আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কের প্রশ্নে মুসলিম বিশ্বে একটা নতুন মে'রুক'রণের ই'ঙ্গিত দেখা দিচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি আরব দেশ যেন ইসরায়েলের ব্যা'পারে তাদের বৈ'রী অবস্থান নম'নীয় করছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত এখন ইসরায়েলের সঙ্গে কূ'টনৈ'তিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়ে চু'ক্তি করতে যাচ্ছে। সৌদি আরবও অলিখিত একটা সম্পর্ক তৈরি করেছে, এমন কথা শোনা যায়।
ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সং'গ্রা'মে সব মুসলিম রাষ্ট্রই এখনো জো'রালো সমর্থন অব্যাহ'ত রেখেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও কিছু মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয় বিবেচনা করছে। সর্বশেষ সুদান থেকে এ রকম কথা শোনা গেছে। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েল-ফিলিস্তিন বিরো'ধে বাংলাদেশের অবস্থান একেবারে স্পষ্ট। ফিলিস্তিনিদের স্বতন্ত্র-স্বাধীন রাষ্ট্রের পক্ষে বাংলাদেশ বলি'ষ্ঠ অবস্থান নিয়েছে একেবারে শুরু থেকেই।
বাংলাদেশের এই অবস্থানে যে অদূর ভবিষ্যতেও কোনো পরিবর্তন আসবে, তেমন সম্ভাবনা একেবারেই দেখছেন না বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, এর কারণ যতটা না আন্তর্জাতিক, তার চেয়ে অনেক বেশি বাংলাদেশের জনমত এবং অভ্যন্তরীণ রাজনীতি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযু'দ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর শুরুর দিকে যে কয়েকটি দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব করেছিল, তার মধ্যে ছিল ইসরায়েল। ১৯৭২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ইসরায়েল বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব করেছিল।
তখন স্বাধীন বাংলাদেশে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকার লিখিতভাবে ইসরায়েলের স্বীকৃতি প্র'ত্যাখ্যা'ন করেছিল। সেই অবস্থানের পেছনে মূল বিষয় ছিল ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সং'গ্রা'মে সদ্যঃস্বাধীন বাংলাদেশের সমর্থন। ৫০ বছর পরও ইসরায়েল প্রশ্নে বাংলাদেশের সেই অবস্থানে কোনো পরিবর্তন আসেনি। গত পাঁচ দশকে বাংলাদেশের রাজনীতি যেদিকে গড়িয়েছে, সেখানে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কের প্রশ্নে পরি'স্থিতি এখন আরো বেশি প্রতিকূ'ল হয়ে উঠেছে বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা।
যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সাঈদ ইফতেখার আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশে অভ্য'ন্তরী'ণ রাজনীতির কারণে যেকোনো সরকারের জন্য ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির বিষয়টি ঝুঁ'কিপূ'র্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের অভ্য'ন্তরী'ণ রাজনীতিতে দুটি ধা'রা আছে। একটি ডা'ন এবং দক্ষিণপ'ন্থী ধা'রা, আরেকটি হচ্ছে বামপ'ন্থী ধা'রা- যেটি অপেক্ষাকৃত অনেক দু'র্ব'ল। দুটি ধা'রাই আসলে চায় না যে বাংলাদেশ ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈ'তিক সম্পর্ক স্থাপন করুক।
ডান এবং দক্ষিণপ'ন্থী যে ধা'রা, তারা চাচ্ছে না, যেহেতু ইসরায়েলে ৭০ শতাংশের বেশি ইহুদী জনগোষ্ঠী। সুতরাং এখানে একটি ধর্মভিত্তিক রাজনীতির জায়গা থেকে তারা ইসরায়েলের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈ'তিক সম্পর্ক চায় না। তিনি বলছেন, অন্যদিকে যারা বামপন্থী ধা'রা বা এর সঙ্গে যদি আমরা মধ্যপ'ন্থী ধা'রা ধরি, তাদের অবস্থানের পেছনে মূল কারণটা হচ্ছে রাজনৈতিক। আর এই রাজনৈতিক কারণটা হচ্ছে, প্যালেস্টাইনকে ইসরায়েলের স্বীকৃতি না দেওয়া এবং তারা মনে করছে, ইসরায়েল সেখানে অবৈ'ধভাবে প্যালেস্টাইনের ভূমি দ'খ'ল করে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে।
এর পাশাপাশি আরেকটি কারণ হচ্ছে, যেহেতু ইসরায়েল একটি ধর্মভি'ত্তিক রাষ্ট্র, ফলে বামপন্থীরা এবং যারা সেক্যুলার রাজনীতি করে বাংলাদেশে, তারাও চায় না যে এ ধ'রনের একটি রাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশ কোনো সম্পর্ক স্থাপন করুক। সমস্ত কিছু মিলে যে যেই রাজনৈতিক বৃত্তেই অবস্থান করুক না কেন, কোনো সরকারই বাংলাদেশে এই বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে ক্ষে'পিয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক স্থাপন করতে চায়নি। এ ধা'রা এখনো অব্যাহ'ত আছে।
ইসরায়েল ছাড়া যেকোনো দেশে যেতে পারে বাংলাদেশিরা : বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের বিশ্বের একটি দেশেই যাওয়া নিষে'ধ, সেটি ইসরায়েল। পাসপোর্টে সেটি স্পষ্ট করে লেখা আছে। সত্তরের শেষে এবং আশির দশকে বাংলাদেশের অনেক তরুণ ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য ইসরায়েলের বি'রু'দ্ধে যু'দ্ধেও গিয়েছিল। সে সময় ঢাকার রাস্তায় ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে ইসলামপ'ন্থী বিভিন্ন দল বা সংগঠনের মি'ছিল ছিল নিয়মিত ঘ'টনা। বাংলাদেশের মানুষের মাঝে ইসরায়েলবি'রো'ধী আবে'গ খুবই জো'রালো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন মনে করেন, বাংলাদেশে কখনো ঐকমত্য না হলে একক কোনো নেতৃত্ব ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক করতে চাইলে সেই নেতৃত্বকে বড় রাজনৈতিক মূল্য দিতে হতে পারে। আমাদের সবার একটা সেন্টিমেন্ট আছে প্যালেস্টাইনের প্রতি। সে জন্য আমি মনে করি, ইসরায়েলে সাথে কিছু করতে হলে একটা জাতীয় ঐকমত্য দরকার। আর কোনো একক নেতৃত্ব যখন এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেবে, সেটা কিন্তু সেই নেতৃত্বের জন্য দেশের অভ্যন্তরে খা'রাপ হতে পারে।
ইসরায়েল ইস্যুতে কেন একা'ট্টা আওয়ামী লীগ, বিএনপি : বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দো'লনের নেতৃত্ব দেওয়া দল আওয়ামী লীগ এখন সরকারে রয়েছে। এই সরকার এখনও ইসরায়েলের সাথে কূটনৈ'তিক সম্পর্ক গড়তে নারাজ। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, কোনো রাজনৈতিক ঝুঁ'কি বা সম'স্যা তাদের সরকারের বিবেচ্য বিষয় নয়। তাদের সরকার নৈতিকতার জায়গা থেকে ফিলিস্তিনি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রা'মের পক্ষে রয়েছে এবং থাকবে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।
বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই বা তার অব্যবহিত পরেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান খুব পরি'ষ্র'কভাবেই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে একথাটি বলেছেন যে, আমরা প্যালেস্টাইনের জনগণের পক্ষে আছি, আমরা একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে আছি। এই নীতিতে আমরা বিশ্বাস করি। সেই ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের সাথে ইসরায়েলের সম্পর্কবি'হী'ন যে পথ চলা, সেটা অব্যাহ'ত থাকবে।
আওয়ামী লীগের প্রতিদ্ব'ন্দ্বী আরেকটি বড় দল বিএনপি বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ শা'সন করেছে। এই দুই প্রধান দলের বাইরে রয়েছে অনেক ইসলামপন্থী দল, যারা বিভিন্ন ধা'রায় বিভ'ক্ত। তবে ইসরায়েল ইস্যুতে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, বিভিন্ন বামপ'ন্থী দল বা এই ইসলামপ'ন্থীদের অবস্থানে কোনো পার্থক্য নেই।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশের কোনো দলই ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক চাইবে না বলে তিনি মনে করেন। প্যালেস্টাইনকে নিয়ে বাংলাদেশের যে কমিটমেন্ট, সেটা হচ্ছে, প্যালেস্টাইনের যে মু'ক্তিযু'দ্ধ বা স্বাধী'নতা সং'গ্রা'ম, তাকে বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল সব সময়ই সমর্থন করে এসেছে। সেখানে ইসরায়েলের যে ভূমিকা ছিল, সেই ভূমিকাকে সব দলই সব সময় নি'ন্দা জানিয়েছে। এখানে কোনো দল বা কোনো সরকার আলাদা কোনো অবস্থান নেয়নি।
মুসলিম বিশ্বের অবস্থান পরিবর্তন : কিন্তু মুসলিম বিশ্বে ইসরায়েল ইস্যুতে অবস্থানের পরিবর্তন এখন দৃশ্যমান হচ্ছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত কয়েকদিন আগে ইসরায়েলের সাথে কূ'টনৈ'তিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছে এবং আগামী মঙ্গলবার তাদের একটি চু'ক্তি করারও কথা রয়েছে। সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ ইসরায়েলের সাথে গো'পন সম্পর্ক নিয়ে এগুচ্ছে। জর্ডান এবং মিশরের সাথে আগে থেকেই সম্পর্ক রয়েছে। সুদান সহ মুসলিম কয়েকটি দেশ ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক করার কথা বলেছে।
কিন্তু এর কারণ কী- এই প্রশ্নে আমেরিকান পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাঈদ ইফতেখার আহমেদ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভূমিকার কারণে এবং ইরানের বিরো'ধিতা থেকে অনেক আরব দেশ ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক তৈরি করছে। নতুন মেরুক'রণের বেশ অনেকগুলো কারণ রয়েছে। এর অন্যতম একটা বিষয় রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর তার যেহেতু ইসরায়েলের সাথে অত্যন্ত ভাল সম্পর্ক রয়েছে এবং অন্যরকম একটি সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছেন।
তিনি তেল আবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস সরিয়ে জেরুসালেমে নিয়েছেন। ট্রাম্প কিন্তু দীর্ঘদিন যাবৎ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সাথে ইসরায়েলে একটা সম্পর্ক তৈরি চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যের অনেক রাষ্ট্রের মধ্যে এই উপলব্ধি এসেছে যে, প্যালেস্টাইনের সং'ক'টের বোধহয় আশু কোনো সমা'ধান হচ্ছে না। যেহেতু ইসরায়েলের পক্ষ থেকেও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক স্থাপনের ব্যাপারে দী'র্ঘদি'নের চেষ্টা রয়েছে। সুতরাং নানাবিধ সমীক'রণের ফলে কোনো কোনো রাষ্ট্র এই সিদ্ধান্তে চলে এসেছে যে প্যালেস্টাইনকে পাশ কা'টিয়ে হলেও যদি আজকে ইসরায়েলের সাথে কূ'টনৈ'তিক এবং বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপন করা যায়, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোও নানাভাবে উপকৃত হবে।
তিনি বলছেন, আরেকটি বিষয়টি হচ্ছে, ইরানের একটি জো'রালো ভূমিকা রয়েছে ইসরায়েলের বি'রু'দ্ধে। ফলে সৌদি আরব এবং আরব আমিরাতসহ যে রাষ্ট্রগুলো নিজেদেরকে আঞ্চলিক রাজনীতিতে ইরান বিরো'ধী অবস্থানে রেখেছে, তারা মনে করে ইসরায়েলের সাথে যদি তাদের ঘ'নি'ষ্ট সম্পর্ক থাকে, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভা'ব ঠে'কানো সম্ভব হবে।
দক্ষিণ এশিয়ায় শুধু বাংলাদেশ, পাকিস্তানের অন'ড় অবস্থান : দক্ষিণ এশিয়াতেও বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান ছাড়া অন্য দেশগুলো ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়ে সম্পর্ক করছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতের পক্ষ থেকে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ঘ'নি'ষ্ঠ করার বিষয়টি দৃ'শ্যমান হচ্ছে। ইসরায়েলের বর্তমান রাজধানী জেরুজালেম থেকে ভারতীয় একজন সাংবাদিক হারিন্দার মিশ্র বলেছেন, ইসরায়েল বাংলাদেশের স্বীকৃতি পেলে গুরুত্বের সাথে স্বাগত জানাবে।
তিনি উল্লেখ করেছেন, ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়াতেও নতুন সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা করছে এবং দু'দিন আগে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এশিয়া নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে। সেই সংবাদ সম্মেলনে মিশ্র উপস্থিত ছিলেন। একটা প্রেস কনফারেন্স হয়েছিল। তাতে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি ডাইরেক্টর জেনারেল সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন। এটি ছিল মূলত এশিয়ার দেশগুলোর সাথে ইসরায়েলের সম্পর্ক নিয়ে। সাংবাদিকরা দক্ষিণ এশিয়া সম্পর্কে ইসরায়েলের অবস্থান জানতে চেয়েছিলেন।
জবাবে ইসরায়েলের ওই কর্মকর্তা বলেছেন, ইসরায়েল সবার সাথে সম্পর্ক করতে চায় এবং সবার সাথে সর্ম্পক স্থাপনের একটা চেষ্টাও হচ্ছে। বাংলাদেশের বিশ্লে'ষকরা মনে করেন, যে আরব দেশগুলো ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক করছে, সেই দেশগুলোতে রাজতন্ত্র বা একক শাসন থাকায় জনগণের মতামত উপেক্ষা করে তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারছে। সেটা বাংলাদেশে সম্ভব হবে না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক রওনক জাহান বলেছেন, ফিলিস্তিন ইস্যুকে এড়িয়ে বাংলাদেশ ইসরায়েলের সাথে যাবে না বলে তিনি মনে করেন। যদিও এখন সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সৌদি আরব সম্পর্ক করছে। কিন্তু এই সম্পর্কের ব্যাপারে আরব দেশগুলোতে কতটা জনসমর্থন আছে? কারণ সরকারগুলোতো সম্পর্ক করতে পারে। কিন্তু আরব দেশগুলোর জনগণতো এতদিন প্যালেস্টাইনের স্বাধীনতার পক্ষে ছিল। অতএব বাংলাদেশের পক্ষে এখনই আগ বাড়িয়ে এটার মধ্যে যাওয়ারতো প্রশ্ন আসে না।
ইসরায়েলের লাভ হবে কতটা : কিন্তু বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক করে ইসরায়েল কী অর্জন করতে চায়- এমন প্রশ্নে হারিন্দার মিশ্র বলছিলেন, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হিসাবে বাংলাদেশের স্বীকৃতি পেলে তা ইসরায়েলের বৈধতার ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় একটি মাত্রা যুক্ত হবে। এছাড়া অর্থনৈতিক চিন্তাও থাকতে পারে বলে তার ধারণা। বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। যদি সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা হয়, তাহলে ইসরায়েল একটা লে'জিটে'মিসি পাচ্ছে। এটা বড় বিষয়। এছাড়া এখানকার মানুষ খুব ভালভাবে জানে যে বাংলাদেশ একটা ম্যা'নুফ্যা'চারিং দেশ হিসাবে ইমার্জ করেছে। সেখানে বিদেশি অনেক কোম্পানি যাচ্ছে। লেবার কস্ট কম আছে। হয়তো ইসরায়েল সেখানে বেনিফিট পেতে পারে। ইসরায়েল অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক লাভের দিকটাও দেখছে।
ঢাকায় বিশ্লেষকরা বলেছেন, ইসরায়েল প্রযু'ক্তিগত দিক থেকে অনেক উন্নত। কিন্তু বাংলাদেশ বিক'ল্প অনেক দেশ থেকেই প্রযুক্তিগত সহযোগিতা নিচ্ছে। ফলে ইসরায়েলের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক করার প্রয়োজন বা তা'গিদ নেই বলে মনে করেন অধ্যাপক লাইলফার ইয়াসমিন। যদিও বিভিন্ন আরব দেশ ইসরায়েলের সাথে কূটনৈ'তিক সম্পর্ক করার ক্ষেত্রে বলেছে যে, ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সং'গ্রা'মের প্রতি সমর্থন থেকে তারা সরে আসছে না। কিন্তু ইসরায়েল ইস্যুতে এই দেশগুলোর অবস্থানকে বাংলাদেশ বিবে'চনায় নিচ্ছে না।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের দাবি এড়িয়ে বাংলাদেশ আ'পস করতে পারে না। অন্য দেশ বা অন্য আরেকটি মুসলিম দেশ ইসরায়েলের সাথে কি করছে- এর আগেও হয়েছে, আমরা দেখেছি জর্ডানে ইসরায়েলের দূতাবাস আছে। এবং একাধিক মুসলিম রাষ্ট্রের সাথে তাদের সম্পর্ক আছে। আমরা যতটুকু জেনেছি বা বলা হয়েছে আমাদের, যে এই প্র'ক্রি'য়া ফিলিস্তিনিদের অধি'কার আদায়ে সহায়তা করতে পারে। ওই মুসলিম রাষ্ট্রগুলো এটা বলছে।
এটা কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য- সেটা আমরা অপেক্ষায় থাকবো। কিন্তু বিষয়টি হলো এটা তৃতীয় আরেকটি রাষ্ট্রের বিষয়। কিন্তু বাংলাদেশের অবস্থানে এখানে কোনো পরিবর্তন নেই। বিএনপি নেতা আলমগীরও বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক করতে গিয়ে ফিলিস্তিনিদের স্বাধী'নতার দাবিকে আর গুরুত্ব দিচ্ছে কিনা- সেই প্রশ্ন থেকে যায়। এখন মধ্যপ্রাচ্যে যা হচ্ছে, এটা কি আসলে প্যালেস্টানের জনগণের মু'ক্তিযু'দ্ধের ব্যাপারটাকে সেভাবে দেখা হচ্ছে? এই প্রশ্ন থেকে যায়।
বিশ্লেষকরা বলেছেন, যদিও গত কয়েক বছরে পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের জমিতে ইসরায়েলের স্থাপনা নির্মাণ এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করাসহ বিভিন্ন প'দক্ষে'প ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সম্পর্ক গড়া নিয়েও বাংলাদেশে সাধারণ মানুষের মাঝে অতীতের মতো আলোচনা বা প্র'তিবা'দ নেই। কিন্তু এরপরও সার্বিক জনমত এবং ইসলামপন্থী দলগুলোসহ সব রাজনৈতিক দলের অবস্থানের কারণেই বাংলাদেশের কোনো দল বা সরকার ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো রকম সম্পর্ক করবে না বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। সূত্র : বিবিসি বাংলা।