বুধবার, ০১ জুলাই, ২০২০, ১০:১২:৫৮

ব'জ্রপাতে একই দিনে ৮৩ জনের মৃ'ত্যু পর আবারো মা'রা গেলে ১১ জন

ব'জ্রপাতে একই দিনে ৮৩ জনের মৃ'ত্যু পর আবারো মা'রা গেলে ১১ জন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মাত্র পাঁচ দিন আগে বিহারজুড়ে ব'জ্রপাতে একই দিনে ৮৩ জনের মৃ'ত্যু হয়। সেই ঘটনার রেশ কা'টার আগে ফের সেই বিহারেই মঙ্গলবার (৩০ জুন) ব'জ্রপাতে (lightning strike in Bihar) মৃ'ত্যু হল ১১ জনের। রাজ্য প্রশাসন সূত্রে খবর, বিহারের পাঁচ জেলায় এই ১১ জন মা'রা গিয়েছেন। এদিন ব'জ্রপাতে মৃ'ত্যুর খবর শুনেই আর্থিক ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। মুখ্যমন্ত্রীর দফতর (CMO) সূত্রে খবর, মৃ'তদের পরিবারকে ৪ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ (Compensation) দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। নিকট স্বজনদের হাতে এই টাকা তুলে দেওয়া হবে।

ঠিক পাঁচ দিন আগে, গত ২৫ জুন ব'জ্রবিদ্যুত্‍‌ (Thunderstorms)-সহ বৃষ্টির সঙ্গে ব্যাপক ব'জ্রপাতে (Lightning in Bihar) বিহারজুড়ে কমপক্ষে ৮৩ জনের মৃ'ত্যু হয়। ওই ৮৩ জনের মধ্যে তিন শিশুও ছিল। ব'জ্রবিদ্যুতে জখ'ম হন বহু মানুষ। ওই ৮৩ জনের পরিবারকেও ৪ লক্ষ টাকা করে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী (Bihar Chief Minister) নীতীশ কুমার (Nitish Kumar)।

রাজ্য বিপর্যয় মো'কাবিলা দফতর জানিয়েছিল, ৮৩ জনের মধ্যে ১৩ জন মা'রা যান গোপালগঞ্জ জেলায়। মধুবনী ও নবাদা জেলায় ৮ জন করে মা'রা গিয়েছেন। ভাগলপুর ও সিওয়ানে ব'জ্রপাতের বলি ৬ জন করে। বাঙ্কা, দ্বারভা'ঙা ও পূর্ব চম্পারণ জেলায় পাঁচ জন করে মা'রা গিয়েছেন।

এ ছাড়া খাগারিয়া ও ঔরঙ্গাবাদ জেলায় ব'জ্রপাতে ৩ জন করে মা'রা গিয়েছেন। জেহানাবাদ, কিষানগঞ্জ, পশ্চিম চম্পারণ, জামুই, পূর্ণিয়া, সুপাউল, কৈমুর ও বক্সারে ২ জন করে মা'রা গিয়েছেন। সরান, শিবহর, সমস্তিপুর, মাধেপুরা ও সীতামারিতে এখনও পর্যন্ত একজন করে মা'রা গিয়েছেন বলে সরকারি ভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে।

গোপালগঞ্জের সাব-ডিভিশনাল অফিসার (SDO) উপেন্দ্র পাল জানান, চাষের জমিতে কাজ করার সময় বাজ পড়লে, গোপালগঞ্জের বিভিন্ন ব্লকে ১৩ জনের মৃ'ত্যু হয়। এর মধ্যে বরাউলি ও উচকাগাঁও ব্ল'কে চার জন করে মা'রা গিয়েছেন। গোপালগঞ্জ ব্লকে মৃ'ত্যু হয়েছে দু'জনের। মাঝা, কাতেয়া ও বিজয় ব্লকে একজন করে মা'রা গিয়েছেন। গোপালগঞ্জের জেলা আধিকারিক আরশাদ আজিজ সাধারণ মানুষের কাছে আর্জি জানান, বৃষ্টিতে বাড়ির বাইরে বেরোবেন না। কোনও গাছতলায় দাঁড়াবেন না। মৃ'তদের মধ্যে বেশির ভাগই চাষের মাঠে কাজ করছিলেন। আহ'তদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সিবানের হুসেইনগঞ্জে দু'জন মা'রা গিয়েছেন। এ ছাড়া সিবান ব্লক ও বরহারিয়া ব্লকে একজন করে মা'রা গিয়েছেন। জানিয়েছেন সেখানকার এসডিও।

দ্বারভা'ঙার জেলা বিপ'র্যয় মো'কাবিলা দফতরের আধিকারিক পুষ্পেষ কুমার জানান, দ্বারভা'ঙায় তিন শিশু-সহ পাঁচ জন মা'রা গিয়েছেন। জ'খম হয়েছেন আরও দু-জন। এর মধ্যে হনুমান নগর ব্লকে বাজ পড়ে দুই বালক মা'রা গিয়েছে। বাহাদুর ব্লকে এক কিশোরী, বিরাউল থানার অন্তর্গত এক গ্রামে একজন মহিলা এবং বহেরি থানা এলাকায় আরও এক ব্যক্তির মৃ'ত্যু হয়েছে।

মধুবনী জেলার ফুলপরাস থানার অন্তর্গত বেলহা গ্রামে বাজ পড়ে এক দম্পতির মৃ'ত্যু হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট থানার আধিকারিক জানিয়েছেন। পশ্চিম চম্পারণের সংশ্লিষ্ট পুলিশ আধিকারিক কেকে গুপ্তা জানান, শিকারপুর থানা এলাকার দুই গ্রামে দুই কৃষকের মৃ'ত্যু হয়েছে। এদিন ঝড়জলে বিহারের অনেক অঞ্চলেই জনজীবন বিপর্য'স্ত হয়ে পড়ে।

গত বছর এই বিহারেই বাজ পড়ে একদিনে ৩২ জনের মৃ'ত্যু হয়েছিল। তার মধ্যে সবথেকে বেশি মা'রা গিয়েছিলেন ঔরঙ্গাবাদে। ওই বছরই কয়েক দিন আগে-পরে বিহারেই ব'জ্রাপাতে ১০ শিশুর মৃ'ত্যু হয়েছিল। তবে, ২০১৬ সালের জুন মাসে নীতীশ কুমারের রাজ্যে বাজ পড়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অন্ততপক্ষে ৫৭ জনের প্রাণ গিয়েছিল।

ভারতে প্রতিবছর বহু মানুষ ব'জ্রপাতে মা'রা যায়। তবে, আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে ওডিশা কিন্তু ব'জ্রপাতে মৃ'ত্যু কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি বেসরকারি কোম্পানির সহযোগিতায় ব'জ্রপাতের আগাম সতর্ক'তা জারির ব্যবস্থা করেছে ওডিশা। যে কারণে তারা ব'জ্রপাতে মৃ'ত্যু ৩১ শতাংশ কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।

বিশেষ প্রযুক্তির মাধ্যমে আগাম স'তর্কবার্তা পাওয়ার পরেই যে এলাকায় বাজ পড়তে পারে, সেখানকার বাসিন্দাদের মোবাইলে এসএমএস পাঠিয়ে সাবধান করে দেওয়া হচ্ছে। সতর্কবার্তা পাওয়ার সময় থেকে সাধারণ মানুষের কাছে বার্তা পৌঁছতে দুই থেকে তিন মিনিট সময় লাগছে। এ ছাড়া স্থানীয় ভাবে সাইরেন বাজিয়েও সাবধান করা হয়।

রাজ্যের বিপ'র্যয় মো'কাবিলা মন্ত্রী সুদাম মারান্ডি সম্প্রতি ওডিশা বিধানসভায় পেশ করা এক তথ্যে জানিয়েছেন ২০১৭- ১৮ সালে রাজ্যে ৪৬৫ জন মানুষ ব'জ্রপাতে মা'রা গিয়েছিলেন। সেখানে ২০১৮-১৯ সালে মৃ'ত্যু হয়েছে ৩২০ জনের।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাল-সুপুরি-খেজুর-নারকেল জাতীয় উঁচু গাছ ব'জ্রপাতে মৃ'ত্যু কমায়। তাই এই গাছগুলি কাটবেন না। দেখা গিয়েছে, এ ধরনের উঁচু গাছ অনেক সময়েই বাজ আকৃষ্ট করে সাধারণ মানুষকে বিপ'দের হাত থেকে রক্ষা করে। গাছ হয়তো জ্ব'লে যায়, কিন্তু আশপাশে থাকা মানুষ বেঁচে যান। ব'জ্রপাতে মৃ'ত্যু ঠেকাতে ভারতের পড়শি বাংলাদেশ শুধু ১০ লক্ষ তালগাছ লাগিয়েছে। থাইল্যান্ডও তালগাছ লাগিয়ে ব'জ্রপাতে মৃ'ত্যু কমিয়ে এনেছে। বাংলাদেশের সরকারি এক আধিকারিক জানান, ব'জ্রপাত যেহেতু সাধারণত উঁচু কোনও কিছুতে আঘা'ত করে, সেজন্য উঁচু গাছ হিসেবে তালগাছকেই তারা বেছে নিয়েছেন ব'জ্রপাত ঠে'কানোর জন্য। তাঁর কথায়, ব'জ্রপাতে মৃ'ত্যু ঠে'কানোর জন্য এটাই সবচেয়ে কার্যকর স্থানীয় প্রযুক্তি।-এই সময়

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে