সোমবার, ১২ অক্টোবর, ২০২০, ১২:১৯:২৬

চীনের নেতারা কখনই বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে না!

চীনের নেতারা কখনই বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে না!

ক্রিস প্যাটেন : আমি যখন হংকংয়ের গভর্নর ছিলাম, তখন আমার অন্যতম স'মালো'চক ছিলেন চীনে নিযুক্ত প্রাক্তন ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত স্যার পার্সি ক্র্যাডক। ক্র্যাডক সর্বদা বলতেন যে, চীন কখনই তার প্রতিশ্রুতি ভ'ঙ্গ করবে না। ক্র্যাডক একবার বলেছিলেন, চীনের নেতারা ''হিং'স্র স্বৈ'রশা'সক'' হতে পারে তবে তারা 'এক কথার মানুষ' এবং তারা যে প্রতি'শ্রুতি দিয়েছেন তা রাখতে বিশ্বস্ত হতে পারে। 

পর্যবেক্ষণের প্রথমার্ধের সেই সত্যতার বি'স্ম'য়কর প্রমাণ রয়েছে।  চীনা রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের একনায়কত্ব অবশ্যই উ'গ্র। জিনজিয়াংয়ের নীতিই বিবেচনা করুন। অনেক আন্তর্জাতিক আইনজীবী যুক্তি দিয়েছিলেন যে এক মিলিয়নেরও বেশি মুসলিম উইঘুরকে কারাগারে আ'টকে রাখা, জো'রপূর্বক নির্বী'জনকরণ (সন্তান জন্মদানে অ'ক্ষ'ম করা) ও গ'র্ভপা'ত এবং দাস'শ্রমের বিষয়টি জাতিসংঘের গ'ণহ'ত্যার সংজ্ঞায় রয়েছে। এমন নি'পী'ড়ন ঠগীসম্প্রদায়ের নির্যা'তনকেও ছাড়িয়ে যায়। 

স্যাটেলাইট চিত্রের ওপর ভিত্তি করে এক অস্ট্রেলিয়ান স্ট্র্যাটেজিক পলিসি ইনস্টিটিউটের সমীক্ষা ই'ঙ্গিত দেয় যে, চীন জিনজিয়াংয়ে তিনশ ৮০টি ক্যাম্প তৈরি করেছে, ১৪টি এখনো নির্মাণাধীন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে এই শিবিরগুলো স্থাপনের বিষয়ে অস্বী'কার করা হয়। পরে কিছু চীনা কর্মকর্তা দাবি করেছেন, তাদের মধ্যে আ'টক বেশিরভাগ লোকই এরই মধ্যে তাদের নিজ সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে গেছেন। স্পষ্টতই এটি সত্য থেকে অনেক দূরে।

তাহলে শি ও তার কমিউনিস্ট পার্টির পরিচালিত মন্ত্রণালয়ের সদস্যদের 'এক কথার মানুষ' হওয়ার বিষয়টি কোথায় গেল? হায়! ক্র্যাডকের বর্ণনার সেই বিষয়টির (এক কথার মানুষ) বাস্তবে কোনো ভিত্তি নেই। বিশ্বের শেষ কাজটি হবে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) সদস্যদের ওপর বিশ্বাস করা। চীনা নেতৃত্বের প্রতা'রণা ও অস'ত্যতার চারটি, অনেকগুলোর মধ্যে চারটি, উদাহরণ সবার কাছে পরিষ্কার হওয়া উচিত। 

প্রথমে, চীনে উদ্ভব কভিড-১৯ মহামা'রির বিষয়টির কথা ভাবুন। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এই ভাইরাস প্রায় এক মিলিয়ন লোককে হ'ত্যা করেছে, ভ'য়ান'কভাবে চাকরি ও জীবন নির্বা'হের মাধ্যমগুলোকে ধ্বং'স করে দিয়েছে। ২০০২-০৩ সালের সার্স মহামা'রির পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা 'আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বিধিমালা' হিসেবে পরিচিত গাইডলাইনের একটি সেট স্থাপনের জন্য চীনসহ তার সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করেছিল। 

ওই বিধিগুলোর অধীনে বিশেষত অনুচ্ছেদ ৬ অনুসারে, চীন সরকারের বা'ধ্যবা'ধকতা রয়েছে যে কোনো নতুন জনস্বাস্থ্যবিষয়ক জরুরি ত'থ্য সংগ্রহ করতে এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্যকে এটির (নতুন জনস্বাস্থ্যবিষয়ক জরুরি অবস্থা) বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে হবে।  

বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক মানবাধিকারবিষয়ক আইনজীবী ও অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এরোল প্যাট্রিক ম্যান্ডেস উল্লেখ করেছেন যে, চীন গত বছরের ডিসেম্বরের প্রথম দিকে সং'ক্র'মণ গো'পন, মি'থ্যা ও অ'বহে'লিত ত'থ্য এবং সং'ক্র'মণ নিয়ে অগ্রিম বার্তা গো'পন করে। ফলস্বরূপ করোনা ভাইরাস নিজের চেয়েও অনেক বেশি মা'রা'ত্নক হয়ে ওঠেছে। এটি সিপিসির করোনা ভাইরাস। 

কারণ কী ঘ'টছে, তা নিয়ে যখন সা'হ'সী চীনা চিকিৎসকরা কিছু বলার চেষ্টা করছিলেন তখন দলটি তাদের চু'প করিয়ে দেয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও শি'র বিশ্বাসযোগ্যতার অভাবের বিষয়টি প্রমাণ করতে পারেন। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে শি ওবামাকে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে চীন দক্ষিণ চীন সাগরে স্প্রাটলি দ্বীপপুঞ্জ ও এটির আশেপাশ এলাকায় সেনা মোতায়েনের (সামরিকীকরণ) চেষ্টা করছে না। 

তবে এটি ছিল চীনা কমিউনিস্ট বৈশিষ্ট্যযুক্ত অঙ্গীকার: এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের প্রকাশিত স্যাটেলাইট চিত্রগুলোত প্রমাণ করে যে, চীনা বা'হি'নী দ্বীপগুলোতে 'ব্যাটারিজ অব আন্টি-এয়া'রক্রা'ফট গানস' মোতায়েন করেছে। একই সময়ে চীনা নৌবা'হি'নী দক্ষিণ চীন সাগরে ভিয়েতনামের মাছ ধ'রার জাহাজগুলোকে ডু'বিয়ে দিয়েছে। 

সেখানে নতুন অ্যান্টি-এয়ারক্রাফ্ট ক্যারিয়ার মিসাইলেরও পরীক্ষা করা হয়েছে। সিপিসির অসততার তৃতীয় উদাহরণ হলো হংকংয়ের স্বা'য়ত্তশা'সন, স্বাধীনতা ও আইনের শা'সনের উপরে হা'মলা। হংকং ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ১৯৮৪ সালের যৌথ ঘোষণাপত্রে (এবং পরবর্তীতে) প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ২০৪৭ সাল পর্যন্ত শহরটি তার স্বাধীনতা ভোগ করতে থাকবে তা ছিন্ন করেছেন শি। অধিকন্তু চীন হংকংয়ের স্বাধীনতার নাড়িভুঁড়ি বের করে ফেলার যে আইন প্রয়োগ করেছিল তার আরো বহিরাগত ক্ষেত্রও রয়েছে।

দেশটির জাতীয় সুর'ক্ষা আইনের ৩৮ অনুচ্ছেদ হংকং, চীনের মূল ভূ'খ'ণ্ড বা অন্য কোনো দেশের যে কোনো ব্যক্তির জন্যও প্রযোজ্য। উদাহরণস্বরূপ একজন আমেরিকান, ব্রিটিশ বা জাপানি সাংবাদিক তার দেশে তিব্বত বা হংকংয়ে চীন সরকারের নীতির স'মালো'চনা করে কিছু লিখেছে তাহলে তিনি যদি হংকং বা চীনে পা রাখেন তবে তাকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে।

অবশেষে, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের বস্তাভর্তি ছি'ন্নভি'ন্ন প্রতিশ্রুতিগুলোও কেউ যোগ করতে পারেন যা সিপিসির কর্মকর্তাদের দেওয়া পূর্বের প্রতিশ্রুতি এবং সা'হসকে উল্টে দেয়। শিকে প্র'তিরো'ধ করার সা'হস রয়েছে এমন দেশগুলোর রপ্তানি পণ্য না কেনার হু'মকিও রয়েছে চীনের জ'বরদ'স্তিমূলক বাণিজ্যিক কূ'টনীতিতে। নরওয়ে, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যদের ক্ষেত্রে এটি ঘ'টেছে। 

তবে চূড়া'ন্ত পরি'ণতিতে চীন হু'মকির চেয়ে প্রায়শই কম কাজ করে। একটি জিনিস স্পষ্ট: বিশ্ব শি'র একনায়কতন্ত্রে বিশ্বাস করতে পারে না। আমরা যতো তাড়াতাড়ি এটি বুঝতে পারবো এবং এক সঙ্গে কাজ করব, ততো তা'ড়াতা'ড়ি বেইজিংয়ের আরো ভালো আচরণ করতে হবে। বিশ্ব এর জন্য নিরা'পদ এবং আরো সমৃদ্ধ হবে।

লেখক : ক্রিস প্যাটেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর, হংকংয়ের সর্বশেষ ব্রিটিশ গভর্নর এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিদেশবিষয়ক কমিশনার। (প্রজেক্ট-সিন্ডিকেটে ক্রিস প্যাটেনের নিবন্ধ)

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে