মঙ্গলবার, ২৩ জুন, ২০২০, ১২:০৫:১২

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে বড় দুঃসংবাদ দিলেন বিশেষজ্ঞরা

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে বড় দুঃসংবাদ দিলেন বিশেষজ্ঞরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : করোনা ভাইরাস মহামা'রি শেষ হতে আরো বহু সময় বাকি। কখন শেষ হবে সেটাও কেউ বলতে পারে না। কোনো কোনো দেশে এখনও প্রচুর সংখ্যক মানুষ এই ভাইরাসে আক্রা'ন্ত হচ্ছে। যেসব দেশ ভাইরাসটিকে ইতোমধ্যে নিয়'ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে, তাদের মধ্যেও সং'ক্র'মণ দ্বিতীয় দফায় ফিরে আসা নিয়ে ভী'তি রয়েছে।

একে বলা হচ্ছে সেকেন্ড ওয়েভ বা দ্বিতীয় ঢেউ। শতবর্ষ আগে স্প্যানিশ ফ্লু-ও দ্বিতীয় দফায় ফিরে এসেছিল এবং তাতে প্রথম দফার চেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। করোনা ভাইরাসের সেকেন্ড ওয়েভও কি অবশ্য’ম্ভাবী? এবং এরকম কিছু হলে সেটা কতোখানি মা'রা'ত্মক হতে পারে?

সেকেন্ড ওয়েভ কী : এটাকে সমুদ্রের ঢেউ এর সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। সামুদ্রিক ঢেউ যেমন উঠা নামা করে তেমনি করোনা ভাইরাসের সং'ক্র'মণও বাড়ে এবং তার পর আবার কমে আসে। এই উঠা নামা বা বাড়া কমার প্রত্যেকটা ধা'পকে বলা হয় ঢেউ বা ওয়েভ। এর কোনো আনু্ষ্ঠানিক সংজ্ঞা নেই। যুক্তরাজ্যে ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মাইক টিলডেসলি বলেন, ''এটা ঠিক বৈজ্ঞানিক কিছু নয়, ওয়েভ বলতে আপনি যা বোঝাবেন সেটা অনেকটাই আবেগ-নির্ভর।''

কেউ কেউ করোনা ভাইরাসের সং'ক্র'মণ বেড়ে যাওয়াকেই ওয়েভ বলেন। প্রথম ওয়েভেও কিন্তু কয়েকবার এই উঠা নামা হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের কিছু কিছু রাজ্যে সং'ক্র'মণ কমে গিয়ে আবারও বাড়ছে, আবার কমছে। প্রথম ঢেউটি তখনই সমাপ্ত হয়েছে বলা যাবে যখন ভাইরাসটিকে নিয়'ন্ত্রণে নিয়ে আসা যাবে। এক্ষেত্রে সং'ক্রমণের হার নাট'কীয়ভাবে কমে আসবে।

এর পরে সং'ক্র'মণ যখন উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় বৃদ্ধি পাবে তখনই সেটাকে দ্বিতীয় ঢেউ বা সেকেন্ড ওয়েভ বলা হবে। নিউজিল্যান্ডে ২৪ দিন পর এবং বেইজিং ৫০ দিন ভাইরাসমুক্ত থাকার পর সেখানে নতুন করে করোনা ভাইরাসের সং'ক্র'মণ ঘটতে দেখা যায়। কিন্তু সেখানে দ্বিতীয় ঢেউ আ'ঘা'ত হেনেছে সেটা বলা যাবে না।

তবে কোনো কোনো বিজ্ঞানী মনে করেন ইরানে যেভাবে পুনরায় সং'ক্র'মণ ঘ'টছে সেটাকে সেকেন্ড ওয়েভের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। সং'ক্র'মণ দ্বিতীয় দফায় ফিরে আসা নিয়ে অনেকের মধ্যে উদ্বে'গ থাকলেও কোনো দেশে সেরকম কিছু ঘটবে কীনা সেটা নি'শ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। ব্রিটেনেও সেকেন্ড ওয়েভের বিষয়ে বিজ্ঞানীরা নি'শ্চিত নন। তবে এরকম কিছু হওয়ার সম্ভাবনা পুরোপুরিই রয়ে গেছে।

কারণ এখনও দেশটিতে সং'ক্র'মণ ঘ'টছে। ব্রিটেনের মোট জনসংখ্যার মাত্র পাঁচ শতাংশ করোনা ভাইরাসে আ'ক্রা'ন্ত হয়েছেন বলে ধারণা করা হয় এবং তাদের সবার দেহেই যে এই ভাইরাসটি প্রতিরো'ধের ক্ষ'মতা তৈরি হয়েছে সেটাও নি'শ্চিত করে বলা যাবে না। লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন এন্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের ড. অ্যাডাম কুচারস্কি বলেন, ''বেশিরভাগ মানুষ এখনও আক্রা'ন্ত হতে পারেন। ভাইরাসটি নিয়'ন্ত্রণে যেসব বিধি-নিষে'ধ আরো'প করা হয়েছে সেগুলো তুলে নেওয়া হলে আবারও ফেব্রুয়ারি মাসের মতো পরি’স্থিতি তৈরি হতে পারে।''  

কী কারণে সেকেন্ড ওয়েভ আসতে পারে? : ভাইরাসটিকে নিয়'ন্ত্রণে রাখতে জারি করা হয়েছে লকডাউন। কিন্তু এর ফলে সারা দেশেই অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিশৃ'ঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে। বহু মানুষ চাকরি হা'রিয়েছে, বিঘ্নিত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা, স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় ছেলেমেয়েদের লেখাপড়াও ঠিক মতো হচ্ছে না।

তবে এটাও বাস্তবতা যে লকডাউনের কারণে ভাইরাসটিকে নিয়'ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে। ''দৈনন্দিন জীবনে কতো কম বিঘ্ন ঘটিয়ে করোনাভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় সেটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন,'' বলেন ড. কুচারস্কি। এবিষয়ে কেউই শতভাগ নি'শ্চিত নন। আর একারণে লকডাউনের মতো বিধি-নিষে'ধ ধাপে ধাপে তুলে নেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও ভাইরাসটিকে নিয়'ন্ত্রণে রাখতে নেওয়া হচ্ছে নতুন নতুন ব্যবস্থাও।

এসবের মধ্যে রয়েছে কনটাক্ট ট্রেসিং অর্থাৎ করোনা ভাইরাসে আক্রা'ন্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে যারা এসেছেন তাদেরকে খুঁ'জে বের করে আলাদা করে রাখার ব্যবস্থা এবং মুখে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা। ড. কুচারস্কি বলেন, ''সং'ক্র'মণের নিয়'ন্ত্রণ একটা নির্দিষ্ট পর্যায়ে নিয়ে আসার আগে বিধি-নিষে'ধ তুলে নেওয়া হলে যুক্তরাজ্য ও তার প্রতিবেশি দেশগুলোতে সং'ক্র'মণের ঘ'টনা অনেক বেড়ে যেতে পারে।''

এরকম ঘ'টনা ঘ'টেছে জার্মানিতে যেখানে একটি কসাইখানায় প্রকো'প দেখা দেওয়ার পর এক হাজারেরও বেশি কর্মীকে আক্রা'ন্ত বলে শনা'ক্ত করা হয়েছে। এধ'রনের আ'ক্রা'ন্ত গ্রু'পকে যদি খুব দ্রুত শনা'ক্ত করা যায় তাহলে সেটা বড় কোনো সম'স্যা নয়। তখন স্থানীয়ভাবে লকডাউন জারি করে ভাইরাসের বিস্তার ঠেকা'নো সম্ভব। সেরকম করা না হলে সেকেন্ড ওয়েবের ঘ'টনা ঘ'টতে পারে। মহামা'রির শুরুর দিকে করোনা ভাইরাস নিয়'ন্ত্রণে নিয়ে আসতে সফল দেশ দক্ষিণ কোরিয়াতে নতুন করে সং'ক্র'মণ দেখা দিলে সেখানে পুনরায় কিছু কিছু বিধি-নিষে'ধ আরো'প করতে হয়েছে। 

সেকেন্ড ওয়েভ কি প্রথম দফার মতোই হবে? : যদি সেকেন্ড ওয়েভ আসে তাহলে বুঝতে হবে কোথাও বড় ধ'রনের ভুল হয়েছে। মহামা'রির শুরুর দিকে এক ব্যক্তির মাধ্যমে গড়ে তিনজন করোনা ভাইরাসে আক্রা'ন্ত হয়েছেন। এর অর্থ ভাইরাসটি খুব দ্রুত ছড়াচ্ছিল। কিন্তু এর পর মানুষের আচরণে কিছু পরিবর্তন ঘটে, তারা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরা করতে শুরু করে, ফলে সংক্রমণের এই হারও কমে আসতে শুরু করে।

ড. কুচারস্কি বলেন, ''কোনো দেশই সব বিধি-নিষে'ধ প্রত্যা'হার করে আগের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাবে না।'' ভারত ও ব্রাজিলের মতো দেশে, যেখানে ভাইরাসটি এখনও নিয়'ন্ত্রণে আসেনি, সেসব দেশেও সংক্র'মণের হার তিনে পৌঁছায়নি। তবে তাত্ত্বিকভাবে সেকেন্ড ওয়েভ প্রথম ধাপের চেয়েও খা'রাপ হতে পারে কারণ এখনও বহু মানুষের করোনা ভাইরাসে আক্রা'ন্ত হওয়ার আ'শ'ঙ্কা রয়েছে।

ড. টিলডেসলিবলেন, ''যদি আক্রা'ন্ত ব্যক্তির সংখ্যা বাড়তে থাকে, তখন আমরা পুনরায় লকডাউন জারি করতে পারি দ্বিতীয় ঢেউ ঠেকা'তে।''  ড. কুচারস্কি বলেন, বিধি-নিষে'ধ তুলে নেওয়া হলে আগামী কয়েক সপ্তাহে কিম্বা কয়েক মাসে দ্বিতীয় দফায় সং'ক্র'মণের ঢেউ শুরু হতে পারে।”

বিজ্ঞানীরা বলছেন, ইউরোপে শীত কাল হতে পারে একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। কেউ কেউ বলছেন, শীতকালের দিকে সেকেন্ড ওয়েভের ঘ'টনা ঘ'টতেই পারে। ভাইরাসটি কি ক্র'ম'শ দু'র্ব'ল হয়ে পড়বে? সেকেন্ড ওয়েভ প্রথম দফার মতো মা'রা'ত্মক হবে না – এর পক্ষে একটি যুক্তি হলো ভাইরাসটি ক্র'ম'শ দু'র্ব'ল হয়ে পড়বে। ফলে এটি আর মানুষকে সহজে কাবু করে ফেলতে পারবে না।

এইচআইভির ক্ষেত্রেও সেরকম হয়েছে। ''তবে এরকমটাই যে হবে তার কোনো গ্যারা'ন্টি নেই,'' বলেন নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজিস্ট প্রফেসর জনাথন বল। ভাইরাসের মধ্যে এধরনের পরিবর্তন ঘটতে অনেক সময় লাগে। করোনা ভাইরাস মহামা'রি শুরু হওয়ার ছয় মাস পরেও পরিষ্কার নয় যে এই ভাইরাসের ঠিক কী ধ'রনের রুপান্তর ঘটেছে।

এটা কতো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে বা এটা আগের চেয়ে বর্তমানে কতোটা কম প্রা'ণঘা'তী সেসব বিষয়ও এখনও খুব একটা স্পষ্ট নয়। প্রফেসর বল বলেন, ''আমি মনে করি ভাইরাসটি এখনও বেশ ভালোই করছে। অনেকেই আক্রা'ন্ত হচ্ছেন যাদের মধ্যে উপসর্গও দেখা দিচ্ছে না। তাই করোনা ভাইরাস দু'র্ব'ল হয়ে পড়েছে এরকমটা ভাবার কোনো কারণ নেই।'' সূত্র : বিবিসি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে