রবিবার, ০৭ জুন, ২০২০, ১২:০৮:৫০

দিল্লির শ্মশানে ২৪ ঘণ্টাই জ্বলছে চিতা-চুল্লি, তবুও মৃ'তদেহের স্তূপ!

দিল্লির শ্মশানে ২৪ ঘণ্টাই জ্বলছে চিতা-চুল্লি, তবুও মৃ'তদেহের স্তূপ!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সময়ের সাথে সাথে ভ'য়ঙ্কর হয়ে উঠছে ভারতের করোনা পরি'স্থিতি। এরই মধ্যে সং'ক্র'মণে মৃ'ত্যুপুরী ইতালিকে টপকে বিশ্বে ষষ্ঠ স্থানে উঠে এসেছে ভারত। এখন পর্যন্ত দেশটিতে আ'ক্রা'ন্তের সংখ্যা ২ লাখ ৩৬ হাজার ৯৫৪ জন। প্রাণহা'নীর সংখ্যা বেড়েছে বহুগুণে। 

অবস্থা এতটাই নাজুক যে, ২৪ ঘণ্টা জ্বলছে চিতা-চুল্লি, তবুও মৃ'তদেহের স্তূ'প জমেছে দিল্লির শ্মশানে! করোনা সং'ক্র'মিত দেহ কাঠের চিতায় তুললে ছড়াতে পারে সং'ক্র'মণ। সেই আশ'ঙ্কায় এত দিন শুধুমাত্র বৈদ্যুতিক চুল্লিতেই দেহ সৎকার চলছিল। তাতে কুলাতে না পেরে সম্প্রতি কাঠের চিতায় দেহ তোলার অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু তাতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে দিল্লির নিগম বোধ শ্মশান কর্তৃপক্ষকে। 

দিনভর চিতার আগুন ও ধোঁয়ায় চোখে জ্বা'লা ধ'রে গেলেও, সব দেহ সৎ'কার করে উঠতে পারছেন না শ্মশানকর্মীরা। জানুয়ারির শেষ থেকে এখন পর্যন্ত নভেল করোনার প্রকোপে ভারতে ৬ হাজার ৬৪৯ জন প্রাণ হা'রিয়েছেন। এর মধ্যে শুধুমাত্র দিল্লিতেই প্রাণ হা'রিয়েছেন ৭০৮ জন। তবে মৃ'ত্যুসংখ্যা বেড়ে চললেও, কভিড-১৯ ভাইরাসে আ'ক্রা'ন্ত হয়ে যাদের মৃত্যু হয়েছে, সব শ্মশানে তাদের দা'হ করা যাচ্ছে না। নিগম বোধ ছাড়া অন্য তিনটি শ্মশান এবং দু'টি কবরস্থানেই তাদের সৎকার করতে হচ্ছে।

তবে শহরের প্রাণকেন্দ্র লালকেল্লা সংলগ্ন এলাকাতেই যেহেতু অবস্থিত নিগম বোধ শ্মশান ঘাটটি, বিভিন্ন হাসপাতালের মর্গ থেকে সেখানেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মৃ'তদেহ এসে পৌঁছচ্ছে। এমন পরি'স্থিতিতে ২৪ ঘণ্টা শ্মশান খুলে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নিগম বোধ কর্তৃপক্ষ। ছ'টির মধ্যে তিনটি বৈদ্যুতিক চুল্লি টানা কাজ করছে সেখানে। গত সপ্তাহে কাঠের চিতাতেও করোনায় মৃ'তদের দাহ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতেও সব দেহ সৎকার করা সম্ভব হচ্ছে না।

শ্মশান পরিচালনা কমিটির সদস্য সুমন কুমার গুপ্ত জানান, ''মৃ'তদেহ নিয়ে শ্মশানে ঢোকার মুখে মৃ'তের পরিবারের সকলকে জীবাণুমুক্ত করার প্র'ক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। সামাজিক দূরত্ব মেনে শেষকৃত্য সম্পন্ন করতে অনেকটা সময়ও লেগে যায়। তার জন্য উ'দ্বে'গ নিয়েই ঘণ্টার পর ঘণ্টা শ্মশানে অপেক্ষা করতে হয় তাদের।' সুকুমার গুপ্তের কথায়, 'সকলেই চান চটজলদি সব কিছু মিটিয়ে ফেলতে। কিন্তু এই মুহূর্তে তিনটি মাত্র বৈদ্যুতিক চুল্লি কাজ করছে। তাই সময় লেগে যায়।''

হাসপাতাল ও ম'র্গগুলিতে মৃ'তের সংখ্যা বাড়তে থাকায়, কোনো কোনো সময় একটি অ্যাম্বুলেন্স চার-পাঁচটি দেহ নিয়ে শ্মশানে হাজির হয় বলেও জানান তিনি। সেই সময় পরি'স্থিতি সামাল দিতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় শ্মশান কর্মীদের। গত দু'মাসে নি'গম বোধ শ্মশানে পাঁচ শতাধিক দেহ দা'হ করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন সুকুমার গুপ্ত।

সংবাদ সংস্থা এএফপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এক অ্যাম্বুলেন্স কর্মী জানান, এমনও হয়েছে যে অ্যাম্বুলেন্সে একাধিক দে'হ নিয়ে শ্মশানে পৌঁছেছেন তিনি। কিন্তু ভিড় থাকায় সঙ্গে সঙ্গে দেহগুলো দা'হ করা যায়নি। এমন অবস্থায় হাসপাতালে দেহ ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়াও সম্ভব নয়। তাই রাতে মৃ'তদেহসহ অ্যাম্বুলেন্স শ্মশানে ফেলে রেখেই বাড়ি ফিরে যান তিনি। পর দিন সকালে ফের অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে যান হাসপাতালে।

নি'গ'ম বোধ শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লিতে দেহ ঢোকানো থেকে চিতাভ'ষ্ম বের করা, গোটা প্র'ক্রি'য়া সম্পন্ন হতে প্রায় দু'ঘণ্টা সময় লাগে বলে জানা গেছে। চিতায় সৎকার করলে, কাঠ বয়ে আনা, চিতা সাজানো মিলিয়ে সময় লাগে আরো বেশ খানিকটা। সে ক্ষেত্রে শ্মশানকর্মীরাই মৃ'তদেহে ঘি লাগানো, গলায় গাঁদা ফুলের মালা পরানোর কাজ সারেন। চিতায় সৎকারের সময় পরিবারের দু'চার জন সদস্যকেই কেবল সেখানে উপস্থিত থাকার অনুমতি দেওয়া হয়। 

তবে বৈদ্যুতিক চুল্লিতে মৃ'তদেহ দাহ করার সময়, মুখে মাস্ক পরে, কাচের দেওয়ালের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় মৃ'তের পরিবারের লোকজনকে। নিগম বোধ ঘাটে এক সঙ্গে চারটি চিতায় দেহ দা'হ করা যায়। প্রতিটি চিতা পিছু চার জন করে শ্মশানকর্মী নিয়োজিত থাকেন। সঞ্জয় শর্মা নামের এক শ্মশানকর্মী জানান, এই স'ঙ্ক'টের সময়ও মৃ'তদেহগুলোকে যাতে সম্মানের সঙ্গে দা'হ করা যায়, সেদিকে ন'জর রাখেন তারা। তবে আগামী দিনে পরি'স্থিতি আরো ভ'য়'ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে বলে আশ'ঙ্কা তার। সূত্র : আনন্দবাজার।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে