শুক্রবার, ২১ মে, ২০২১, ১১:২৭:৪৬

যেকারণে যুদ্ধে জড়িয়ে যেত রাশিয়াও! ২৪ ঘন্টার সময় দিয়ে টেলিফোনে নেতানিয়াহুকে হুমকি দিয়েছিলেন যিনি!

 যেকারণে যুদ্ধে জড়িয়ে যেত রাশিয়াও! ২৪ ঘন্টার সময় দিয়ে টেলিফোনে নেতানিয়াহুকে হুমকি দিয়েছিলেন যিনি!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: তারিখ ১৯ মে। গাজায় তখনো হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। আর আমেরিকার সেক্রেটারি স্টেট এন্টনি ব্লিংকন মিটিং করছিলেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেরগেই লাভারভের সাথে। মিটিংটি ছিল আর্কটিক কাউন্সিলের। সেখান থেকেই ঘটনার শুরু। আমেরিকা ও রাশিয়ার নানা ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়। একপর্যায়ে ইসরাইল-হামাস সংঘাত নিয়েও কথা হয়। এ সময় রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেরগেই লাভারভ এন্টনি ব্লিংকনকে ইসরাইলের ব্যাপারে সাবধান করেন। সেগরেই লাভারভ ও এন্টনি ব্লিংকনের মিটিংয়ে রাশিয়া থেকে জার্মানিতে সরাসরি গ্যাস পাইপলাইন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আর তাতে আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা দেবে না বলে জানিয়েছে। এসবের পর আলোচনায় উঠে আসে ইসরাইল-হামাস সংঘাত। লাভারভ বলেন, ইসরাইলের সাথে আমাদের সম্পর্ক ভালো। আপনার একপেশেভাবে ইসরাইলকে সমর্থন করছেন তাও ঠিক নয়। ইসরাইল ও আপনাদের মনে রাখা উচিত সিরিয়া ও লেবাননে আমরা উপস্থিত আছে। এই দেশগুলোতে ইসরাইল হামলা করলে ইসরাইলকে মূল্য দিতে হবে এবং আমরা ও আপনারা মুখোমুখি হয়ে যাবো। এটা ছিল রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শেষ সর্তকবার্তা। আমেরিকা এর মর্ম বুঝে যায়। তারপর আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নেতানিয়াহুকে হুমকি দেন ফোন করে। বাইডেন বলেন, আমি আজকের মধ্যে কার্যকর অস্ত্র বিরতি চাই। বাইডেনের এই বাক্য হুমকি ছিল। তা ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী অগ্রাহ্য করেননি। কারণ এটা ইসরাইলের রেড লাইন ছিল।

যদি ইসরাইল এই রেড লাইন অতিক্রম করত তাহলে তাদের অবস্থা বখতে নসরের যুগের মতো হতো। যা আজও ইসরাইলিদের জন্য দুঃস্বপ্ন। বাইডেনের হুমকি নিয়ে আমেরিকান মিডিয়া শিরোনাম করেছে৷ ওয়াশিংটন পোস্ট লিখেছে, বাইডেনের সর্তকবার্তা ইসরাইলের প্রতি, নাড়িয়ে দিলো কূটনীতি। সিএনএন বলছে, বাইডেনের এই হুমকি ইসরাইলের সাথে আমেরিকার সম্পর্কের সবচেয়ে খারাপ সময় ছিল। আমেরিকা ও ইউরোপের চাপে ইসরাইল ও হামাসের যুদ্ধ বিরতি হয়েছে। যার মধ্যে রাশিয়ার বড় ভূমিকা রয়েছে। মিসরে আলোচনা চলছিল দু'পক্ষের। মিসরে ইসরাইলি প্রতিনিধিরা এলেও হামাসের নেতৃস্থানীয় কেউ আসেননি। হামাস থেকে বলা হয়েছিল, আমরা এখানে আসার জন্য বের হলে ইসরাইল আমাদের হত্যা করবে। এ কথার পর সিআইএ ও মিসরের গোয়েন্দা সংস্থা হামাস নেতৃবৃন্দকে নিরাপত্তার ব্যাপারে আশ্বস্ত করে। তারপর বিখ্যাত মারওয়ান ঈসা যুদ্ধ বিরতির আলোচনায় যোগ দেন।

ইসরাইলকে হামাস দুটি শর্ত দেয়। শর্তগুলো হলো এক, ইসরাইলকে মসজিদুল আকসাসহ মুসলিমদের ধর্মীয় সকল স্থাপনা থেকে সরে আসতে হবে। দুই, শেইখ জাররা থেকে ফিলিস্তিনিদের উৎখাত বন্ধ করতে হবে। এখন এই দুটি শর্ত মেনে ইসরাইল যুদ্ধ বিরতিতে রাজি হয়েছে। শর্ত ইসরাইল কতক্ষণ মানবে তা ঠিক করে বলা যায় না।

ইসরাইল গাজায় হামাসের ঘাঁটি, টানেল গুঁড়িয়ে দেয়া ছাড়াও আরো একটি উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য বিমান হামলা করছিল। যার মধ্যে একটিও হাসিল হয়নি। ইসরাইল হামাসের কাসসাম ব্রিগেডের প্রধান মুহাম্মদ দায়েফকে হত্যা করতে চাইছিলে। কিন্তু পারেনি।

মুহাম্মদ দায়েফ ১৯৯০ সালে হামাসে যোগ দেন। ইয়াহিয়া এস ও আদনান আল গুল মুহাম্মদ দায়েফকে হামাসে নিয়ে আসেন। ইয়াহিয়া এস কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। তিনি হামাসের রকেট ও বিস্ফোরক তৈরি করেছিলেন। ইসরাইল টিএনটির মতো বিস্ফোরক গাজায় পৌঁছাতে দেয় না। তাই ইয়াহিয়া এস এসিটোন (Acetone) ব্যবহার করেন। এসিটোন বাড়ির পেইন্ট কিংবা নেল পালিশে পাওয়া যায়। সেখান থেকে এসিটোন আলাদা করে এসিটোন পার অক্সাইড বিস্ফোরক তৈরি করেন। মোসাদ ১৯৯৫ সালে ইয়াহিয়া এসকে টেলিফোন বিস্ফোরণে হত্যা করে। তারপর ২০০৪ সালে আদনান আল গুলকেও হত্যা করা হয়। মুহাম্মদ দায়েফকে হত্যা করার জন্য ১২ থেকে ১৫ বার চেষ্টা করা হলেও ইসরাইল সফল হয়নি। ২০১৪ সালের বিমান হামলায় মুহাম্মদ দায়েফের ২৮ বছর বয়সী স্ত্রী এবং দুই সন্তান নিহত হয়। ইসরাইলের হামলায় মুহাম্মদ দায়েফ তার দুই পা এবং এক হাত হারিয়েছেন। এরপরও মুহাম্মদ দায়েফ কাসসাম ব্রিগেড পরিচালনা করছেন। ইসরাইল এবারো সফল হয়নি। তবে ইসরাইল নিরপরাধ ২৩২ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে৷ সব মিলিয়ে যুদ্ধ বিরতি হওয়ার ফলে বড় যুদ্ধের আশঙ্কা শেষ হয়ে গেল খানিকটা। গাজায় বিদেশি মানবিক সহায়তা প্রবেশ করতে পারবে। গাজার মুসলিমরা সামান্য সময়ের জন্য স্বস্তির শ্বাস নিতে পারবে। এরপর তাদের আবার প্রস্তুত হতে হবে এক নতুন সঙ্কটের জন্য।

তবে এর ভিতর তুরস্ক ও হামাসের চুক্তি হলে তা একটি আশার আলো হয়ে উঠতে পারে গাজা বাসীর জন্য। গাজাবাসী৷ যুদ্ধ বিরতি ঘোষণার পতাকা হাতে নিয়ে বিজয় মিছিল করে যা তাদের বিজয়ের প্রমাণ। কিন্তু এই বিজয়ের পর তাদের মোকাবেলা করতে নানা চ্যালেঞ্জ।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে