আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারত-চীন সীমান্তে ব্যাপক উ'ত্তেজনা। চীনের সেনাবাহিনীর ছোঁ'ড়া বুলেটের আঘা'তে এক কর্মকর্তাসহ তিন ভারতীয় সেনা নিহ'ত হয়েছে। এর আগে ৪৫ বছর আগে ভারত-চীন সীমান্তে গো'লাগু'লির ঘটনা ঘটেছিল। তবে সাড়ে চার দশক আগের সেই ঘটনার সঙ্গে সোমবার রাতে গলোয়ানের ঘটনার মিল সহজে নজরে আসবে না। কিন্তু মিল একটা রয়েছেই। সেদিনও ভারতীয় ভূখণ্ডে চীনা অনুপ্রবেশ প্রাণ দিয়ে রুখেছিলেন কয়েকজন অসম সাহসী ভারতীয় সেনা।
১৯৬২-র ভারত-চীন যু'দ্ধের পর ১৯৬৭ সালের প্রায় পাঁচ দিন ধ'রে চলা সিকিমের সীমান্ত সংঘ'র্য অনেক বেশি র'ক্তক্ষ'য়ী এবং আলোচিত ঘটনা ছিল। কিন্তু ভারত-চীন সীমান্ত সংঘ'র্ষের ইতিহাসে অরুণাচলের তুলুঙ-লা-র ঘটনাই সোমবার রাতের গলোয়ানের ঘটনার আগে শেষ সংঘ'র্য যেখানে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় প্রা'ণ হা'রিয়েছিলেন ভারতীয় জওয়ানরা।
মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর দুই দেশের মধ্যে উ'ত্তাপ বাড়ছিল। কিন্তু ১৯৭৫-এর ২০ অক্টোবর অরুণাচলে কোনো ধরনের উত্তাপের লেশমাত্র ছিল না। খুব রুটিন মেনেই সে দিন ভোর থেকে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা ধরে টহ'লদারিতে বেরিয়েছিলেন আসাম রাইফেলস-এর ২৫ ব্যাটালিয়নের সেনারা। ট'হলের রাস্তায় শেষ জনপদ তাওয়াঙ জেলার থিঙবু-র মাগো গ্রাম।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১ হাজার ২৪০ মিটার উচ্চতায় থাকা মাগো গ্রাম ছেড়ে ট'হলদারি দল এগিয়ে যায় আরো ওপরে। হিমালয়ের কোলে দুর্গম এবং প্রত্যন্ত গিরিবর্ত্ম তুলুঙ-লায়ের দিকে। ভারতীয় ভূখণ্ড রক্ষায় মাগোর মতোই কৌশলগত দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ৪ হাজার ৮৬৩ মিটার উঁচুতে থাকা ওই গিরিপথ।
প্রায় ১৫ দিন পরে সেনার একটি তার বার্তা প্রকাশ্যে আসে। জানা যায়, সে দিন তুলুঙ-লাতে পৌঁছনোর আগেই প্রায় ৫০০ মিটার দূরে চীনা বাহিনীর এলোপাথা'ড়ি গু'লি বৃষ্টির মু'খোমু'খি হয় ভারতীয় ট'হল বাহিনী। সকলের অলক্ষে ওই গিরিপথের একটি দুর্গম অংশ দিয়ে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে ভারতীয় ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশ করে চীনা বাহিনীর গোটা একটি প্লাটুন।
রাতারাতি পাথরের দেওয়াল খাড়া করে তার পিছন থেকে ভারতীয় ট'হল বাহিনী লক্ষ্য করে হাম'লা চালায় চীনা বাহিনী। ওই দিনের সংঘ'র্ষে মৃ'ত্যু হয় আসাম রাইফেলসের ৪ জন সদস্যের। কিন্তু ওই ট'হলদার বাহিনী চীনা অনুপ্রবেশকারীদের পিছু হ'টতে বাধ্য করে। যদিও সে দিন চীনা বাহিনী অবস্থানগত ভাবে অনেক সুবিধাজনক জায়গায় ছিল।
ভারত-চীনের মধ্যে সেই শেষ সংঘ'র্ষ যেখানে মৃ'ত্যু হয়েছিল ভারতীয় সেনার। তার পর থেকে গত ৪৫ বছরে আরো মজবুত করা হয়েছে ওই এলাকার সেনা অবস্থান। ভারত-তিব্বত সীমান্ত পুলিশ এবং সেনার যৌথ নজরদারি চলছে সর্বক্ষণ। কিন্তু সে দিনের অনুপ্রবেশের ঘটনা শুনিয়ে এখনো সতর্ক করা হয়, ওই এলাকায় কর্মরত সদস্যদের।
কারণ তুলুঙ লা থেকে আরও দক্ষিণে সে লা গিরিপথে নিজেদের অবস্থান হা'রিয়েই ১৯৬২ সালে চীনা বাহিনীকে ভারতীয় ভূখণ্ডে বিনা বাধায় ঢু'কে যাওয়ার রাস্তা করে দিয়েছিল ভারতীয় বাহিনীর ভুল সিদ্ধান্ত। সেই ঘটনার সাক্ষী এই মাগো। ওই গ্রামের উপর দিয়েই চীনের লাল ফৌজ ঢু'কে পড়েছিল অরুণাচল প্রদেশের অনেকটা ভিতরে। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা।