শনিবার, ১১ জুলাই, ২০২০, ০২:০৬:১৭

করোনার টিকার জন্য কেন কাঁকড়ার নীল র'ক্ত দরকার?

করোনার টিকার জন্য কেন কাঁকড়ার নীল র'ক্ত দরকার?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সারা বিশ্বে প্রাণঘা'তী করোনাভাইরাসের তা'ণ্ডব থা'মছেই না। এই ভাইরাসের বি'ষা'ক্ত ছোবলে দি'শেহা'রা হয়ে পড়েছে গো'টা বিশ্ব। প্রতি মুহূর্তে বেড়েই চ'লেছে আক্রা'ন্ত ও মৃ'ত্যুর সংখ্যা। এরই মধ্যে করোনার টি'কা তৈরিতে আলোচনায় এসেছে নাল কাঁকড়া ‘হর্সশু ক্র্যাব’ নামের একটি প্রাণী।

করোনার টি'কা খুঁ'জে পাওয়া গেলে সেটি সবার জন্যই একটা বিরাট সুসংবাদ। কেবল ‘হর্সশু ক্র্যাব’ বা 'নাল কাঁকড়া' ছাড়া। এর কারণ, করোনাভাইরাসের টি'কা আবিষ্কার করতে গেলে এই ধরনের কাঁকড়ার চাহিদা বেড়ে যাবে বহুগুণ।

নাল কাঁকড়া হচ্ছে বিশ্বের সবচাইতে প্রাচীনতম একটি প্রাণী। ডাইনোসর বি'লু'প্ত হয়ে গেছে, কিন্তু নাল কাঁকড়া এখনো টি'কে আছে। ধারণা করা হয় এরা এই পৃথিবীতে বিচ'রণ করছে অন্তত গত ৪৫ কোটি বছর ধ'রে।
এজন্য নাল কাঁকড়াকে অনেক সময় জীব'ন্ত জীবা'শ্ম বলেও বর্ণনা করা হয়। কোনো টিকা নিরাপদ কিনা তা পরীক্ষার জন্য এই নাল কাঁকড়ার র'ক্ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

এই মুহূ'র্তে পৃথিবীজু'ড়ে করোনাভাইরাসের টিকা আবিষ্কারের জন্য কাজ করছে বিজ্ঞানীদের দুই শ টিরও বেশি দল। কোনো কোনো টি'কা এরই মধ্যে মানবদেহে প্রয়ো'গ করে ক্লি'নিকা'ল ট্রা'য়াল চা'লানো হচ্ছে।বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞের ধারণা সামনের বছরের মাঝামাঝি নাগাদ একটা টি'কা ব্যাপকহারে ব্যবহারের জন্য তৈরি হয়ে যাবে।

কাঁকড়ার নীল র'ক্ত কেন দরকার
বিজ্ঞানীরা নাল কাঁকড়ার নীল র'ক্ত সংগ্রহ করছেন সেই ১৯৭০ এর দশক থেকে। তারা এটি মূলত ব্যবহার করেন চিকিৎসা সরঞ্জা'ম এবং ধ'মনীর ভেতর স'রাস'রি ঢু'কিয়ে দিতে হয় এমন ঔষধ নির্বি'ষ বা জীবা'ণুমু'ক্ত কিনা সেটা পরীক্ষা করার জন্য।

কোনো চিকিৎসা স'রঞ্জা'মে যদি ক্ষ'তিকর কোনো জীবা'ণু থাকে সেটা প্রা'ণঘা'তী হতে পারে। নাল কাঁকড়ার র'ক্ত এরকম ব্যা'কটে'রিয়াল ট'ক্সি'ন বা জীবা'ণুর বি'ষের ক্ষেত্রে খুবই বেশি সং'বেদ'নশী'ল।মানুষের শরীরে টি'কা বা অন্য কোনো মেডিক্যাল সরঞ্জা'ম যখন ঢু'কিয়ে দেওয়া হয়, সেগুলো ক্ষ'তিকর জীবা'ণুমু'ক্ত কিনা তা পরীক্ষা করতে নাল কাঁকড়ার র'ক্ত দরকার হয়।

বিরাট ব্যবসা
চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ব্যবহারের জন্য প্রতিবছর আটলান্টিক থেকে প্রায় পাঁচ লাখ নাল কাঁকড়া ধ'রা হয়। ‘আটলান্টিক স্টেটস মেরিন ফিশারিজ কমিশন‌’ এই ত'থ্য দিচ্ছে। নাল কাঁকড়ার র'ক্ত আসলে বিশ্বের সবচাইতে দামি তরল পদার্থের একটি। মাত্র এক লিটার নাল কাঁকড়ার র'ক্ত বিক্রি হয় ১৫,০০০ ডলারে।

নাল কাঁকড়ার র'ক্ত কেন নীল
নাল কাঁকড়ার র'ক্তে আছে তামা এবং এ কারণেই তাদের র'ক্তের রঙ হচ্ছে নীল। মানুষের র'ক্তে আয়রন বা লোহার উপস্থিতি যে ভূমিকা পালন করে, নাল কাঁকড়ার র'ক্তে কপার বা তামার কাজ একই।মানুষের র'ক্ত লাল দেখায় আয়রন বা লোহার উপস্থি'তির কারণে। অন্যদিকে নাল কাঁকড়ার র'ক্ত নীল কপার বা তামার কারণে। তবে বিজ্ঞানীরা নাল কাঁকড়ার র'ক্ত নিয়ে আগ্রহী এটি নীল বলে নয়।

নাল কাঁকড়ার র'ক্তে তামা ছাড়াও আছে একটি বিশেষ ধরনের রাসায়নিক পদার্থ, যেটি আসলে ব্যাকটেরিয়াকে আ'টকে ফে'লতে পারে তার চারপাশে র'ক্ত জ'মাট বাঁ'ধানোর মাধ্যমে।ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ যদি একেবারে কমও হয়, সেটিও এই নাল কাঁকড়ার র'ক্ত দিয়ে শনা'ক্ত করা যায়। এ কারণেই নাল কাঁকড়ার র'ক্ত দিয়ে তৈরি করা হয় এক ধরনের প্রোটিন এজে'ন্ট বা জ'মাট বাঁ'ধানোর রাসায়নিক।

র'ক্ত নেয়ার পর নাল কাঁকড়াগুলো দিয়ে কি করা হয়
নাল কাঁকড়ার ওপরের খো'লস তাদের হৃদয'ন্ত্রের কাছাকাছি ছি'দ্র করা হয় এবং সেখানে দিয়ে তার প্রায় ৩০% র'ক্ত সংগ্রহ করা হয়। এরপর এই নাল কাঁকড়াকে আবারো তার প্রাকৃতিক আবাসস্থ'লে ছেড়ে দেওয়া হয়।

কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, এই প্রক্রিয়ায় অন্তত ১০ থেকে তিন শতাংশ নাল কাঁকড়া আসলে মা'রা যায়। যেসব নারী নাল কাঁকড়া বেঁ'চে থাকে, তারা আসলে নতুন কোনো কাঁকড়ার জন্ম দিতে নানা ধরনের সমস্যায় পড়ে।

কিন্তু বিকল্প কি?
বিশ্বে এখন চার প্রজাতির নাল কাঁকড়া টিকে আছে। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানের কাজে যেভাবে নাল কাঁকড়া আ'হর'ণ করা হচ্ছে তাতে এই চারটি প্রজাতিই এখন হু'ম'কির মু'খে। যেভাবে সাগরে দূ'ষণ ঘ'টছে এবং তাদের আবাসভূমি ধ্বং'স হচ্ছে সেটাও তাদের বিপ'ন্ন করছে।বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভবিষ্যতে নানা রকম পরীক্ষার কাজে নাল কাঁকড়ার চাহিদা আরো বাড়বে। কারণ পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা বাড়ছে এবং মানুষ আরো দীর্ঘ সময় ধ'রে বেঁ'চে থাকছে।

সংর'ক্ষণবাদীরা নাল কাঁকড়া ব্যবহার বন্ধ করে দিয়ে সি'নথে'টিক পরীক্ষার আহ্বান জানাচ্ছেন। কিন্তু ঔষধ কোম্পানিগুলো বলছে, নাল কাঁকড়ার র'ক্তের যে সিন'থেটিক বা কৃত্রিম উপাদানের বিক'ল্প রয়েছে, সেগুলো এখনো নির্ভরযোগ্য নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রা'গ অ্যা'ডমিনি'স্ট্রেশন বা এফিডিএ জুন মাসে জানায় যে আসলে লাল কাঁকড়ার র'ক্তের বিক'ল্প যে সিনথেটিক উপাদান, সেটি যে কা'র্যকর'ভাবে টক্সিন সনা'ক্ত করতে পারে তা প্রমাণ করা যায়নি।ড. বারবারা ব্রামার নিউ জার্সির ‘দ্য নেচার কনজা'রভে'ন্সির’ একজন গবেষক। এই নিউ জার্সিতেই সবচেয়ে বেশি নাল কাঁকড়া ধ'রা হয়। তিনি বলেন, 'এখন ৩০টিরও বেশি কম্পানি টি'কা নিয়ে কাজ করছে এবং এই প্রত্যেকটি কম্পানিকে বহু ধরনের স্টে'রাইলি'টি টে'স্ট চা'লাতে হয়।'

এর মানে হচ্ছে যেসব ঔষধ কম্পানি ঔষধ তৈরি করে, টি'কা তৈরি করে, তাদের আরো বেশি হারেই নাল কাঁকড়ার র'ক্ত ব্যবহার করে যেতে হবে তাদের পরীক্ষার কাজে। সূত্র: বিবিসি বাংলা

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে