মঙ্গলবার, ২৮ জুলাই, ২০২০, ১২:৫৫:৫৫

এক হ'ত্যাকা'ণ্ডে দুই মেধাবীকে হারালো পৃথিবী

এক হ'ত্যাকা'ণ্ডে দুই মেধাবীকে হারালো পৃথিবী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : নিউ ইয়র্কে খু'ন হওয়া বাংলাদেশি প্রযুক্তিবিদ ফাহিম সালেহকে নিয়ে বিশেষ প্রতিবে'দন ছে'পেছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রযুক্তি জগতে খুব একটা পরিচিত ছিলেন না বাংলাদেশের রাইড শেয়ারিং পাঠাও-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা ফাহিম সালেহ। কিন্তু তাকে হ'ত্যার ঘ'টনায় বে'দনায় নীলে ভ'রে গেছে বাংলাদেশ, নাইজেরিয়া ও কলম্বিয়া। মূলত এসব দেশে ফাহিম সালেহর বিনিয়োগ দেখিয়েছে উদ্ভা'বনী পথ। সৃষ্টি করেছে হাজার হাজার মানুষের কর্মসং'স্থান।

কিন্তু নিউ ইয়র্কে নিজের বিলাসবহুল এপার্টমেন্টে তাকে হ'ত্যা করে তারই সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী টাইরেস হ্যাসপিল। ফাহিম সালেহ নাইজেরিয়াতে রাইড শেয়ারিং গোকাদা’র নির্বাহী। এ ছাড়া চমৎকার একজন উদ্যোমী ব্যক্তি ছিলেন তিনি।

তিনি ও তার খু'নি দু’জনেই মেধাবী। দু’জনেই অল্প বয়সে মেধার পরিচয় দিয়েছেন। তাদের ভিতরে থাকা উদ্যোক্তা শক্তির প্র'কাশ ঘ'টিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত ‘এ ইয়াং সিইও, অ্যান এক্স-এসিসট্যান্ট এন্ড এ গ্রিসলি মার্ডার’ শীর্ষক প্রতিবে'দনে এসব কথা বলা হয়েছে।

ওই প্রতিবে'দনে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালে ঢাকায় একটি অফিসের জন্য স্থান খুঁ'জছিলেন ফাহিম সালেহ। এ সময় রাস্তার একটি তৃ'ষ্ণা'র্ত শিশু তার দিকে এ'গিয়ে যায়। এতে সালেহ এতটাই আবে'গতা'ড়িত হয়েছিলেন যে, তিনি যত বোতল সম্ভব পানি কিনে তাতে সো'ডা মি'শ্রিত করে বি'লি করেছেন রাস্তায় মানুষের মাঝে।তিনি তরুণদের কাজের সুযোগ দিতেন। মেধার স্বাক্ষর রাখতে পারেননি এমন তরুণদের পথ দেখাতেন। নাইজেরিয়া ও কলম্বিয়ার মতো দেশের উদীয়মান বাজারে তাদেরকে পথ দেখিয়েছেন ফাহিম।

এ মাসের শুরুর দিকে নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনে নিজের এপার্টমেন্টে ৩৩ বছর বয়সী ফাহিম সালেহকে নৃ'শং'সভাবে কু'পি'য়ে হ'ত্যা করে তারই সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী টাইরেস হ্যাসপিল। ফাহিম সালেহ ছিলেন নাইজেরিয়ায় রাইড শেয়ারিং গোকাদা’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। তাকে হ'ত্যার জন্য হ্যাসপিলকে অভি'যু'ক্ত করা হয়েছে। নিউ ইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের গো'য়েন্দারা বলেছেন, ফাহিম সালেহর ব্যাংক একাউন্ট থেকে প্রায় ৯০ হাজার ডলার আ'ত্মসা'ৎ করেছে হ্যাসপিল। এ ঘ'টনাকে কেন্দ্র করেই ফাহিম সালেহকে হ'ত্যা করা হয়েছে। ফাহিম সালেহ আ'ত্মসা'তের ঘ'টনা ধ'রতে পারায় তিনি হ্যাসপিলকে পুলিশে না দিয়ে, তাকে অর্থ পরিশোধের সুযোগ দিয়েছিলেন। এই মানবতা দেখানোর পরেও ফাহিম সালেহকে হ'ত্যা করেছে হ্যাসপিল।

হ্যাসপিলের আইনজীবীরা তাদের ম'ক্কেলকে নি'র্দো'ষ দা'বি করেছেন। তারা বলেছেন, পুলিশ যে কথা বলে তাকে গ্রে'প্তার করেছে, তার বিরু'দ্ধে ডিস্ট্রিক্ট এটর্নি যে অভি'যোগ গঠন করেছে সেখানে আরো অনেক কিছু বলার আছে। এ বিষয়ে ফাহিম সালেহর পরিবার ম'ন্তব্য করতে রা'জি হয়নি।

গোকাদা’র এক মুখ'পাত্র বলেছেন, গোকাদা’র কোনো কর্মচারী বা এর সঙ্গে কোনোভাবেই জ'ড়িত ছিলেন না হ্যাসপিল। এখনো ফাহিম সালেহ ও তার খু'নি হ্যাসপিলের বন্ধুরা তাদের মধ্যকার সম্পর্ক কি ছিল তা বোঝার চেষ্টা করছেন। ফাহিম সালেহর কিছু বন্ধু ও সহকর্মী বলেছেন, হ'ত্যাকা'ণ্ডের আগে কখনো তারা হ্যাসপিলের নাম শোনেননি। আবার হ্যাসপিল সম্পর্কে যারা অব'গত তারা তাকে সালেহর জীবনে একজন ‘পে'রিফে'রাল পা'র'সন’ হিসেবে আ'খ্যা'য়িত করেছেন।

তবে একটি বিষয় খুব স্প'ষ্ট। ফাহিম সালেহ ও টাইরেস হ্যাসপিল দু’জনেই ভিন্ন ব্যাকগ্রা'উন্ড থেকে এসেছেন। কিন্তু দু’জনেই অল্প বয়সে মেধা প্রদর্শন করেছেন। উদ্যোক্তা শ'ক্তি প্রদ'র্শন করেছেন। ফাহিম সালেহর জন্ম সৌদি আরবে। তার পিতামাতা বাংলাদেশি। কিন্তু তিনি বড় হয়েছেন নিউ ইয়র্কের পোকিপসি এলাকায়। যখন তিনি হাইস্কুলে পড়াশোনা করেন এবং বেন্টলি ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার সায়েন্স ডিগ্রি নিয়ে পড়াশোনা করছিলেন, তখনই তিনি ওয়েবসাইট বানিয়ে তা বিক্রি করে হাজার হাজার ডলার কা'মিয়েছেন। তার বড় সফলতার প্রথমটি হলো প্রা'ঙ্কডা'য়াল ডট কম। এটি টেলিফোন প্রা'ঙ্কক'লিং সা'র্ভিস। কয়েক বছর আগে একটি লেখায় ফাহিম সালেহ বলেছিলেন, এ থেকে তিনি এক কোটি ডলার আয় করেছেন। ওয়েব ডিজাইন দ'ক্ষ'তা ব্যবহার করে তিনি ফিউচার বিজনেস লি'ডারস অব আমেরিকা প্রতিযো'গিতায় প্রথম হন।

অন্যদিকে হ্যাসপিল তার টিনেজ বয়সটা কা'টিয়েছেন ফ'স্টার পরিবারে। নিউ ইয়র্কের ভ্যালি স্ট্রিমে হাইস্কুলে পড়াকালীন তিনি নিজে পিনাট বাটার তৈরি করে তা বিক্রি করতেন। তিনিও একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করেছেন। এর নাম রে'ন্ট এ ব্রাদার। সেখানে তিনি দিনের বেলা কাজ করতেন। তার বন্ধু ক্লাউডি প্যারোলা বলেছেন, হ্যাসপিলও উদার ছিলেন। নিজের পকেটের অর্থ দিয়ে তিনি মানুষকে খাওয়াতেন। বন্ধুদের তিনি বিভিন্ন রকম জিনিস উপহার দিতেন। প্যারোলা বলেন, হ্যাসপিল কখনো অর্থ নিয়ে কোনো অভি'যোগ করেনি।

২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের এপ্রিলের মধ্যে দু’বার এই ব্যাংক একাউন্ট আ'নল'ক করতে সহায়তা করেছিলেন হ্যাসপিল। তবে তাকে ফাহিম সালেহ কখন সহকর্মী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল তা তার বন্ধু বা সহকর্মীদের কেউই বলতে পারছেন না। তবে ফাহিম সালেহকে হ'ত্যার মধ্য দিয়ে পৃথিবী হা'রালো দুজন মেধাবীকে তা অনেকটাই নিশ্চি'ত।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে