২০১৫ সালে বিশ্বে তোলপাড় করা যত ঘটনা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ঘটনাবহুল বছর ছিল ২০১৫। অব্যাহত যুদ্ধবিগ্রহ, জঙ্গিবাদী সন্ত্রাস আর ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি ঘটেছে ইরান ও ছয় বিশ্বশক্তির সমঝোতা আর যুক্তরাষ্ট্র, কিউবার মতো দুই ‘চিরশত্রুর’ কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন ও ভিনগ্রহে প্রাণের সম্ভাবনার মতো ঐতিহাসিক ঘটনা।
২০১৫-তে আইএসের ভয়ঙ্কর উত্থান ঘটেছে। বিশ্বের ভীত নাড়িয়ে গেছে ১৩ নভেম্বর ফ্রান্সের প্যারিসে ইসলামিক স্টেটের হামলায় ১৩০ জনের মৃত্যু। ফ্রান্সের পাশে দাঁড়ায় পুরো বিশ্ব। যদিও বছর শেষে তাদের দাপট কিছুটা কমে এসেছে বলে মনে হচ্ছে।
গত জানুয়ারিতে প্যারিসে ব্যঙ্গাত্মক সাময়িকী শার্লি এবদো কার্যালয়ে এবং দুই দিন পরে একই শহরের বিপণিবিতানে বন্দুকধারীদের হামলায় সাংবাদিক, চিত্রশিল্পীসহ মোট ১৭ জন নিহত। শার্লি এবদো মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কার্টুন প্রকাশ করায় ওই হামলা হয়েছে বলে মনে করা হয়।
২০১৫ সালে বার বার শিরোনাম হয়েছেন অভিবাসীরা। মালয়েশিয়া-অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমাতে গিয়ে ভারত মহাসাগরে প্রাণ হারান হাজারো অভিবাসী। মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইউরোপে পাড়ি জমাতে গিয়েও প্রাণ হারিয়েছেন বহু।
তবে শেষ পর্যন্ত জার্মানির চ্যান্সেলর এঞ্জেলা মেরকেল এঞ্জেল হিসেবে আর্বিভূত হন অভিবাসীদের জন্য। তারই নেতৃত্বে জার্মানীসহ ইউরোপ দরজা খুলে দেয় তাদের জন্য। প্রায় ১০ লাখ অভিবাসী ইউরোপে ঢোকেন, যার অর্ধেকই সিরিয়ার।
২৫ এপ্রিল নেপালে ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে প্রায় ৯ হাজার মৃত্যু নাড়া দেয় পৃথিবীকে। দুইবার বিপর্যয়ের শিকার হন হাজীরা। প্রথমে মক্কায় ক্রেন ভেঙে পড়ে ১১১ জনের মৃত্যু, এরপর মিনায় পদপিষ্ট হয়ে প্রায় আড়াই হাজারের মৃত্যু।
বিমানযাত্রীদের জন্য ছিলো আতংকের বছর ২০১৫। ফেব্রুয়ারিতে তাইওয়ানে ট্রান্স এশিয়ার বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ৪৩ জন নিহত হয়। মার্চে জার্মানউইঙ্গসের বিমান বিধ্বস্ত হয়ে দেড়শ’ মানুষের মৃত্যু হয়।
জুনে ইন্দোনেশিয়ার সামরিক বিমান বিধ্বস্ত হয়ে প্রাণ হারান ১৪৩ জন। অক্টোবরে মিশরে রুশ বিমান বিধ্বস্তে ২২৪ আরোহীর মৃত্যু হয়।
২০১৫-তে ত্রাস সঞ্চার করেছে জঙ্গিবাদ। অপহৃত পশ্চিমা নাগরিক অপহরন ও হত্যা ছেড়ে বড় হামলার পথ ধরে ইসলামিক স্টেট - আইএস। রমজান মাস চলাকালেই সিরিয়া, তিউনিসিয়া আর কুয়েতে আইএসের হামলায় আড়াইশ’রও বেশি মানুষ প্রাণ হারান। এপ্রিলে কেনিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে আল-শাবাবের হামলা কাড়ে ১৪৮ প্রাণ। অক্টোবরে তুরস্কে র্যালিতে আত্মঘাতী হামলায় মারা যান ১শ’ জন।
একবইসঙ্গে বিশ্বব্যাপী উদ্যোগও ছিলো সন্ত্রাসবাদ দমনে। সেপ্টেম্বরে সিরিয়ায় আইএসবিরোধী হামলা শুরু করে রাশিয়া। রুশ জঙ্গি বিমান ভ’পাতি করার ঘটনায় সম্পর্কের তলানিতে পৌঁছায় রাশিয়া-তুরস্ক। জুলাইতে জোড়া লেগে ৫৪ বছর বিচ্ছিন্ন যুক্তরাষ্ট্র-কিউবা সম্পর্ক। মিয়ানমারে ঐতিহাসিক নির্বাচনে জয় পান অং সান সু চি।
সফল পরিণতি পায় জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন। পৃথিবীকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন বিশ্বনেতারা। আর মঙ্গলে নাসা’র তরল পানির সন্ধান এ বিশ্বের বাইরে ‘নতুন পৃথিবী’র স্বপ্ন দেখায়।
মার্চেই ইয়েমেনি প্রেসিডেন্ট আবেদরাব্বো মনসুর হাদির বাহিনীর সমর্থনে দেশটির বিদ্রোহী হুতি শিয়াদের ওপর সৌদি জোটের বিমান হামলা শুরু। এপ্রিলে রিখটার স্কেলে ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে ৮৯০০ লোক নিহত হয়।
জুলাইয়ে ৫৪ বছরের বিচ্ছিন্নতার অবসান ঘটিয়ে দুই দেশের মধ্যে পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে ঐতিহাসিক চুক্তি সম্পন্ন হয়।
সেপ্টেম্বরে তুর্কি উপকূলে তিন বছর বয়সী সিরীয় শিশু আয়লান কুর্দির পড়ে থাকা লাশের ছবি গণমাধ্যমে আসে। এই ছবি প্রকাশের পরই মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইউরোপের দিকে যাওয়া শরণার্থীদের সংকট ব্যাপকভাবে বিশ্ববাসীর নজরে আসে।
২৪ সেপ্টেম্বর সৌদি আরবের মিনায় পদপিষ্টে বহু হাজি হতাহত হন। সৌদির সরকারি হিসাবমতে ২ হাজার ২৩৬ জন হাজির মৃত্যু হয়। তবে অভিযোগ রয়েছে, প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি।
৩১ অক্টোবর মিশরের শারম আল শেখ অবকাশকেন্দ্র থেকে রাশিয়াগামী বিমান সিনাই উপদ্বীপে বিধ্বস্ত। ২২৪ রুশ নাগরিকের মৃত্যু।
নভেম্বরে মিয়ানমারে বহুল প্রতীক্ষিত নির্বাচনে অং সান সু চির দলের বিপুল বিজয়।
১৩ নভেম্বর ফ্রান্সে স্টেডিয়াম, কনসার্ট হল, পানশালা ও রেস্তোরাঁয় বন্দুকধারী জঙ্গিদের গুলি ও আত্মঘাতী বোমা হামলায় ১৩০ জন নিহত ও কয়েক শ আহত। আইএস এই হামলার দায় স্বীকার করে।
১২ ডিসেম্বর ফ্রান্সে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন থামাতে প্যারিসে জলবায়ু সম্মেলনে ১৯৫ দেশের ঐতিহাসিক চুক্তি হয়। সূত্র: চ্যানেল আই, আরটিএএন
৩১ ডিসেম্বর ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএস
�