আন্তর্জাতিক ডেস্ক : গরিবদের ফ্রিতে খাইয়ে ফতুর হলেও কোটিপতি খাওয়ানো বন্ধ করেননি। এমন আরেকজন হলেন তামিলনাড়ুর ভি ভেঙ্কটরমন। হাসপাতালে রোগীর আত্মীয়দের রোজ ১ টাকায় পেট ভরে খাওয়ান তিনি।
এবার জেনে নিই সেই কোটিপতির কথা, যিনি গরিবদের বিনা পয়সায় খাওয়াতে খাওয়াতে এখন নিঃস্ব। একের পর এক সম্পত্তি বিক্রি করে চলেছেন। তবু গরিবদের বিনা পয়সায় খাওয়ানো বন্ধ করতে নারাজ তিনি।
৮০ বছরের বৃদ্ধ জগদীশলাল আহুজাকে চেনেন না এমন মানুষ খুব কমই আছে চণ্ডীগড়ে। বিশেষ করে গরিব মানুষের কাছে তিনি মসিহা। তাকে শ্রদ্ধা করেন বহু ফুটপাতবাসী। হিংসা, হানাহানি, প্রবঞ্চনার বিশ্বে এই মানুষগুলোই তো সমাজে শুদ্ধ বাতাস।
প্রতি সন্ধ্যায় চণ্ডীগড়ের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট অফ মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (PGIMER) ও রোজ দুপুরে সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ক্যাম্পাসে তাকে দেখা যাবেই। একদিনও কামাই নেই। অক্লান্তে সেবা করে যাচ্ছেন গরিব-দুঃখীদের জন্য।
বিনা পয়সা বিলি করছেন চাপাটি, আলু-চানা, হালুয়া, একটি কলা ও এক প্যাকেট মিষ্টি আর বিস্কুট। কয়েকশ' ফুটপাতবাসী লাইন দিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সেই খাবার। সাদা চুলের বৃদ্ধ হাসিমুখে সবাইকে পরিবেশন করছেন। এটাই তার নেশা, ভালোবাসা।
এই ভালোবাসাই তাকে ধীরে ধীরে করে তুলছে নিঃস্ব। সম্পত্তি বিক্রি করেই চলেছেন। তবু গরিব মানুষগুলোক খাওয়ানো বন্ধ করবেন না। জগদীশলাল আহুজার কথায়, টাকা পয়সা তো আর সঙ্গে নিয়ে যাব না। এই মানুষগুলোর আশীর্বাদেই আমি ধনী। আর আমার কিছু চাই না। যতদিন বাঁচব, শেষ রক্ত দিয়ে এদের পেট ভরানোর চেষ্টা করে যাব।
সাদা রঙের এসইউভিটা দেখলেই দলে দলে মানুষ চলে আসেন। ওই এসে গেছেন 'বাবার লঙ্গর'। হ্যাঁ, গরিব মানুষগুলো তাকে এই নামেই ডাকেন। তাদের কাছে জগদীশলাল আহুজা বাবার মতোই।
জগদীশলাল বলছেন, সালটা বোধ হয় ২০০০। আমি হাসপাতালের পাশ দিয়ে যেতে যেতে দেখলাম, এক ব্যক্তি ফ্রিতে সবাইকে ভাত খাওয়াচ্ছে। আমারও মনে হল, আমার এত টাকা, আমিও তো কিছু মানুষের পেট ভরাতে পারি। পরের দিন থেকেই শুরু করে দিলাম।
দেশভাগের সময় ১৯৪৭ সালে পেশোয়ার থেকে পাটিয়ালা এসেছিলেন মা-বাবার সঙ্গে। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১২। চণ্ডীগড়ে গিয়ে ওই বয়সেই ফল বিক্রি করতে শুরু করেন জগদীশলাল। ধীরে ধীরে অল্প দিনেই হয়ে যান ধন কুবের। শহরের পয়লা নম্বর ফল ব্যবসায়ী হয়ে ওঠেন।
গত ১৫ বছর ধরে বিনা পয়সা কয়েকশ' মানুষকে খাওয়াতে গিয়ে প্রায় সব সম্পত্তিই বেচে দিয়েছেন। জগদীশলালের কথায়, আমার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত এ কাজ করে যাব। একসময়ের রাজা গরিবদের সেবা করতে করতে আপাতত ফকির। তিনিই সত্যিকারের রাজা। সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া
৯ জানুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম