে দেখা করতে গিয়ে বাংলাদেশি যুবক আটক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কথায় আছে ভালবাসা কোনো সীমানা মানে না। তাই তো পাকিস্তানি প্রেমিকাকে কাছে পেতে অবৈ'ধভাবে ভারতে প্রবেশ করতেও একবারও ভাবেননি নয়ন মিঁয়া ওরফে আবদুল্লা (২৬) নামে বাংলাদেশি এক যুবক। 

করোনা ভাইরাস ও লকডাউনের বা'ধা তুচ্ছ করেই কলকাতা থেকে প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার দূরে পাঞ্জাবের অমৃতসর পর্যন্ত পৌঁছে যান তিনি। কিন্তু ফেসবুকে আলাপ হওয়া করাচির সেই প্রেমিকার কাছে পৌঁছনোর আগেই ভারত-পাকিস্তান আন্তর্জাতিক সীমান্তের কাছে আত্তারিতে বিএসএফের কাছে আ'টক হন ঢাকার বাসিন্দা আবদুল্লা। অতঃপর প্রেমিকার সঙ্গে আনন্দ করার পরিবর্তে কারাগারের চার দেয়ালে কা'টাতে হচ্ছে তাকে। 

বিএসএফ'র এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, পাকিস্তান সীমান্তের কাছে উদ্দেশ্যহী'নভাবে বিভ্রা'ন্তের মতো আবদুল্লাকে ঘুরতে দেখে বিএসএফ সদস্যদের সন্দে'হ হয়। এরপরই তাকে আ'টক করা হয় এবং শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ। তার কাছে বাংলাদেশি সিমসহ একটি মোবাইল ফোন এবং কিছু বাংলাদেশি টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। 

বিএসএফ'র জিজ্ঞাসাবাদে আবদুল্লা জানায়, তিনি বাংলাদেশের শরিয়তপুরের বাসিন্দা। করাচির বাসিন্দা ওই প্রেমিকা তার আত্মীয় এবং তাকে বিয়ে করার জন্যই সেই সব বা'ধা অতি'ক্রম করেই পাসপোর্ট ও ভিসা ছাড়াই তিনি পাকিস্তান সীমান্তের কাছে পৌঁছে যায়। 

জিজ্ঞাসাবাদে আবদুল্লা আরও জানান, একটা সময় দুই পরিবারই একে অপরকে জানতো। তাদের পরিবারের সাথে এক সময় সুসম্পর্ক ছিল ওই পাকিস্তানি তরুণীর পরিবারের। কিন্তু ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর আবদুল্লার গোটা পরিবার বাংলাদেশ চলে আসার পর থেকে দুই পরিবারের সম্পর্কে ছে'দ ঘটে। পরবর্তীতে সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে ওই পাকিস্তানি তরুণীর সাথে নতুন করে পরিচয় শুরু হয় আবদুল্লার। কার্যত সেই সময় থেকে একে অপরের প্রতি ভালবাসা জন্মায় তাদের। 

ভিডিও কলেই আবদুল্লা ওই পাক তরুণীকে বিয়ের প্রস্তাব দেন, তরুণীও সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেন। জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে প্রথমে সীমান্ত অতি'ক্রম করে কলকাতায় আসেন আবদুল্লা। সেখান থেকে আগ্রা, দিল্লি ঘুরে আসেন ভারতের পাঞ্জাবে। 

বিএসএফ'এর কাছে আবদুল্লা দাবি করেন, করাচি নিবাসী ওই তরুণী তার ভাতিজা এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তাদের যোগাযোগ হয়। ভিডিও কলের মাধ্যমে তারা নিয়মিত কথাও বলতেন। কিন্তু শেষ ১০-১৫ ধ'রে দিন কোনো যোগাযোগ না হওয়ায় তাকে হা'রানোর ভ'য় পান আবদুল্লা। তার মনে হয় ওই তরুণীর পরিবার বোধ হয় অন্য জায়গায় তার বিয়ে দিতে পারে। আর এই আশ'ঙ্কা থেকেই কোনো কিছুর তোয়া'ক্কা না করে পাকিস্তান সীমান্ত অতি'ক্রম করার ভাবনা আসে আবদুল্লার। 

বিএসএফ'এর এক কর্মকর্তা জানান, ''গত ৩১ মে আত্তারি-ওয়াঘা সীমান্ত বরাবর ওই যুবককে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। কাঁ'টাতারের বেড়া থাকায় যেহেতু তিনি সীমান্ত অতি'ক্রম করতে পারেননি, তাই সুযোগ খুঁ'জছিলেন। ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্ত বরাবর নদী পার হয়ে তিনি ভারতে প্রবেশ করেন। কলকাতায় পৌঁছোনোর পর কিছুটা পায়ে হেঁটে কিছুটা গাড়ি করে তিনি দিল্লি পৌঁছান। ঠিক সেভাবেই পাঞ্জাবের লুধিয়ানা, অমৃতসর আসেন।'' 

যেভাবেই হোক আবদুল্লা জানতে পারেন যে, লকডাউনে অমৃতসরে আ'টকে পড়া বহু পাকিস্তানি নাগরিকদের তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। আর সেই ওই সুযোগ নিতে চেয়েছিলেন তিনি। সেই অনুযায়ী পায়ে হেঁটেই অমৃতসর থেকে আত্তারি সীমান্তে পৌঁছে যান ওই বাংলাদেশি যুবক। হাঁটতে হাঁটতে পথেই ঘুমাতেন এবং রাস্তার ধা'রে অস্থায়ী ত্রাণ শিবির থেকেই খাবারও খেতেন তিনি।'' 

কিন্তু সীমান্তের কাছে পৌঁছনোর পরই তিনি জানতে পারেন যে, ওই সীমান্ত দিয়ে কোনো আ'টকে পড়া পাকিস্তানিকেই তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে না। এরপরই ফিল্মি কায়দায় সীমান্ত পেরোনোর চিন্তা করেন ওই বাংলাদেশি যুবক। কারণ সেসময় তার মাথায় ঘুরতে থাকে বলিউড অভিনেতা সানি দেওলের 'গদর' (এক প্রেম কাহিনী) ছবির কথা। তদ'ন্তকারী পুলিশকেও তিনি জানান তার পরিকল্পনা ছিল কাঁ'টাতারের বেড়ার নিচে হামাগুড়ি দিয়ে বা নদী সাঁতরে কিংবা কোনো দালালের হাত ধ'রে পাকিস্তানে পৌঁছে যাবেন আবদুল্লা। কিন্তু তার আগেই তার স্বপ্ন ভ'ঙ্গ হয়। 

ওই যুবককে আ'টক করে পরবর্তী জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইতোমধ্যেই ঘারিন্দা থানার পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। থানার কর্মকর্তা গগনদীপ সিং জানান, ''ওই বাংলাদেশি যুবকের বিরু'দ্ধে ভারতীয় দ'ণ্ডবিধির ফরেনারর্স আইন ও পাসপোর্ট আইনে মামলা দা'য়ের করা হয়েছে। আমরা বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ন'জরে এনেছি এবং বাংলাদেশে ওই যুবকের পরিবারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করছি।'' সূত্র : বিডি প্রতিদিন

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে