ছেলেকে পেয়ে কান্না থামলো ফেলে যাওয়া সেই মায়ের
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : অবশেষে খোঁজ মিলল তেঘরিয়ার চার্নক হাসপাতালে রেখে যাওয়া সেই মায়ের ছেলের। এই সময়ে সংবাদ পরিবেশন হওয়ার পর বৃদ্ধা উমা চাবরির ছেলে অরূপের সন্ধান পেয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ছেলেকে পেয়ে কান্না থামলো সেই মায়ের।
বুধবার রাতেই হাসপাতাল গিয়ে বৃদ্ধা মাকে রিলিজ করিয়ে বাড়ি নিয়ে যান অরূপ৷ তবে মায়ের চোখের জলে হৃদয় পরিবর্তনে নয়, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অসহায় বৃদ্ধার চিকিত্সার বকেয়া বিল মওকুব করার পরই মাকে বাড়ি নিয়ে যেতে রাজি হন অরূপ৷ ছুটির সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও প্রতিশ্রুতি মতো উমা দেবীর বকেয়া প্রায় ৬০ হাজার টাকার বিল মিটিয়ে দেন৷
তার আগে বুধবার দুপুরেই 'এই সময়' দপ্তরে হাজির হন অরূপ৷ তার দাবি, তিনি কুপুত্র নন৷ নিতান্ত আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত হয়েই হাসপাতাল থেকে মাকে রিলিজ করাতে পারছিলেন না তিনি৷
এমনকি মায়ের বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে, ভুল বুঝিয়ে চেক সই করানোর কথাও অস্বীকার করেন তিনি৷ তার দাবি, নিয়মিত ফোন করে হাসপাতালে মায়ের খোঁজ খবরও নেন৷ হাসপাতালের বকেয়া বিলের টাকা সংগ্রহ হলেই মাকে রিলিজ করিয়ে নিয়ে আসার কথা ভেবেছিলেন তিনি৷
কিন্ত্ত বিলের টাকা সংগ্রহ না করতে পারায় লজ্জায় হাসপাতাল যাওয়া বন্ধ করেন৷ এরপরই অরূপকে ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সমস্ত বকেয়া বিল মওকুব করার প্রস্তাব দেন৷ এ দিন রাত নয়টার দিকে অরূপ মাকে বাড়ি নিয়ে যান৷
নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে একমাসের বেশি সময় ধরে 'সুস্থ' অবস্থায় তেঘরিয়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে পড়ে ছিলেন বৃদ্ধা উমা চাবরি৷ প্রাথমিকভাবে অস্ত্রোপচারের ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা দেয়ার পর আচমকা লাপাত্তা হয়ে যান বৃদ্ধার বছর পঁয়ত্রিশের ছেলে অরূপ৷
সুস্থ হয়ে মা উমা চাবরি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বাড়িতে রেখে আসার অনুরোধ করতে থাকেন৷ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সমস্ত বিল মওকুব করার প্রতিশ্রুতি দেয়া সত্ত্বেও ছেলে অরূপ হাসপাতালে আসেননি৷ পুলিশের দ্বারস্থ হয়েও সুরাহা হয়নি৷
বুধবার 'এই সময়'-এ এ খবর প্রকাশের পরই নানা মহলে হইচই পড়ে যায়৷ পুলিশের কাজকর্ম নিয়েও প্রশ্ন তোলেন কেউ কেউ৷ বাগুইআটি থানার পক্ষ থেকেও বাড়তি গুরুত্ব দেয়া হয় এই অভিযোগকে৷
তবে শহরের প্রবীণদের সমস্যা নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যদের মতে এ ধরনের ঘটনা নতুন নয়৷ সারাবিশ্বেই এ সমস্যা ক্রমশ বাড়ছে৷ হেলপ এজ ইন্ডিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান অনুরাধা সেন বলেন, 'পরিবারে প্রবীণদের হেনস্থার ঘটনা বাড়ছে সামাজিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে৷
তবে প্রবীণ নাগরিকরা যদি নিজে থেকে হেনস্থা-হয়রানির খবর না দেন, তা হলে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে পদক্ষেপ করা যায় না৷ পরিবারের লোকজনকে খুঁজে আনার ক্ষেত্রে অবশ্য পুলিশের সক্রিয় হওয়ার সুযোগ আছে৷
তিনি জানান, এসব বিবিধ পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজ্য সরকার এরই মধ্যে প্রবীণ নাগরিকদের অধিকারের খসড়া তৈরি করে ফেলেছে৷ সমাজকল্যাণ, শিশু ও নারী কল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজাও বলেন, এ ধরনের ঘটনা অনভিপ্রেত৷ সামাজিক অবক্ষয়ের এমন বহু ঘটনা এখন প্রকাশ্যে আসছে৷ তবে আক্রান্তদেরও সচেতন হতে হবে অধিকার সম্পর্কে৷ আমাদের দপ্তর থেকে সচেতন করার বাড়তি উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে৷ সূত্র : এই সময়
৩১ ডিসেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম
�