আন্তর্জাতিক ডেস্ক : চীনের জিনজিয়াংয়ের অবস্থা বাংলাদেশের মতো হতে চলেছে। সেখানকার (জিনজিয়াং) জনগণ চাইনিজ কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি) নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার শ'ঙ্কায় রয়েছে। আর এমনটা হলে সেখানে গণতান্ত্রিক সাম্যাবস্থা জনমনের আকুল আকাঙ্ক্ষার বিষয় হয়েই বিরাজ করবে। 'দ্য কূটনীতি'র এক কলামে চীনের অধিকারকর্মী লিলি হার্ডিং এসব কথা বলেন।
মূলত চীনের উইঘুর মুসলমান অধ্যুষিত জিনজিয়াংয়ের প্রতি চীনের আচরণ বোঝাতে তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযু'দ্ধ এবং সেই সময় এদেশের জনগণের ওপর পাকিস্তানের আ'গ্রাসন ও হ'ত্যাযজ্ঞের প্রসঙ্গ টানেন। মতামত কলামে হার্ডিং লিখেছেন, জিনজিয়াং পূর্ব তুর্কিস্তান নামেও পরিচিতি। শাংহাইয়ের এই শহরটি কেবল চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া এখানকার মানুষের কোনো মূল্য নেই তার সরকারের কাছে।
তিনি আরও বলেন, জিনজিয়াংয়ের ভূখণ্ড এবং মানুষের প্রতি চীনের দৃ'ষ্টিভ'ঙ্গী সত্যিকার কলোনিয়ালিস্টদের মতো। কেবল অর্থনৈতিক বিবেচনায় তাদের দেখা হয়। উইঘুর মুসলমানদের মধ্যে যারা সম্পদশালী চীন সরকার তাদের ধ'রে শিবিরে পুরছে। তারপর তাদের সম্পদ ও ব্যাংকে থাকা অর্থ কু'ক্ষিগত করছে। এমনকি আরও পয়সা কামাতে তাদের শরীরটাকেও ছাড় দিচ্ছে না।
তাদের পা'চার করছে, তাদের চুল আমেরিকানদের কাছে বিক্রি করছে এবং দেহে প্রত্যঙ্গগুলো বিকিয়ে দিচ্ছে ধনী সৌদ আর এর খোঁ'জে আসা পর্যটকদের কাছে। পূর্ব তুর্কিস্তান আরেকটি বাংলাদেশের মতোই হতে চলেছে। এখানকার জনগণ সিসিপি'র নিয়'ন্ত্রণের শ'ঙ্কায় দিন কা'টায় এবং গণতান্ত্রিক সাম্যাবস্থা যেখানে স্বপ্ন হয়েই থাকবে। এটা অবশ্য চীনের চেয়ে আরো ভালো এক প্রতিবেশী দেবে ভারতকে, যোগ করেন তিনি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, হার্ডিং ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযু'দ্ধের প্রসঙ্গ টেনে এসব মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, বাঙালি জনগণের ওপর পাকিস্তানি বাহিনী বর্বর গণহ'ত্যা চালায়। মধ্য এশিয়ার টার্কিক ভাষাভাষি সংখ্যালঘু মুসলমানরা হলো উইঘুর। এরা হান চাইনিজদের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক নৃ-গোষ্ঠী। জিনজিয়াংয়ের রাজধানী উরুমচি (সংক্ষিপ্ত আকারে উশি বলা হয়) বেইজিং অপেক্ষা কাবুলের বেশি নিকটবর্তী। ২০০৯ সালে ইতিহাসের কুখ্যা'ত রা'য়ট ছড়িয়ে পড়ে উরুমচির রাস্তায় রাস্তায়।
সেখানে হান চাইনিজদের বিরু'দ্ধে উইঘুর মুসলমানরা রু'খে দাঁড়ায়। উরুমচি রায়টের পর চীনের সিসিপি সরকার ওই গোটা অঞ্চলকে খোলা আকাশের নিচে এক জেলখানায় পরিণত করেছে। লিলি বলতে থাকেন, আমি উরুমচিতে বাস করতাম। সেখানে প্রক্যেকটি পরিবারের কেউ না কেউ নিখোঁ'জ বা গু'ম হয়ে গেছেন। যাদের পরিবার উরুমচিতে ছিল না, তাদের অন্তত অর্ধেক প্রাপ্তবয়স্ক সদস্য নিখোঁ'জ ছিলেন। শহরের প্রতিটা জায়গায় পুলিশের বিচ'রণ। মানুষ ভী'তসন্ত্র'স্ত।
পুলিশ মানুষের মোবাইল ফোন নিয়ে ঘাঁ'টাঘাঁ'টি করতো। কারো ফোনে যদি ধর্মীয় বা বিদেশি অ্যাপ বা ভিপিএন অথবা এমন কিছু পেতো যা তাদের পছন্দের নয়, তবে পুলিশ এক বা দুই সপ্তাহ পর তাদের বাড়িতে যেতো। আর এর পরই ওই বাড়ির কেউ না কেউ নিখোঁ'জ হতেন। কোথাও লুকা'নোর কোনো জায়গা নেই। যত রকম প্রযুক্তিগত সুবিধা তাদের কাছে রয়েছে তার সবই ব্যবহার করা হতো। চীন মানুষের ফোনের জিপিএস ব্যবহার করতো তাদের ন'জ'রদারিতে রাখতে।
ফোনের সব ধ'রনের অ্যাপের কার্যক্রমে চোখ রাখতো। মানুষের তথ্য সংগ্রহের কাজে হাজার হাজার কর্মী পোষে চীন সরকার। হার্ডিং তার এক বন্ধুর প্রসঙ্গও তোলেন, যিনি ২০১৮ সালে নিখোঁ'জ হয়েছিলেন। বন্ধুর সম্পর্কে বলেন, সে ছিল উইঘুর, তবে সবার কাছে সে নিজেকে খ্রিস্টান বলতো। ওই বছরের পর থেকে আমি তার কোনো খোঁ'জ পাইনি। তবে সে ছাড়া পেয়েছে খবর পেয়েছি। আমার ধা'রণা বন্ধুটিকে এখন জো'রপূর্বক শ্রমিক বানিয়ে দেয়া হয়েছে।
হার্ডিং তাদের স্বা'য়ত্ত্বশা'সন, মানবাধিকার, সমতা এবং স্বাধীনতা অর্জনের সং'গ্রা'মকে স্বীকৃতি দিতে গোটা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। সেইসাথে পূর্ব তুর্কিস্তানের নির্বাসিত সরকারকে কূ'টনৈ'তিকভাবে সমর্থন জানানোর মাধ্যমে সেখানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সহায়তা প্রদানের আহ্বান জানান। বলেন, পূর্ব তুর্কিস্তানের মানুষ শান্তিতে জীবন কা'টানোর স্বপ্ন দেখে। কিন্তু চীনের অর্থনীতির প্রলো'ভনে এই বিশ্ব তাদের (পূর্ব তুর্কিস্তান) থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। একটু ভালো ভবিষ্যত গড়ে দিতে তাদের প্রতি আমাদের সাহায্যের হাত বাড়ানো উচিত। সূত্র : দ্য কূটনীতি।