হিন্দু রাষ্ট্র করতে গেলে ভারত টুকরো টুকরো হয়ে যাবে : সিদ্দিকুল্লাহ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র করার ক্ষমতা কারো নেই বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ পশ্চিমবঙ্গ শাখার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী। তিনি আজ (বৃহস্পতিবার) পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগণা জেলার সীমান্ত শহর বনগাঁয় সাংঠনিক এক সমাবেশে এ হুঁশিয়ারি দেন। মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘দেশপ্রেম কোনো নাগরিকদের কাছ থেকে শিখতে হবে না। প্রশাসনের কাছ থেকেও তা শিখতে হবে না। এই দেশ আমরাই স্বাধীন করেছি। এটা মাথায় রাখবেন। আমরা স্বাধীন না করলে ১৯৪৭ সালের পরিবর্তে আরো ১০০ বছর পরে দেশ স্বাধীনতা পেত। আমাদের বাদ দিয়ে দেশ স্বাধীন হতো না। এজন্য আমরা দেশের অংশীদার, আমরা ভাড়াটিয়া নই। এটা আমাদের অংশ।’ রেডিও তেহরানের এক প্রতিবেদনে এ খবর জানা যায়।
ধর্মনিরপেক্ষতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘হিন্দু আছেন থাকবেন, দলিত আছেন থাকবেন, খ্রিস্টান আছেন থাকবেন, মুসলিম আছেন থাকবেন। কেউ যদি মনে করে আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ, দেশটাকে ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ বানিয়ে নেব তাহলে তাকে দশ হাজার বছর জন্ম নিতে হবে। সাফ সাফ শুনে রাখুন। কারোর ক্ষমতা নেই যে, ভারতবর্ষকে হিন্দু রাষ্ট্র করবে।’
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র করতে গেলে এই দেশ টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। দেশের মধ্যে জাতি দাঙ্গা বেঁধে যাবে। দ্বিতীয় স্বাধীনতার যুদ্ধ হবে। আমরা জমিয়তের প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে সুদীপ্তকণ্ঠে ঘোষণা করছি, কোনোদিন আমাদের দেশকে হিন্দু রাষ্ট্র হতে দেব না।’
সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আগে দেশ, তারপর জনগণ, এরপর সমাজ এবং ব্যক্তি জীবন। দেশ যদি না বাঁচে, কেউ বাঁচতে পারবে না। এই কারণে ভারত পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম একটা ভালো দেশ। এই দেশ, এদেশের মাটি আমাদের কাছে পবিত্র। ভারতের মত পবিত্র মাটি পৃথিবীতে নেই। বাংলাদেশের মাটি, পাকিস্তানের মাটি, দুবাইয়ের মাটি আমাদের কাছে আমাদের কাছে তৃতীয় পর্যায়ের। ভারতের মাটি আমাদের কাছে প্রথম পর্যায়ের। মাতৃভূমিকে সংরক্ষিত করা, হেফাজত করা আমাদের কাছে বড় কাজ।’
তিনি বলেন, ‘ভারতের সংবিধান সবার উপরে। সংবিধানের নীচে ভারতের প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রীর অবস্থান। ভারতের সাংবিধানিক পরিকাঠামো খুব মজবুত। তাই অনেক ঝড় ৬৯ বছরে বয়ে গেছে, কিন্তু ভারতবর্ষ নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। কম করে হলেও ৬৭ হাজার বার দাঙ্গা হয়েছে ভারতে। পশ্চিমবঙ্গে বাংলার মানুষ ’৬৪ সাল আর ’৪৭ সালের ভাঙ্গা ক্যাসেট আর দেখতে চায় না। বাংলার মানুষ, সুন্দর বাংলা দেখতে চায়, ভবিষ্যৎ এবং উন্নয়নের বাংলা দেখতে চায়। এজন্য এ দেশকে সমৃদ্ধ করতে হবে।’
তিনি সবাইবে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘হাসনাবাদের নদীর ওপার থেকে নিয়ে কুচবিহার পর্যন্ত ৮ থেকে ৯ টি জেলায় বাংলাদেশের বর্ডার। আপনারা বর্ডার এলাকার মানুষ তাই বর্ধমান, বীরভূম, মেদিনীপুর জেলার থেকে আপনাদের দায়িত্ব তাই অনেক বেশি। আমরা খবরের কাগজ এবং অন্যান্য মাধ্যমে দেখি সমাজবিরোধী শক্তি, দেশ বিরোধী শক্তি বর্ডার এলাকায় মানুষকে প্রভাবিত করে দেশের ক্ষতি করতে চায়। এখানকার নাগরিক হিসেবে আমাকে, আপনাকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। কোনো ধরণের দেশ বিরোধী, দেশের ক্ষতি হতে পারে এরকম বিষয় বরদাস্ত করার কোনো জায়গা নেই।’
রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বলতে গিয়ে মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘তিন ভাগের এক ভাগ মুসলমানদের বাদ দিয়ে বাংলার ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত হতে পারে না। গতকাল (বুধবার) সন্ধ্যার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে টেলিফোন করে ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। জমিয়তের সকল কর্মী-বন্ধুদেরও তিনি শুভেচ্ছা এবং সাধুবাদ জানিয়েছেন। আমিও তাকে পাল্টা সুস্থতা কামনা করে শুভেচ্ছা জানিয়েছি। এভাবে সম্পর্ক গড়ে উঠছে। আমরা তৃণমূলের কাছে হাত পাতিনি। আমাদের মূল্যায়ন, আমাদের দেশপ্রেম, আমাদের ঈমানদারি, আমাদের জনভিত্তি, আমাদের স্বচ্ছতা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ভাবছেন, আমরাও ভাবছি। কি হবে না হবে সেটা ভবিষ্যৎ বলবে।’
সভা শেষে এক সাংবাদিক সম্মেলনে সংখ্যালঘুদের প্রসঙ্গে মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘সংখ্যালঘুদের নিয়ে বর্তমান রাজ্য সরকার ভালো কাজ করছে, কাজ চলছে, আরো ভালো কাজ আমরা চাই।’
আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলকে সমর্থনের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘দেখুন সমর্থনের প্রশ্ন পরে, আমাদের সঙ্গে তাদের একটা বোঝাপড়ার জায়গা তৈরি হবে। গতকালও মুখ্যমন্ত্রী আমাকে টেলিফোন করে নতুন বছরের শুভেচ্ছা দিয়ে বলেছেন, আপনারা ভালো থাকুন, কাজ করুন, আপনাদের সঙ্গে আমাদের দেখা হবে। একটা ভালো জায়গা তৈরি হবে বলে আমরা মনে করছি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে সমঝোতা, রফা বা আসন বিনিময় সবকিছু হতে পারে, সেটা মুখ্যমন্ত্রী নিজের হাতে রেখেছেন। উনি চাচ্ছেন সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী বা তাদের যারা আছেন তাদের সঙ্গে নিজের মতো করে কথা বলে একটা পথ বিবেচনা করবেন- আমরা সেই আস্থা, আশা, ভরসা রেখেছি। তবে আমরা মনে করি বাংলায় তৃণমূলের বিকল্প কোনো দল নেই।’
সিপিআই(এম)-এর সঙ্গে জোট প্রসঙ্গ উড়িয়ে দিয়ে মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘ওরা দেওয়ালে লেখে ‘কালমার্কস সর্বশক্তিমান, ইহা সত্য’, মুসলমানরা আল্লাহকে মেনে চলে, তারা কালমার্কসকে সর্বশক্তিমান বলে কখনোই মানবে না। তাছাড়া ওরা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়, সইফুদ্দিন চৌধুরীর মতো ব্যক্তিদের দল থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে, ওরা জ্যোতি বসুকে প্রধানমন্ত্রী করতে দেয়নি। এরকম দল তারা বাংলার কী করবেন, আমার জানা নেই।’
মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী যে নিজের মূল ভিত্তিকে আরো মজবুত করতে চাচ্ছেন তা স্পষ্ট হয়েছে। তিনি এখন থেকেই রাজ্যজুড়ে জমিয়তের সদস্য হওয়ার জন্য ২০ লাখ টার্গেট বেঁধে দিয়েছেন নেতা-কর্মীদের।
৩১ ডিসেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই
�