আন্তর্জাতিক ডেস্ক : থাইল্যান্ডের রাজা তার রাজকীয় সঙ্গীর উপাধি কে'ড়ে নেওয়ার প্রায় এক বছর পর তাকে আবার ওই পদে পুনর্ব'হাল করেছেন। রাজা মাহা ভাজিরালংকর্ন বুধবার সিনিনাত ওংভাজিরাপাকদিকে তার পদবী ও উপাধি ফিরিয়ে দিয়েছেন বলে রয়াল গেজেটে ঘোষণা করা হয়েছে।
থাইল্যান্ডের প্রথা অনুসারে রাজা তার ইচ্ছে অনুযায়ী স্ত্রীর বাইরে কাউকে রাজকীয় সঙ্গী বা কনসোর্ট উপাধি দিতে পারেন। এই কনসোর্ট মূলত রাজার একজন সঙ্গিনী বা পার্টনার। রাজা ভাজিরালংকর্নের সঙ্গিনী হিসেবে নাম ঘোষণার মাত্র কয়েক মাস পরেই গত বছরের অক্টোবরে সিনিনাতের কনসোর্ট পদবী বা'তিল করা হয়েছিল।
সে সময় রাজ পরিবার থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছিল যে রাজার সঙ্গিনী সিনিনাত নিজেকে "রানীর সমকক্ষ" হিসেবে তুলনা করায় তাকে এই শা'স্তি দেওয়া হয়েছে। তখন এই ঘ'টনায় অনেকেই বি'স্মি'ত হয়েছিল।
এক শতাব্দী পর রাজারসঙ্গিনী : গত এক শতাব্দীর ইতিহাসে সিনিনাতকে এই প্রথম রাজার সঙ্গিনী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। যদিও থাই রাজারা কয়েক শতাব্দী ধ'রে বহু বিবাহ বা একাধিক সঙ্গিনী গ্রহণ করে আসছেন। সবশেষ ১৯২০ সালে একজন থাই রাজা আনুষ্ঠানিকভাবে একজন সঙ্গিনী গ্রহণ করেছিলেন।
১৯৩২ সালে দেশটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্রে পরিণত হওয়ার পর থেকে কোন রাজা আর এমন সঙ্গিনী গ্রহণ করেননি। কনসোর্ট পদবী কে'ড়ে নিতে গিয়ে সিনিনাতের বি'রু'দ্ধে রাজ পরিবারের সাথে খা'রাপ আচরণ ও বিশ্বা'সঘা'তকতার অ'ভিযো'গ আনা হয়।
কেন মর্যাদা কে'ড়ে নেওয়া হয় : গত বছর প্রাসাদ থেকে যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল তাতে সিনিনাতের বি'রু'দ্ধে আরো অ'ভিযো'গ এনে বলা হয়েছিল যে তিনি রাজ পরিবারের বি'রু'দ্ধে "অস'দাচ'রণ" করেছেন এবং "অবা'ধ্য" হয়েছেন। সেই সাথে তিনি নিজের ক্ষ'মতার অ'পব্য'বহার করে রাজার পক্ষ থেকে হুকুম দিতে শুরু করেছে।
এতে বলা হয়: রাজা জানতে পেরেছেন যে, "তাকে যে উপাধি দেয়া হয়েছিল তিনি তার জন্য কৃতজ্ঞ ছিল না এবং তার মর্যাদা অনুযায়ী তিনি আচ'রণ করেননি।" এই ঘ'টনার পর থেকে সিনিনাতকে আর জনসমক্ষে দেখা যায় নি। এতো দিন তিনি কোথায় ও কীভাবে ছিলেন সে বিষয়েও নিশ্চিত করে কিছু জানা যায় নি।
এখন রাজার সর্বশেষ সিদ্ধান্তের অর্থ হচ্ছে "সিনিনাত ওংভাজিরাপাকদির পদবী খো'য়া যায়নি," বলা হয়েছে রয়াল গেজেটের ঘোষণায়। "সেকারণে তার সাম'রিক পদ ও রাজকীয় পদবী কখনো বা'তিল হয়নি বলে বিবেচিত হবে।"
কে এই সিনিনাত : সিনিনাতের জন্ম ১৯৮৫ সালে, থাইল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলে। ভাজিরালংকর্ন যখন যুবরাজ ছিলেন তখন এই নারীর সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর আগে সিনিনাত একজন নার্স হিসেবে কাজ করতেন। পরে তিনি হন একজন দেহর'ক্ষী, পাইলট এবং পরে তিনি রাজ পরিবারের রয়াল গার্ড বাহি'নীতে যোগ দান করেন। ২০১৯ সালে তাকে মেজর জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়।
ওই বছরের জুলাই মাসে তাকে রয়াল নোবেল কনসার্ট উপাধি দেওয়া হয়। নতুন সঙ্গী হিসেবে অভি'ষিক্ত হওয়ার কয়েকদিন পর একটি ওয়েবসাইটে সিনিনাতের কিছু ছবি প্রকাশ করা হলে সেসব ছবি দেখতে লোকজন ভিড় করলে সেটি ক্র্যা'শ করেছিল। অ'প্র'স্তুত অবস্থায় তোলা এসব ছবিতে ৩৪ বছর বয়সী সিনিনাতকে দেখা গেছে যু'দ্ধবিমান চালাতে, সামরিক কুচকাওয়াজে এবং যু'দ্ধের পোশাকে।
এর মাত্র কিছুদিন আগে রাজা ভাজিরালংকর্ন তার চতুর্থ স্ত্রী রানী সুথিদাকে বিয়ে করেন। রানী হওয়ার আগে সুথিদা ছিলেন রাজা ভাজিরালংকর্নের ব্যক্তিগত দেহর'ক্ষী এবং দেহর'ক্ষী বাহিনীর উপ-প্রধান। কিন্তু এর মাত্র কয়েক মাস পর অক্টোবরে সিনিনাতের পদ ও পদবী বা'তিল করা হয়। তার এই আক'স্মিক প'তনের কারণ সম্পর্কে সেসময় চারদিকে নানা ধ'রনের গু'জব ছড়িয়ে পড়েছিল।
পদ ও পদবী কে'ড়ে নেওয়া এবং সেসব আবার ফিরিয়ে দেওয়ার পেছনে প্রকৃত যেসব কারণ সেগুলো হয়তো রাজ পরিবার থেকে কখনোই প্রকা'শ করা হবে না। কেন কে'ড়ে নেওয়া হয়েছিল সে বিষয়ে রাজ পরিবার থেকে কিছুটা ইংগিত দেওয়া হলেও পদবী ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে এখনও কোন মন্তব্য করা হয়নি।
থাইল্যান্ডের প্রচলিত আইনে রাজ পরিবারের বিষয় গো'পন করে রাখার অধিকার দেওয়া হয়েছে। দেশটিতে রাজ পরিবারের যে কোন ধ'রনের স'মালো'চনাও নি'ষি'দ্ধ। এই আইন ভ'ঙ্গ করলে আইনে ক'ঠো'র সা'জার বিধান রাখা হয়েছে।
রাজার দুই স্ত্রীর পরিণতি : সিনিনাতের অ'পসা'রণের ঘটনা থাই জনগণকে রাজার সাবেক দুই স্ত্রীর ভাগ্যের কথা মনে করিয়ে দিয়েছিল। রাজা ভাজিরালংকর্ণ ১৯৯৬ সালে তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে পরিত্যা'গ করলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যান। এমনকি এই রানীর ঘরে রাজার যে চার পুত্র ছিল তাদেরকেও তিনি ত্যা'গ করেন।
এর পরে ২০১৪ সালে রাজা তার তৃতীয় স্ত্রী স্রিরাসমি সোয়াদির সকল পদবী কে'ড়ে নেন। রাজ দরবারেও তাকে নি'ষি'দ্ধ করা হয়। গ্রে'ফতার করা হয় তার পিতা-মাতাকেও। তাদের এক পুত্রসন্তান, সেসময় যার বয়স ছিল ১৫, রাজা ভাজিরালংকর্ণ জার্মানি ও সুইজারল্যান্ডে তাকে বড় করেছেন।
বেশিরভাগ সময় রাজা এখন জার্মানিতে থাকেন। তার মোট সন্তানের সংখ্যা সাত। রানী সুথিদা ছিলেন থাই এয়ারওয়েজের একজন বিমানবালা। রাজার বিয়ের আগে তাদেরকে বহু বছর ধ'রে একসঙ্গে জনসমক্ষে আসতে দেখা গেছে। কিন্তু তাদের মধ্যে সম্পর্কের কথা বিয়ের আগে কখনো স্বীকার করা হয়নি।
এমনকি তাদের বিয়ের পরেও রাজার সঙ্গী সিনিনাতকে রাজ পরিবারের অনুষ্ঠানগুলোতে নিয়মিত উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে। চতুর্থ স্ত্রী সুথিদাকে বিয়ে করার দু'মাস পর সিনিনাতকে রাজার সঙ্গী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। শতাব্দীর পর শতাব্দী কাল ধ'রে থাই রাজারা বহু স্ত্রী বা সঙ্গিনী গ্রহণ করেছেন। কিন্তু ১৯২০ সালের পর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কাউকে সঙ্গী বা কনসোর্ট হিসেবে গ্রহণ করার রীতি ব'ন্ধ ছিলো।
রাজতন্ত্র সংস্কারের দাবি : থাইল্যান্ডে সরকার-বিরো'ধী বি'ক্ষো'ভের মধ্যেই বুধবার রাজ প্রাসাদ থেকে সিনিনাতের পদবী ফিরিয়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হলো। ছয় বছর আগে ২০১৪ সালের এক অ'ভ্যু'ত্থানের পর থেকে সাম'রিক বাহি'নী দেশটির রাজনীতি নিয়'ন্ত্রণ করছে। সরকারবিরো'ধী প্রতিবা'দকারীরা রাজার ক্ষ'মতা খ'র্ব করার দাবি জানিয়ে আসছে। সম্প্রতি রাজার কিছু ক্ষ'মতা বাড়ানো হয়েছে।
পাশাপাশি থাইল্যান্ডে রাজতন্ত্রের সংস্কারেরও দাবি জানাচ্ছে প্রতিবা'দকারীরা যা দেশটির ইতিহাসে ন'জিরবি'হী'ন ঘ'টনা। রাজ পরিবারের সম্পদকে ব্যক্তিগত সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করার সিদ্ধান্তেরও চ্যা'লে'ঞ্জ জানাচ্ছেন বিক্ষো'ভকারীরা। এই ঘোষণার ফলে রাজা ভাজিরালংকর্ন থাইল্যান্ডের সবচেয়ে বি'ত্তশা'লী ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন। এর আগে এসব সম্পদ জনগণের কল্যাণের জন্য জাতীয় ট্রাস্ট্রের সম্পদ হিসেবে সংর'ক্ষিত ছিলো।
এছাড়াও রাজা ভাজিরালংকর্ন রাজধানী ব্যাংককের সব সাম'রিক ইউনিটের কমা'ন্ড গ্রহণ করার সিদ্ধান্তেরও স'মালো'চনা হচ্ছে। একে দেখা হচ্ছে থাইল্যান্ডের সাম'রিক শ'ক্তি রাজ পরিবারের হাতে রাখার কৌ'শল হিসেবে। ২০১৬ সালে পিতা পুমিপন আদুনইয়াদেতের মৃত্যুর পর রাজা ভাজিরালংকর্ন সিংহাসনে আরোহণ করেন। রাজা পুমিপন ৭০ বছর ধ'রে থাইল্যান্ডে রাজত্ব করেছেন। থাইল্যান্ডের ইতিহাসে তার এই শা'সনকাল দী'র্ঘতম। সূত্র : বিবিসি