বৃহস্পতিবার, ১৯ আগস্ট, ২০২১, ১২:৪৩:৩৯

‘এতটুকু বদলায়নি তালেবান, মৃত্যুর প্রহর গুনছি’, ভয়াবহ অভিজ্ঞতা জানালেন আফগান তরুণী

 ‘এতটুকু বদলায়নি তালেবান, মৃত্যুর প্রহর গুনছি’, ভয়াবহ অভিজ্ঞতা জানালেন আফগান তরুণী

পরখা, কাবুল: মৃত্যুর প্রহর গুনছি। কবে গুলিতে ঝাঁজরা করে দেবে ওরা। দেবেই। ক’দিন ধরে বাড়ির দরজা, জানলা বন্ধ করে আমরা বসে আছি। কিন্তু এটাও জানি যে তালিবানরা (Taliban Terror) যেভাবে ঘরে ঘরে গিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে, তাতে খুব বেশি দিন আমি আর বাঁচতে পারব না। আপাতত ঘরে কিছু দিনের রেশন রয়েছে। তারপর? রেশন শেষ হবে। বাইরে বের হলেই…।

বাড়ি থেকে বেরনোর কোনও উপায় নেই। টিভি বন্ধ এখানে। ইন্টারনেট কখনও আছে, কখনও নেই। আমার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছি। ফোনও অধিকাংশ সময় বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এতকিছু করলেও আমি জানি যে আমাকে ওরা খুঁজে বার করবেই, তারপরে গুলি করে মেরে দেবে। আমার অপরাধ? আমি নিজের পরিবারের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার জন্য একটি আমেরিকান তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কাজ করতাম।

তালিবান কাবুলের দখল নেওয়ার পর থেকেই আমাদের মতো যে সমস্ত আফগান ছেলে-মেয়ে আমেরিকার সংস্থায় কাজ করত তাদের মেরে ফেলতে চাইছে। আমাদের অফিসে গিয়ে ওরা সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করছে। সঙ্গে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের খুঁজছে। সহকর্মীদের মধ্যে কে বেঁচে আছে, আর কে নেই তা জানি না। কতটা চিন্তার মধ্যে আছি সেটা বলে বোঝাতে পারব না। আমার আসল নাম কী সেটাও এখানে জানাতে পারছি না। বাড়িতে মা আমাকে আদর করে পরখা বলে ডাকেন। সেটাই এখানে ব্যবহার করলাম।

আমার বাড়িতে কোনও পুরুষ নেই। আমার বাবা আফগান সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। আমার যখন বাইশ বছর বয়স, আজ থেকে তিন বছর আগে বাবা মারা গিয়েছেন। বাড়িতে আমি, আমার দুই মা, আর দু’জন ছোটো ভাই। বাবার মৃত্যুর পরে কলেজ পাস করে আমি একটা আমেরিকান তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় চাকরি নিয়েছিলাম। চাকরি করে সংসার চালানো আর সঙ্গে কিছু টাকা জমানো যাতে পরবর্তীকালে আরও কিছুটা পড়াশোনা করতে পারি। সেই রাস্তা আমার জন্য বন্ধ হয়ে গেল। অবশ্য আমি কতদিন বাঁচব সেটাই প্রশ্ন। তবে, যে সমস্ত আফগান মেয়ে চাকরি করত না তাদের কলেজে যাওয়ার স্বপ্নও শেষ হয়ে গেল।

তালিবান গতকাল এখানে সাংবাদিক বৈঠক করে ঘোষণা করেছে যে মেয়েদের ওরা চাকরি করতে দেবে, পড়তে দেবে।এসব কথাতে আমরা কেউ বিশ্বাস করি না। অন্য কোনও দেশের মানুষ তালিবানকে চেনে না। ওরা যে কতটা খারাপ, কতটা নৃশংস সেটা আফগানিস্তানের বাসিন্দারা ছাড়া কেউ জানে না। মেয়েদের এরা মানুষ বলেই মনে করে না। পণ্য বলেই ভাবে। মেয়েদের নিয়ে যা ইচ্ছে তাই করা যায় এই নীতিতেই চলে তালিবান। মুখে এখন বিশ্বকে দেখানোর জন্য ভাল ভাল কথা বলছে অথচ আমার এক সাংবাদিক বান্ধবী কান্দাহারে মেয়েদের জন্য একটা লাইব্রেরি তৈরি করেছিলেন। তালিবান কান্দাহার দখল করার পরে সেই লাইব্রেরিটা জ্বালিয়ে দিয়েছে। আমার বান্ধবীকেও ওরা খুঁজছে, সে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল। এখন আর বেঁচে আছে কিনা জানি না। তালিবান ইসলামের কথা বলে অথচ ইসলামকে যে কতটা অবমাননা করে সেটা আমরাই জানি।

আর কয়েকদিন পরেই হয়তো আমার মুখও চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু তাতে এখন আর আমি ভয় পাচ্ছি না। আমার যা হওয়ার সেটা তো হবেই। আর কী হতে চলেছে সেটাও আমি জেনে গিয়েছি। এখন শুধু মা-দের আর ভাইদের জন্য ভাবনা হচ্ছে। ওরা বেঁচে থাকলেই শান্তি পাব। আমাদের সংস্থার পক্ষ থেকে সমস্ত কর্মীদের আমেরিকা যাওয়ার ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু আমি একা যেতে রাজি হইনি। দুই মা, দু’টো ছোটো ভাইকে ফেলে কীভাবে চলে যাব? কাবুলের রাস্তায় রাস্তায় এখন তালিবান বন্দুক হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এয়ারপোর্ট পর্যন্ত পৌঁছানোরই কোনও উপায় নেই।

তালিবানের যে রূপ বিশ্ব দেখছে তা আসলে তাদের মুখোশ। এরা আমাদের দেশটাকে আগেও শেষ করে দিয়েছিল আবারও শেষ করে দেবে। আর তাতে সাহায্য করছে পাকিস্তান। তালিবানের মতোই আমরা পাকিস্তানকেও ঘৃণা করি। পাকিস্তান আমাদের তরুণ প্রজন্মকে শেষ করে দিয়েছে। তাদের বিপথে পরিচালনা করেছে। এসব কথা বলে যে আর কোনও লাভ নেই সেটাও বুঝতে পারছি। তবু বিশ্বের মানুষ যাতে তালিবানের আসল চেহারাটা বুঝতে পারে তাই সবকিছু জানাতে চাইছি। সূত্র: সংবাদ প্রতিদিন

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে