বিরল রোগে আক্রান্ত ঢাকার রাতুলকে নিয়ে ব্যস্ত কলকাতার চিকিৎসকরা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার কিশোরী রাতুল তালুকদার। গত বছরের জুলাই মাসে তার চোখে নতুন এক সমস্যা দেখা দেয়। সামান্য কাঁদলেই দু’চোখের কোল বেয়ে পানির পরিবর্তে রক্ত-অশ্রু ঝরতে শুরু করে। ঢাকা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েও কোন অগ্রগতি না পাওয়ায় চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। কলকাতার ‘ইনস্টিটিউট অব সাইকিয়াট্রি’ নেয়া হলে ধরা পড়ে এটি একধরণের বিরল রোগ। এখনো তার চিকিৎসাতেই আপাতত ব্যস্ত চিকিৎসকেরা।
রাতুল তালুকদারের কাছে রয়েছেন তার বাবা কমলেশ তালুকদার ও মা মুক্তি ১৪ সেপ্টেম্বর তাকে নিয়ে আসেন কলকাতার আইওপি-তে। মাঝে স্কুলের পরীক্ষার জন্য ঢাকায় আসে রাতুল। গত ২৪ ডিসেম্বর আবার কলকাতায় ফেরে সে।
ইনস্টিটিউট অব সাইকিয়াট্রির কর্মকর্তা প্রদীপ সাহা জানান, নভেম্বরে স্কুলের পরীক্ষার সময়ে গাল, জিভ, ঠোঁট দিয়েও রক্ত বের হতো রাতুলের। যখনই তার মানসিক চাপ বাড়ে, তখন রক্ত পড়া শুরু হয়। তিনি আরও জানান, একে ‘ডিস-অ্যাসোসিয়েটিভ ডিসর্ডার’ বলে। অত্যধিক মানসিক চাপে রক্তজালিকা ফেটে রক্ত বেরিয়ে আসে। চিকিৎসার ইতিহাসে এমন রোগ অত্যন্ত বিরল।
প্রদীপবাবু জানান, তাঁর চিকিৎসক জীবনে এ রকম দু’টি কেস পেয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এর ওষুধ মূলত অ্যান্টি-অ্যাংজাইটি ও অ্যান্টি-ডিপ্রেশনের ওষুধ এবং কিছুটা কাউন্সেলিং। এটা করেই রাতুলের রক্ত পড়া অনেক কমেছে।’’
রক্ত-অশ্রু ঝরাকে চিকিৎসাশাস্ত্রে অনেকে ‘হিমোল্যাক্রিয়া’ বলেন। চিকিৎসার ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, কখনও মাত্রাতিরিক্ত দুশ্চিন্তা বা উদ্বেগ, কখনও ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ বা আঘাত এর কারণ। চক্ষু বিশেষজ্ঞ সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলছেন, চোখের কানেক্টিভ টিস্যু ডিসর্ডার, থ্রম্বোসিস বা কোয়াবুলেশন প্রক্রিয়ার গোলমালে তা হতে পারে। শুধু টেনশনে চোখের রক্তজালিকা ছিঁড়ে যাওয়াটা বিশ্বাসযোগ্য লাগছে না।
যদিও ‘রিজিওন্যাল ইনস্টিটিউট অব অপথ্যালমোলজি’-র চিকিৎসক হিমাদ্রি দত্তের কথায়, ‘‘মূলত প্রচণ্ড মানসিক উদ্বেগই এর কারণ। আমার কাছে এ রকম তিনটি কেস এসেছিল। একটি নদিয়ার কিশোরী, একটি সল্টলেকের কিশোরী, আরেকটি বাঁশদ্রোণীর কিশোর। তিন জনকেই উদ্বেগ কমানোর ওষুধ দিয়ে রোগ সারানো গিয়েছে।’’
আইওপি-তে যে মনোবিদ রাতুলের চিকিৎসক প্রশান্ত রায় জানান, ‘মাঞ্চুনসেন সিনড্রোম’ নামে এক ধরনের মানসিক সমস্যা রয়েছে। যেখানে রোগী নিজেই দেহে আঘাত করে নিজেকে অসুস্থ প্রতিপন্ন করতে চান। কিন্তু তাঁরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, রাতুলের ক্ষেত্রে সে রকম কিছু ঘটেনি। এ ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে, তাকে তিনি ‘হেমাটো হাইড্রোসিস’ বলছেন। অর্থাৎ, অতিরিক্ত মানসিক চিন্তায় দেহের বিভিন্ন দুর্বল স্থানের রক্তজালিকা ফেটে গিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসা। তিনি আশাবাদী, চিকিৎসায় পুরোপুরি সেরে যাবে রাতুল।
আর রাতুল মুচকি হেসে বলেছে, সেরে গেলেই ভাল। হঠাৎ হঠাৎ গাল দিয়ে রক্ত, কাঁদলে রক্ত দেখলে নিজেরই বিরক্ত লাগে। বন্ধুরা ভয় পেয়ে যায়।’
০১ জানুয়ারি ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএস
�