বিশাল ধাক্কা খেলেন জাকারবার্গ!
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ ভারতে বিনা মূল্যে ওয়েব ব্রাউজিং সেবা আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে লাখো ইন্টারনেট সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে ইন্টারনেট সুবিধার আওতায় আনা ও অফুরন্ত সম্ভাবনার কথা দিয়েছিলেন। তবে সমালোচকেরা একে দেখছেন ভিন্নভাবে। ভারতের ক্রমবর্ধমান ইন্টারনেট খাতকে ছদ্মবেশে দখল করে নেওয়ার জন্য জাকারবার্গকে অভিযুক্ত করছেন তাঁরা। তীব্র এই বাধার মুখে জাকারবার্গের দুই বছরের আরাধ্য ইন্টারনেট ডট ওআরজি প্রকল্পটি এখন হুমকির মুখে। ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ভারতে ইন্টারনেট প্রকল্প নিয়ে জাকারবার্গের ধাক্কা খাওয়ার বিষয়টি।
ভারতের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জাকারবার্গের ইন্টারনেট ডট ওআরজি থেকে ফ্রি বেসিকসে রূপ নেওয়া প্রকল্পটি নিয়ে এখন যথেষ্ট সতর্ক। কারণ— জাকারবার্গের এই উদ্যোগে শুধু কিছু ওয়েবসাইট বিনা মূল্যে (ডেটা খরচ ছাড়া) ব্রাউজ করার সুযোগ পান ব্যবহারকারী, যা ইন্টারনেট সমতা বা সব ওয়েবসাইটকে সমানভাবে দেখার ধারণাটির বিরোধী। ভারতের টেলিকমিউনিকেশন নিয়ন্ত্রক সংস্থা ওয়েবসাইটভিত্তিক ডেটা খরচের বিষয়টি নিয়ে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত মতামত নিচ্ছে।
ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফেসবুক যদি ভারতে টিকে এই লড়াইয়ে হেরে যায় তবে ফেসবুকের ইন্টারনেট ডট ওআরজি থেকে ফ্রি বেসিকসে রূপ নেওয়া সেবাটিও বাধাগ্রস্ত হতে পারে। বর্তমানে ফ্রি বেসিকস সেবাটি ব্যবহার করে ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার ও বিং সেবাটি ডেটা প্ল্যান ছাড়াই ব্যবহার করা যায়।
ভারতের ব্যাঙ্গালোর ভিত্তিক অলাভজনক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইন্টারনেট অ্যান্ড সোসাইটির পলিসি পরিচালক প্রণেশ প্রকাশ বলেন, ‘ভারতের লড়াইটি এখন অন্য দেশেও বিতর্ক ছড়াচ্ছে। ব্রাজিল, ভেনেজুয়েলা ও কলম্বিয়ার মতো দেশে ইন্টারনেট সমতার সক্রিয়রা এই বিতর্ক দেখে আলোচনা শুরু করছেন।’
জাকারবার্গ তার বিনা মূল্যের ওয়েব সুবিধার পেছনে যুক্তি দেখাচ্ছেন ডিলোটি নামের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষণার ফলাফলকে। এই গবেষণায় বলা হয়, ওয়েব সুবিধা প্রাপ্ত প্রতি ১০ জন মধ্যে একজনের দারিদ্র্যমুক্তি ঘটে ও একটি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়।
ফেসবুকের যুক্তি হচ্ছে, ইন্টারনেটে সামান্য কিছু বিনা মূল্যে মানুষকে দিলে তাঁরা দ্রুত ইন্টারনেটের মূল্য বুঝতে পারবে এবং অর্থ খরচ করে ইন্টারনেট ব্যবহার শুরু করবে। জাকারবার্গ বলেছেন, ওয়েবে মানুষকে যুক্ত করার ক্ষেত্রে তাঁর বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সামাজিক বাধা। যাঁরা কোনো দিন অনলাইনে আসেননি তাঁদের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট কতটা দরকারি সেটা প্রমাণ করাই তাঁর লক্ষ্য।
চলতি সপ্তাহে ভারতের টাইমস অব ইন্ডিয়াতে একটি আবেগভরা উপসম্পাদকীয়তে জাকারবার্গ লিখেছেন, ‘এর বিপক্ষে কে অবস্থান নিতে পারে?’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘আশ্চর্যজনকভাবে, গত বছর থেকে ভারতে এ বিষয়টি নিয়ে বিশাল বিতর্ক চলছে।’
বর্তমানে ১৫৫ কোটি ব্যবহারকারী প্রতি মাসে একবার অন্তত ফেসবুক ব্যবহার করেন। অর্থাৎ ইন্টারনেট সংযোগ সুবিধার আওতায় থাকা অর্ধেক মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করছেন।
ফেসবুকের এই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে আরও বেশি মানুষকে ইন্টারনেটের আওতায় আনতে হবে। এ কারণেই ফেসবুক বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে ইন্টারনেট সুবিধাবঞ্চিত এলাকায় ইন্টারনেট সুবিধা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে ড্রোন, স্যাটেলাইট কিংবা লেজার প্রযুক্তি আছে। তবে ফেসবুকের ইন্টারনেট ডট ওআরজি প্রকল্পটি এখন ৩৭টি দেশে ছড়িয়ে গেছে।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ হিসেবে ফেসবুকের ফ্রি বেসিকস পরিকল্পনায় ভারত অধিক গুরুত্বপূর্ণ। তবে ফেসবুকের প্রতিপক্ষও কম আগ্রাসী নয়। তাঁরা ফেসবুকের এই উদ্যোগের নানা সমালোচনা করছেন। তাঁরা বলছেন, ফেসবুক যেভাবে ফ্রি বেসিকস নিয়ে কাজ করছে তাতে ভারতের উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতির মুখে পড়বে।
ওয়ান ৯৭ কমিউনিকেশনস নামের একটি মোবাইল পেমেন্ট স্টার্টআপ সম্প্রতি জাকারবার্গের পরিকল্পনার সরাসরি বিরোধিতা করে বলেছে, ‘আমরা টেলিকম কোম্পানিগুলোর একটি ডেভেলপারের পরিবর্তনে অন্যটির বেছে নেওয়ার এই নীতির বিরোধী। আমরা সবার জন্য সমান ইন্টারনেট চাই। সব উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানকে একভাবে দেখা হোক আমরা সেটা চাই।’
ফেসবুক অবশ্য তাদের ফ্রি বেসিকস সেবাটিকে সমর্থন করার জন্য প্রচার চালাচ্ছে। সম্প্রতি ‘সেভ ফ্রি বেসিকস ইন ইন্ডিয়া’ নামের একটি কর্মসূচি শুরু করেছে ফেসবুক যাতে ভারতের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ‘ডিজিটাল সমতার’ প্রতি সমর্থন দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়াও পত্রিকার পাতাজুড়ে বিজ্ঞাপন দেওয়ার মতো পরিকল্পনা নিয়েও এগোচ্ছে ফেসবুক।
ইন্টারনেট ডট ওআরজির ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্রিস ড্যানিয়েলস সম্প্রতি রেডিটে এক চ্যাটে বলেছেন, ফিলিপাইনের মতো দেশ যেখানে ফ্রি বেসিকসকে গ্রহণ করে নিচ্ছে সেখানে ভারতে অধিক চাপের মুখে পড়তে হচ্ছে। সূত্র : প্রথম আলো।
৩১ ডিসেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই
�