রবিবার, ২৬ জুলাই, ২০২০, ১১:৫৯:২৩

'মনের জোর থাকলেই করোনার অর্ধেক যু'দ্ধ জেতা হয়ে যাবে'

'মনের জোর থাকলেই করোনার অর্ধেক যু'দ্ধ জেতা হয়ে যাবে'

সুনীতা কোলে : ''কখনও না কখনও যে এই দিনটা আসবে, সেটা জানতাম। তাই যা যা করা দরকার, শান্ত ভাবেই করেছি। বাড়ির সবাইকেও উ'দ্বি'গ্ন হতে বা'রণ করে দিয়েছিলাম।'' করোনায় আক্রা'ন্ত হওয়া প্রসঙ্গে কথাগুলো বলছিলেন অনুপ্রিয়া বসু ঘোষ। জুনের শেষের দিকে করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজ়ি'টিভ এসেছিল তার। হাসপাতালেও ভর্তি হতে হয়। 

সুস্থ হওয়ার পরে গত সপ্তাহে ফের কাজে যোগ দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলা হাসপাতালের স্টাফ নার্স অনুপ্রিয়া। তিনি জানান, বছরের শুরুতে যখন করোনা সং'ক্র'মণ অন্য দেশে ছড়িয়েছিল, তখনও অনেকে বুঝতে পারেননি ভারতে কী হতে চলেছে। তবে ছবিটা পরিষ্কার হয়ে যায় লকডাউনের শুরুতেই। একটা অন্য রকম, কঠিন পরি'স্থিতির মুখো'মুখি যে তারা হতে চলেছেন, সেটা তখনই আন্দাজ করেছিলেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। 

অনুপ্রিয়া বলেন, ''আগে এমন পরি'স্থিতির মুখো'মুখি হইনি ঠিকই, তবে ভয়ও পাইনি। এই পেশায় এলে দায়বদ্ধতা অনেক বেশি হয়। আমরা জানি, যেমনই অবস্থা হোক না কেন, পরিষেবা দেওয়াটা আমাদের কাজ।'' সাধারণত হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে ডিউটি থাকলেও করোনা মোকাবিলায় আইসোলেশন ওয়ার্ডেও কাজ করেছেন অনুপ্রিয়া। জুন মাসের ২০ তারিখে জ্বর আসে তার। পরের দিনও জ্বর থাকায় করোনা পরীক্ষা করান। 

রিপোর্ট পজ়ি'টিভ এলে স্বাস্থ্য ভবনের মাধ্যমে তাকে বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। অনুপ্রিয়া জানাচ্ছেন, গন্ধ ও স্বাদের অনুভূতি চলে গেলেও অন্য উপসর্গ খুব বেশি ছিল না, তাই সপ্তাহখানেক পরেই ছেড়ে দেওয়া হয় তাকে। কিছু দিন বাড়িতে আইসোলেশনে থাকার পরে ফের পরীক্ষার রিপো'র্ট নেগে'টিভ এলে ১৬ জুলাই কাজে যোগ দেন। এই পুরো সময়টায় হাওড়া জেলা হাসপাতালের সুপার ও সহকর্মীরা তার পাশে থেকেছেন বলে জানাচ্ছেন অনুপ্রিয়া।

এ রাজ্যে সং'ক্র'মণ ছড়ানোর শুরুর দিকে হাওড়ায় প্রথম যে করোনা আক্রা'ন্তের খোঁ'জ মিলেছিল, তিনি ছিলেন অনুপ্রিয়ার পাশের বাড়ির বাসিন্দা এবং তারই স্কুলের এক সহপাঠিনীর মা। ওই প্রৌঢ়ার মৃত্যুর পরে এলাকায় আত'ঙ্ক ছড়িয়ে পড়লেও ব'ন্ধ হয়নি যখন-তখন বাইরে বেরোনো বা পাড়ার আড্ডা। বাসস্থান কন্টেনমেন্ট জ়োনে। আবার নিজে প্রথম সারির করোনা যো'দ্ধা।

শুরু থেকেই তাই বেশ কিছু সাবধানতা অবলম্বন করেছেন অনুপ্রিয়া। বাড়িতে বা শ্বশুরবাড়িতে সম্পূর্ণ আলাদা ঘরে একা থাকছেন। তিনি বলেন, 'ছ'বছরের মেয়ে রয়েছে। শাশুড়ি অসুস্থ। খুব মন খা'রা'প করলেও আলাদাই থাকছি। ওদের সুস্থ রাখাটাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মেয়ের অনলাইন ক্লাস চলছে। ও বাবার কাছে আপাতত পড়াশোনা করছে।''

সকলের জন্য অনুপ্রিয়ার পরামর্শ, ''ভ'য় পাবেন না। সরকারি নির্দে'শিকা মেনে চলুন। উপ'সর্গ থাকলে দ্রুত পরীক্ষা করান। লোকে কী বলবে, তা ভেবে সময় ন'ষ্ট করবেন না। সং'ক্র'মণ নিয়ে বসে থাকলে নিজেরই ক্ষ'তি। বাড়ির লোকও সং'ক্র'মিত হতে পারেন।'' সাধারণ মানুষের মধ্যে এই নিয়ে কিছু বিভ্রা'ন্তি রয়েছে। তাই কেউ আক্রা'ন্ত হলে চিকিৎসা পরিষেবা পেতে তার কী করা উচিত, তা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে আরও প্রচার দরকার বলে মনে করেন তিনি। অনুপ্রিয়ার আরও পরামর্শ, ''পরি'স্থিতি কঠিন ঠিকই, কিন্তু মনের জো'রই আসল অ'স্ত্র। মনের জো'র থাকলেই কিন্তু অর্ধেক যু'দ্ধ জেতা হয়ে যাবে।'' - আনন্দবাজার

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে