শনিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১১:৩৬:৩০

হঠাত্‍ করেই শান্তি ফিরিয়ে আনলো চীন-ভারত! কিন্তু কীভাবে সম্ভব হলো?

হঠাত্‍ করেই শান্তি ফিরিয়ে আনলো চীন-ভারত! কিন্তু কীভাবে সম্ভব হলো?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারত আর চীন যেমন দ্রুততার সাথে হিমালয় এলাকায় তাদের সীমান্তে উত্তে'জনা কমিয়ে আনার প'দক্ষেপ নিয়েছে তা অনেককেই অবা'ক করেছে। মস্কোতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর এবং চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-র মধ্যে এক দীর্ঘ বৈঠকের পর দু'দেশের সেনাবা'হি'নীকে মুখো'মুখি অবস্থান থেকে সরিয়ে আনার কথা ঘোষণা করা হয়েছে।

যদিও, এর আগে পরমাণু শ'ক্তিধ'র দুই দেশের গরম গরম কথাবার্তায় উত্তে'জনা বেড়ে যাবার আভা'সই পাওয়া যাচ্ছিল। সপ্তাহের গোড়ার দিকে চীনা সরকার নিয়'ন্ত্রিত দৈনিক গ্লো'বাল টাইমস বলেছিল, "চীনা সৈন্যরা ভারতীয় সেনাদের ওপর দ্রুতই এক মা'রা'ত্মক আ'ঘা'ত হা'নবে এবং তারা সব নি'শ্চি'হ্ন হয়ে যাবে। "

ভারতের প্রতির'ক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংও বলেছিলেন, ভারত তার আঞ্চলিক অখ'ন্ডতা র'ক্ষা করতে দৃঢ়প্রতি'জ্ঞ এবং এ নিয়ে কোন সন্দে'হ থাকা উচিত নয়। সীমান্তের অবস্থাও ছিল তেমনি। চীন দাবি করে কয়েকদিন আগে ভারতীয় সৈন্যরা ''উ'স্কা'নিমূলকভাবে'' গু'লিব'র্ষ'ণ করেছিল, এবং চীন তখন পা'ল্টা প'দক্ষে'প নিয়েছে - যদিও কী সেই ব্যবস্থা তা বলা হয়নি। ভারতীয় পক্ষ দাবি করে, চীনই ফাঁ'কা গু'লি ছুঁড়েছিল।

তার আগে জুন মাসে লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় লাঠি এবং পাথর নিয়ে দু দেশের বা'হি'নীর এক মা'রা'ত্ম'ক সং'ঘ'র্ষ হয়, যাতে ২০ জন ভারতীয় সৈন্য নি'হ'ত হয়। সীমান্তে এখনও দু দেশের বিপুল পরিমাণ সৈন্য মোতায়েন করা আছে। তবে হঠাত্‍ ঠিক কি কারণে দু দেশ উত্তে'জনা প্র'শ'মনে একমত হলো - যা কেউই ঘ'টবে বলে ভাবেননি?

'বরফ-ভাঙা' দূত : উইলসন সেন্টার নামের থিংক ট্যাংকের উপপরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান এবং অন্য বিশেষজ্ঞরা অনেকেই ধা'রণা করছিলেন যে দু'দেশই একটা সং'ঘা'তের জন্য তৈরি ছিল, তবে তারা এটাও বুঝেছিল যে যু'দ্ধ কোন বিক'ল্প নয় এমনকি তা সীমিত আকারে হলেও।

ভারত-চীন সীমান্ত ২১০০ মাইল লম্বা : "যু'দ্ধ হলে তা দু'দেশের জন্যই বি'প'র্যয়কর পরি'ণতি ডেকে আনতো, এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে ঝুঁ'কিটা ছিল খুবই বেশি" - বলছিলেন কুগেলম্যান। তিনি বলছিলেন, জয়শংকর অনেক বছর ধ'রে বেইজিংএ ভারতের রাষ্ট্রদূত ছিলেন এবং চীনা কূ'টনী'তিকদের সাথে তার ভালো সম্পর্কের কথা অনেকেই জানেন। এটা বরফ গলাতে সহায়ক হয়েছে। তার কথায়, কূ'টনী'তিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার সময় ব্যক্তিগত সম্পর্ক একটা ভূমিকা পালন করে।

আবহাওয়াও হয়তো একটা ভূমিকা পালন করেছে : শীতকালে গালওয়ান উপত্যকা উঁচু এলাকাগুলোর পরিবেশ খুবই প্রতি'কুল হয়ে ওঠে। অনেকে হয়তো এদিকটার কথা ভাবেননি, কিন্তু আবহাওয়াও সম্ভবত একটা ভূমিকা পালন করেছে। ভারতের সেনাবা'হি'নীর সাবেক একজন লে'ফটেন্যা'ন্ট জেনারেল (অব) বিনোদ ভাটিয়া বলছেন, সৈ'ন্যরা প্রতি'কূল পরিবেশে থাকতে অভ্যস্ত কিন্তু সুযোগ থাকলে সৈন্যরা এমন পরি'স্থিতি এড়িয়ে যেতে চায়।

কিছু খবরে জানা যায়, ভারতীয় সৈন্যরা সম্প্রতি কিছু উঁচু এলাকার দ'খ'ল নিয়েছিল যেখান থেকে চীনা ফাঁ'ড়িগুলো দেখা যায়। কোন দেশই এটা সরকারিভাবে নি'শ্চি'ত করেনি। লে, জেনারেল ভাটিয়া বলছেন, হয়ত ভারত দরক'ষাক'ষি করার জন্য এটাকে ব্যবহার করেছে। দুটি দেশই অন্য বহু সং'ক'ট মো'কাবি'লা করছে। ভারতে কোভিড-১৯ সং'ক্র'মণ উদ্বে'গজ'নকভাবে ছড়াচ্ছে এবং এর বি'রূ'প প্র'ভা'ব পড়েছে অর্থনীতিতে।

কোন একটা যু'দ্ধে জড়িয়ে পড়লে তা এসব ইস্যু মো'কাবি'লার পথে বি'রা'ট বা'ধা সৃষ্টি করতো। অন্যদিকে চীন এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেকগুলো দেশের সাথে সৃষ্টি হওয়া উত্তে'জনা মো'কাবি'লা করছে। হংকংএ তারা যে বি'ত'র্কিত নিরা'পত্তা আইন করেছে তাও বিশ্বব্যাপী নি'ন্দি'ত হয়েছে।

শান্তি পুনপ্রতিষ্ঠার জন্য কত সময় লাগবে: বিশ্লেষকরা বলেন, এর কোন পূর্বা'ভাস দেয়া খুব ক'ঠি'ন। ওয়াশিংটনের স্টিমসন সেন্টার নামে থিংক ট্যাংকের চীন বিশেষজ্ঞ ইউন সান বলছেন, মস্কোর আলোচনার পর যে যৌথ ঘোষণা দেয়া হয়েছে তাতে খুঁ'টিনাটি অনেক কিছুরই উল্লেখ নেই। এতে প্রকৃত নিয়'ন্ত্রণরেখা বা লাইন অব এ্যা'ক'চুয়াল ক'ন্ট্রো'লএর কথা বলা হয়নি। অথচ এটিই কার্যত দু দেশের মধ্যেকার সীমান্ত এবং এলএসির অনেক জায়গা আছে যেগুলো বি'ত'র্কিত, এবং সেখানে এখনো সেনা মোতায়েন করা আছে- বলছিলেন তিনি।

লে, জে. ভাটিয়াও বলছিলেন, উত্তে'জনা প্র'শ'মনের জন্য সময় লাগে অনেক, এ ক্ষেত্রেও লাগবে। "এটি বিশাল এক এলাকা, সেনা ক'মা'ন্ডারদের ব্যাপারটা বুঝতে সময় লাগবে। সাম'রিক স্তরের আলোচনাগুলো হবে এমন সময় সময় যখন উত্তে'জনা বি'রা'জমান, এবং দু-পক্ষেই কাঁ'চা আবে'গ কাজ করছে।"

চীন সীমান্তে একজন ভারতীয় সীমা'ন্তর'ক্ষী সেনা : দু পক্ষই চাইছে স্ট্যাটাস কো অর্থাত্‍ স্থি'তাব'স্থা বজায় রাখতে। কিন্তু মিজ ইউন বলছেন, ব্যা'পা'রটা সহজ নয়, কারণ দু পক্ষের চোখে স্ট্যাটাসকোর সংজ্ঞা দু রকমের। যেসব এলাকা ভারত তাদের বলে দাবি করে, চীনা সৈন্যরা সেসব জায়গা অনেক ভেতরে ঢুকে বসে আছে। তারা সেই জায়গাগুলো ছেড়ে যাবে কিনা - সে ব্যাপারে স্পষ্ট কিছুই বলা হয়নি।

বলা হয়, দুদেশের মধ্যে উত্তে'জনার উত্‍স হচ্ছে একটি নতুন রাস্তা যা ভারতীয় সৈন্যদের শিবিরগুলোকে একটি বিমানঘাঁ'টির সাথে যুক্ত করবে। কিন্তু মিজ ইউন বলছেন, এটা একমাত্র কারণ হতে পারে না, কারণ এটা ২০ বছর ধ'রে তৈরি হচ্ছিল এবং কোন গো'পন ব্যাপার ছিল না।

তিনি মনে করেন, ভারত যে এক বি'ত'র্কিত সিদ্ধান্তে ওই অঞ্চলের বিশেষ মর্যাদা দানকারী আইনটি বি'লু'প্ত করেছে, এবং দিল্লি-ওয়াশিংটন সম্পর্ক উন্নত হচ্ছে - তা এই সং'ঘা'তের পেছনে একটা ভূমিকা পালন করেছে। মিজ ইউন বলছেন, বেইজিং মনে করেছিল, ভারতকে একটা শা'স্তি দিলে দিল্লি ও ওয়াশিংটন উভয়কেই একই সাথে একটা বার্তা দেয়া হবে। তবে ভারত যে পিছিয়ে যাবে না তা চীনের হিসেবের মধ্যে ছিল না।

চীন সম্প্রতি করোনা ভাইরাস সং'ক্র'মণ নিয়ে অনেকগুলো দেশের সাথে কূ'টনৈ'তিক সং'ঘা'তে জড়িয়ে পড়েছে। একারণে তারা আগের চাইতে বেশি আ'ক্রম'ণা'ত্মক আ'চ'রণ করছে, এবং সাম্প্রতিক মাসগুলোগুলোতে আ'ক্রম'ণা'ত্মক মনোভাবটা চীনের পররাষ্ট্রনীতির একটা বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠেছে বলে মিজ ইউন বলছেন।

তিনি বলছেন, বেজিংএর কর্মকর্তাদের বিবৃতিগুলোতে এই আ'ক্রম'ণাত্ম'ক মনোভাব প্রতিফলিত হচ্ছে, চীনের রাষ্ট্রীয় মিডিয়াও প্রায়ই তাদের শ্রেয়তর সা'ম'রিক শক্তির কথা প্রতিবেশীদের মনে করিয়ে দিচ্ছে। ভারতের সাথে সং'ঘা'তের ক্ষেত্রেও গত কিছুদিনে এ প্র'ব'ণতা দেখা গেছে। গালওয়ানের সং'ঘা'তে ভারতীয় সৈন্য নি'হ'ত হলেও জুন-জুলাই মাসে দিল্লি ও চীনের ভাষা সং'য'তই ছিল।

কুগেলম্যান বলেন, এর কারণ হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং দুদেশের সম্পর্ক উন্নত করার যে চেষ্টা চালাচ্ছেন - তা বা'নচা'ল করতে তারা চায়নি। তার কথায়, এটা এখন দেখার বিষয় হবে যে চীন ও ভারত ব্যাপারটা কীভাবে তাদের জনগণের কাছে তুলে ধ'রে।

মিজ ইউন বলেন, হয়ত চীনের জন্য গরম গরম ভাষার পরিবর্তন আনাটা ব্যা'পারটা একটু ক'ঠিন হতে পারে কারণ তারা ভারতের বিপক্ষে দু'র্ব'ল বলে চিত্রিত হতে চাইবে না। ভারত-চীন সীমান্ত বিবাদ বহু দশকের পুরোনো, তাই তা দু'দিনে মিটে যাবে এমন নয়। তবে সূচনা হিসেবে এটা খা'রা'প নয়, বলছেন কুগেলম্যান। সূত্র : বিবিসি বাংলা

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে