শুক্রবার, ২৬ জুন, ২০২০, ০৪:৫৩:৩৬

শুধু লাদাখের গলওয়ান নয়, পুরো আকসাই চীন দখলে নিতে ভারতের সামরিক প্রস্তুতি

শুধু লাদাখের গলওয়ান নয়, পুরো আকসাই চীন দখলে নিতে ভারতের সামরিক প্রস্তুতি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : লাদাখের গলওয়ান সং'ঘা'ত পরবর্তী চ'র'ম উত্তে'জনাকর পরি'স্থিতির মধ্যে আকসাই চীন দ'খলমু'ক্ত করতে প্রস্তুত ভারতীয় সেনা। ১৯৬২ সালের যু'দ্ধের পর, প্রায় ৩৮ হাজার বর্গকিলোমিটার অংশ জুড়ে বিস্তৃত ভারতীয় ভূ-খণ্ডের এই অঞ্চলটি দ'খল করে বসে রয়েছে চীন।

গত কয়েক মাসে লাদাখের প্রকৃত নিয়'ন্ত্রণরেখায় চীন সেনা সমারোহ বাড়ার সঙ্গেই ভারতও কিন্তু স'মরসজ্জা শুরু করে দিয়েছে। সেনা বাহিনীর তিনটি ডিভিশনকে মোতায়েন করে, ভারতও শক্তি বাড়িয়েছে। সবচেয়ে শক্তিশালী টি-৯০ ভীষ্ম ট্যাংকও ক'দিন হল নিয়ে আসা হয়েছে পূর্ব লাদাখে।

১৯৬২ সালের সং'ঘ'র্ষের সময় লাদাখ সীমান্তে ভারতের একটিই মাত্র ব্রিগেড সেখানে ছিল। ২০০০ জওয়ান ছিল ওই ব্রিগেডে। বর্তমানে লাদাখের সুর'ক্ষায় তিনটি বিভাগের ৪৫,000 সৈন্য মোতায়েন রয়েছে। পার্বত্য অঞ্চলের অনুপাত হল ১:১২। অর্থাৎ, ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৪৫,০০০ সৈন্যের মুখো'মুখি হতে চীনের ৫ লক্ষ সৈন্যের শক্তি প্রয়োজন।

২০১৯ সালের ৫ অগস্ট লাদাখকে জম্মু-কাশ্মীর থেকে বি'চ্ছিন্ন করে, পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মর্যাদা দেয় ভারত। নয়াদিল্লির এই প'দক্ষে'পে তী'ব্র আ'পত্তি তুলেছিল বেজিং। চীনের উদ্বে'গের কারণ, তিব্বত থেকে জিনজিয়াং প্রদেশে যাওয়ার মসৃণ পথ আকসাই। যদি, এই রুটটি কোনও ভাবে অব'রুদ্ধ করা হয়, তবে চীনকে কারাকোরাম হয়ে বিক'ল্প পথে পৌঁছতে হবে।

এখন ভারত যদি আকসাই চীনের দিকে এগোয়, জিনজিয়াং প্রদেশের উপর থেকে চীনের দ'খল হা'রিয়ে ফেলার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, এই জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিমদের উপর চীনা সরকারের অত্যা'চার গোটা দুনিয়ার অজানা নয়। আকসাই চীন নিয়ে ভারত ও চীনের বিরো'ধ বহু দিনের। এটি ভারতের জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের লাদাখের অংশ ছিল। কিন্তু, চীনের দাবি, আকসাই চীন তাদের জিংজিয়াং প্রদেশের অংশ। বিরো'ধ সেখানেই।

আকসাই চীন কিন্তু ছোটখাটো অঞ্চল নয়। আয়তন ৩৭,২৪৪ বর্গকিলোমিটার। ভারতের অনেকগুলি রাজ্য এই অঞ্চলটির থেকে ছোট। গোয়ার চেয়ে ১০ গুণ বড়। সিকিমের চেয়ে ৫ গুণ বড়। আবার মণিপুরের আয়তনের তুলনায় প্রায় দেড়গুণ বড়। শুধু তাই নয়। বিশ্বের কয়েক'টি দেশও আকসাই চীনের আয়তনের তুলনায় ছোট। তাইওয়ান, বেলজিয়ামের থেকে এর আয়তন বেশি। অত দূর যেতে হবে না। ভারতের প্রতিবেশী ভুটানের থেকে আয়তনে সামান্য কম আকসাই চীন।

এটা মনে করা হয়, ১৯৫০-এর দশকে নেহরু সরকার যদি চীনের নকশাগুলির সম্পর্কে সজাগ থাকত, তবে আকসিন চীন নিজেদের দ'খলে নিতে পারত না চীন। চীনের গতিবিধিও বুঝে উঠতে পারেনি নেহরু সরকার। চীন রাস্তাঘাট নির্মাণ শুরু করলেও, কোনও পদক্ষেপ করে উঠে পারেননি নেহরু। সামরিক শক্তির গুরুত্ব বুঝতেও ব্য'র্থ হয়েছিল।

ভারত-চীন এই সংঘা'তের আবহেই বৃহস্পতিবার ফের একবার আকসাই চীনের দাবি তোলেন লাদাখের বিজেপি সাংসদ জামিয়াং সেরিং নামগিয়াল। এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাতকার দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ''এটি একটি ভারতীয় অঞ্চল এবং এখন চীনা দ'খল থেকে এই জায়গা ফিরিয়ে আনার সময় এসেছে।''

নামগিয়াল অবশ্য শুধু আকসাই চীন নয়, গিলগিট ও বালতিস্তানের মতো অঞ্চলগুলিও 'লাদাখের অংশ' বলেই দাবি করেন। আকসাই চীন এলাকা যেমন রয়েছে চীনের দ'খলে, তেমনই গিলগিট ও বালতিস্তান রয়েছে পাকিস্তানের বেআইনি দ'খলে। ১৯৬২ সালের যু'দ্ধে চীনের বি'রু'দ্ধে ভারত পরা'জিত হয়েছিল। এদিন লাদাখের সংসদ জানিয়েছেন, ২০২০ সালে ভারত আর সেই জায়গায় নেই। এখন ভারত চাইলেই এই জায়গাগুলির দ'খল ফিরিয়ে নিতে পারে।

লাদাখে ভারতের সীমান্ত রক্ষায় লাদাখের স্থানীয়দের বৃহত্তর ভূমিকা নিতে হবে বলেও তিনি জানান। তার মতে সীমান্তবর্তী এলাকার রাখালদের তাদের ঐতিহ্যবাহী চারণভূমিতে যেতে হবে। সেখানে চীন তাদের প্রবেশা'ধিকার নি'ষিদ্ধ করেছে, কিন্তু তাদের ভারতীয় অঞ্চল দাবি করতে হবে।

এর আগে গলওয়ান উপত্যকায় চীন সেনার অনুপ্রবেশের বিষয় সম্পূর্ণ অস্বী'কার করেছিলেন বিজেপি সাংসদ। রাহুল গান্ধীর প্রশ্নের উত্তরে তিনি সাফ জানিয়েছিলেন, ১৯৬২ সালে কংগ্রেস ক্ষ'মতায় থাকার সময় চীন লাদাখে ঢুকে পড়েছিল। তার পর কংগ্রেস ও ইউপিএ সরকারের আমলে বারবারই তারা ভারতীয় ভূ'খণ্ডে ঢুকে পড়েছে।

একনজরে আকসাই চিন : আকসাই চীন লাদাখের অংশ, ৩৭,২৪৪ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। আকসাই চীন বর্তমানে চীনের অবৈধ দখলে। ১৯৪৭ সালের পর থেকেই চীন আকসাই চিনে অনুপ্রবেশ শুরু করে। ১৯৫৭ সালে চীন রাস্তা তৈরি করেছিল। ১৯৫৮ সালে চীন তার মানচিত্রে আকসাই চীনকে দেখিয়েছিল। ১৯৬২ সালের যু'দ্ধের পরে চীন আকসাই চীনের দ'খল নেয়। ১৯৬৩ সালে পাকিস্তান আকসাই চীনকে চীনের হাতে তুলে দেয়।

আকসাই চীন কারাকোরাম পর্বতমালায় অবস্থিত। সমুদ্রতল থেকে ১৭,০০০ ফুট উপরে অবস্থিত। কাশ্মীরের মোট ক্ষেত্রের প্রায় ২০% অংশ জুড়ে আকসাই চীন। ১৯৪৭ সালের আগে কাশ্মীরের রাজপরিবারের অংশ ছিল। ১৯৪৭ সালে রাজা হরি সিং একীকরণ চু'ক্তিতে ( merger agreement) সই করেছিলেন। ১৯৪৭ সালে আকসাই চীন আইনত ভারতের অংশ হয়েছিল। ভারত চীনকে এই অংশ খালি করতে বলেছে।

চিনের কাছে এই অঞ্চলের গুরুত্ব: চীনকে জিনজিয়াং এবং তিব্বতের সঙ্গে সংযুক্ত করে। মধ্য এশিয়ার সর্বোচ্চ স্থান। এর উচ্চতার কারণে কৌ'শলগত ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। চীনের সামরিক বাহিনী ভারতের দিকে নজর রাখতে পারে। আকসাই চীন কারাকোরাম পর্বতমালায় অবস্থিত। এটি সমুদ্রতল থেকে ১৭,০০০ ফুট উপরে অবস্থিত। সূত্র : ইন্ডিয়াটাইমস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে