শুক্রবার, ০৬ নভেম্বর, ২০২০, ০৮:৫০:৪৭

গোয়েন্দারা তদন্ত শুরু করেছেন

গোয়েন্দারা তদন্ত শুরু করেছেন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আর মাত্র ছয়টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পেলেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট হবেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন। প্রেসিডেন্ট হতে প্রয়োজন ২৭০ ইলেকটোরাল ভোট। ইতিমধ্যে বাইডেনের নিশ্চিত হয়েছে ২৬৪টি। ছোট্ট রাজ্য নেভাদার ছয়টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পেলেই হোয়াইট হাউস জিতবেন বাইডেন। রিপাবলিকান প্রার্থী বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনো ৫৬টি ইলেকটোরাল ভোটে পিছিয়ে। তাই বলে ট্রাম্পের আশা এখনো শেষ হয়ে যায়নি। প্রেসিডেন্ট পদের জন্য হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নেভাদার পাশাপাশি জর্জিয়া ও পেনসিলভেনিয়া অঙ্গরাজ্যে চলছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের শ্বাসরুদ্ধকর অপেক্ষার শেষ হয়নি গত রাত পর্যন্ত। প্রত্যাশা করা হচ্ছে আজ নতুন প্রেসিডেন্ট সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারবে যুক্তরাষ্ট্রের ভোটাররা।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানায়, আর পাঁচটি অঙ্গরাজ্যের পপুলার ভোটের ফল জানা বাকি। এর মধ্যে পেনসিলভেনিয়া, নর্থ ক্যারোলিনা, জর্জিয়া ও আলাস্কায় এগিয়ে রয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ চারটি অঙ্গরাজ্যের সম্মিলিত ইলেকটোরাল ভোট রয়েছে ৫৪টি। অর্থাৎ এগিয়ে থাকা চারটি রাজ্যে জিতলে ট্রাম্পের মোট ইলেকটোরাল ভোট হবে ২৬৮। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে প্রয়োজন হয় ন্যূনতম ২৭০ ভোট। বিপরীতে শুধু নেভাদায় এগিয়ে রয়েছেন জো বাইডেন। এ অঙ্গরাজ্যের ইলেকটোরাল ভোট রয়েছে ছয়টি। সুতরাং এ একটি রাজ্যের জয়ই তার সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করতে যথেষ্ট। 

তবে নেভাদায় বিজয় এত সহজ হচ্ছে না বাইডেনের। ৭৫ শতাংশ ভোট গণনা শেষে প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে মাত্র ৮ হাজার ভোটে এগিয়ে রয়েছেন তিনি। এখনো ৩ লাখ ৯৮ হাজার ভোট গণনা বাকি। ফলে যে কোনো সময় পাল্টে যেতে পারে সব হিসাব-নিকাশ। নেভাদায় গত রাত পর্যন্ত ৫ লাখ ৮৮ হাজার ২৫২টি (৪৯ দশমিক ৩ শতাংশ) ভোট পেয়েছেন বাইডেন। আর ট্রাম্প পেয়েছেন ৫ লাখ ৮০ হাজার ৬০৫টি (৪৮ দশমিক ৭ শতাংশ) ভোট। এগিয়ে থাকা বাকি চারটি অঙ্গরাজ্যের পাশাপাশি নেভাদায় জিততে পারলে ট্রাম্পও হতে পারেন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর বলছে, বেশির ভাগ অঙ্গরাজ্যেই দুই প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে গেছে। বুধবার দুপুরের দিকে উইসকনসিন ও মিশিগানে জো বাইডেনকে বিজয়ী ঘোষণার পর পেনসিলভেনিয়া, জর্জিয়া, নেভাদা এ তিনটি রাজ্যের ওপর নির্ভর করছে ট্রাম্প ও বাইডেনের ভাগ্য। কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে ট্রাম্পকে অবশ্যই পেনসিলভেনিয়ায় জিততে হবে। কিন্তু ডাকযোগের ভোট বাইডেনের দিকেই যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, মিশিগান, পেনসিলভেনিয়া ও জর্জিয়ায় ভোট গণনা বন্ধের দাবিতে মামলা করেছে রিপাবলিকান পার্টির নির্বাচনী প্রচারণা শিবির। ট্রাম্পের এসব পদক্ষেপ অবশ্য অনুমিতই ছিল। কারণ শুরু থেকেই তিনি আইনি লড়াইয়ের হুমকি দিয়ে আসছিলেন। তবে নিজেকে এখনই বিজয়ী বলতে নারাজ বাইডেন। ভোট গ্রহণ শেষে ডেলাওয়ার অঙ্গরাজ্যে দেওয়া আনুষ্ঠানিক এক ভাষণে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বলেন, ‘আমি এখানে বিজয় ঘোষণা করতে আসিনি। কিন্তু বলতে এসেছি, ভোট গণনা শেষ হলে আমার বিশ্বাস আমরাই জিতব।’ এদিকে ভোট গণনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিটি ভোট গণনার দাবিতে আয়োজিত নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে হাজারো মানুষের নির্বাচনী শোভাযাত্রা সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ অন্তত ২০ জনকে গ্রেফতার করেছে। জানা যায়, এবারের নির্বাচনে ১৫ কোটির বেশি মানুষ ভোট দেয়। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত বাইডেন পেয়েছেন ৭ কোটি ২১ লাখ ৩০ হাজার ১৭৯ এবং ট্রাম্পের বাক্সে যায় ৬ কোটি ৮৬ লাখ ৪৮ হাজার ৬ ভোট। করোনা সংক্রমণের ভীতির পরিপ্রেক্ষিতে এবার ডাকযোগে ব্যালট সংগ্রহ করে তা ফেরত পাঠানোর কার্যক্রম ছাড়াও আগাম ভোট কেন্দ্রও স্থাপন করা হয় ৩৯ স্টেটে। 

এর ফলে ভোটের পরিমাণ বেড়েছে। এমনকি ৩ নভেম্বর নির্বাচনের দিনও বহু কেন্দ্রে বহু ভোটারের সমাগম ঘটেছিল। অর্থাৎ গত চার বছরে ট্রাম্পের আচরণে অধিকাংশ আমেরিকানের মধ্যে ক্ষোভ সঞ্চারিত হয়েছে। সে জন্য তারা একটা পরিবর্তন চাচ্ছে। ভোটে তার প্রতিফলন ঘটছে বলে অনেকের ধারণা। যদিও করোনা মোকাবিলায় সীমাহীন উদাসীনতা প্রদর্শনের ব্যাপারটি ভোটারদের মধ্যে তমন একটা প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পেরেছে বলে অনেকে বিশ্বাস করেন না। বিশেষ করে রিপাবলিকান হিসেবে তালিকাভুক্ত ভোটারের ৮০ %-এর মধ্যেই করোনা মহামারী ব্যাপারটি কোনো সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়নি বলেই ভোটের সংখ্যায় বাইডেনের একেবারেই কাছাকাছি রয়েছেন ট্রাম্প। এ ক্ষেত্রে বাইডেনের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের অভিযোগ হচ্ছে, ব্যর্থ নেতৃত্বের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নাজুক আকার ধারণ করেছে- এ বিষয়টি তেমনভাবে তিনি উপস্থাপনে সক্ষম হননি। বাইডেন ও তার সমর্থকরা বেশি সময় ব্যয় করেছেন করোনা মোকাবিলায় ট্রাম্পের ব্যর্থতা নিয়ে। বহু আমেরিকান করোনায় মারা যাওয়ার ব্যাপারটিও বাইডেন ভোটারদের সামনে উপস্থাপন করেছেন। ট্রাম্প নিজেও আক্রান্ত হন স্বাস্থ্যবিধি না মানায়। তবু নির্বাচনী সমাবেশে ট্রাম্প ও তার সমর্থকরা কখনই স্বাস্থ্যবিধি মানতে চাননি। ভোট পর্যালোচনাকারীরা মন্তব্য করেছেন, এবারের নির্বাচনে মূলত সহজ-সরল মানুষের পরাজয় ঘটল। 

মানবিকতা ও দায়িত্বশীলতার ব্যাপারটি হারাতে বসেছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বকে আরও বেশি প্রশ্নবিদ্ধ করা হলো। সবকিছুর জন্য ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করা হলেও ব্যালটযুদ্ধে তার ন্যূনতম প্রতিফলন ঘটেনি বলেও শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমে মন্তব্য করা হচ্ছে। ইউএস সিনেটে রিপাবলিকানের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অক্ষুণœ রয়েছে। একইভাবে প্রতিনিধি পরিষদের দখল ডেমোক্র্যাটরাই রেখেছেন বলে সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে। তবে আগের চেয়ে আসন হারিয়েছে ডেমোক্র্যাটরা ৫টি। স্মরণ করা যেতে পারে, নির্বাচন ঘিরে ব্যাপক সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজের আশঙ্কা করা হলেও বাস্তবে কিছুই ঘটেনি। 

তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং ইমেইল ও ফোনে বাইডেন সমর্থকদের লাগাতার হুমকি দেওয়া হয় কেন্দ্রে না যেতে। নিজের এবং পরিবারের নিরাপত্তার কথা ভেবে কেন্দ্রে না যাওয়াই উত্তম বলেও পরামর্শ দেয় ওই চক্রটি। এ ব্যাপারে গোয়েন্দারা তদন্ত শুরু করেছেন বলে বুধবার প্রাপ্ত তথ্যে প্রকাশ। এমন ভয়ভীতি প্রদর্শনের মদদদাতা ও উৎপত্তিস্থল চিহ্নিত করার চেষ্টাও চালাচ্ছে এফবিআইসহ বিভিন্ন সংস্থা। তবে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে নিরাপত্তাব্যবস্থাও রাখা হয়েছে কঠোর।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে