মঙ্গলবার, ১২ জানুয়ারী, ২০১৬, ০৭:১৮:৪৬

আমার বলার কিছু নেই : ‘সিদ্ধার্থ ধরের’ মা

আমার বলার কিছু নেই : ‘সিদ্ধার্থ ধরের’ মা

শ্রাবণী বসু, লন্ডন থেকে : সালোয়ার কামিজের উপর একটা গাঢ় রঙের কোট। গটগট করে হেঁটে গিয়ে সদর দরজাটা খোলার চেষ্টা করলেন সবিতা ধর। পারলেন না। হয়তো ভিতর থেকে আটকানো।

বাঙালির জঙ্গিযোগের সূত্রে সংবাদ শিরোনামে থাকা সিদ্ধার্থ ধরের মা সবিতা। প্রতি দিনের মতো সোমবারও দুপুরে বাড়ি ফিরলেন তিনি। কিন্তু দরজা খুলতে গিয়েই বিপত্তি। খুললো না। বেল বাজালেন। তা-ও সব চুপচাপ।

‘‘মিষ্টি, দরজা খোলো।’’, এ বার বেশ চেঁচিয়েই বললেন তিনি। ‘‘জানি না, কী করছে মেয়েটা! স্নানে গিয়েছে?’’, সবিতার গলায় একটা বিরক্তির ভাব স্পষ্ট। সিদ্ধার্থের বোন কণিকার ডাকনাম মিষ্টি। দাদার জঙ্গি দলে যোগ দেওয়া নিয়ে প্রথমে কণিকা বলেছিলেন, ‘‘পুলিশের সন্দেহ সত্যি হলে, নিজের হাতে খুন করব দাদাকে।’’ তবে কয়েক দিনের মধ্যেই স্বীকার করেছিলেন তিনি, সিরিয়া চলে যাওয়ার পরেও দাদার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল তার। এমনকী বাড়িতেও ফোন করতো সিদ্ধার্থ। কথাও হতো তখন।

বড় ক্লান্ত লাগছিল সবিতাকে। বিষণ্ণ। বেশ কয়েক বার একটা কথাই বলছিলেন তিনি, ‘‘আমাদের একটু সামলাতে দিন। আমি এখন কিছুই বলতে চাই না। আমার বলার কিছু নেই।’’ তখনও বাড়ির সামনেটায় দাঁড়িয়ে সবিতা।

সিদ্ধার্থের খবরটা পাওয়ার পর পরই স্বাভাবিক ভাবে দেশি-বিদেশি সব সংবাদমাধ্যমের কৌতূহলের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে উত্তর লন্ডনের পামার্স গ্রিন এলাকার এই বাড়িটা। আনাগোনা বেড়েছে বহু লোকের। সবিতার অনুমান, সেই কারণেই বোধহয় নিরাপত্তার জন্য ভিতর থেকে দরজাটা ছিটকিনি দিয়ে রেখেছেন কণিকা ওরফে মিষ্টি।

দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই কথা বলছিলাম। আর পাঁচটা বাঙালির মতোই স্থানীয় দুর্গা পুজায় যেতেন সবিতারা। হৈচৈ করতেন। আনন্দ করতেন। কিন্তু হঠাৎ যেন জীবনটা
কেমন বদলে গেল। সবার মাঝে নয়, এখন সবাইকে দূরে সরিয়ে রেখে একা থাকতেই পছন্দ করছেন সবিতা।

‘‘আচ্ছা, নাতিদের মিস্ করেন?’’, এ প্রশ্নটায় খানিক থমকালেন সবিতা। টানটান মুখটায় একটা লালচে আভা। ছলছল চোখ। মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে আরও জোরে জোরে দরজাটা ধাক্কা দিতে লাগলেন তিনি।

ওই মুহূর্তেই হাজির আর একটি সংবাদমাধ্যম। তবে মিনিটের মধ্যেই বদলে গেল সবিতার মুখ। দৃঢ় কণ্ঠে কাটা কাটা ইংরেজিতে বললেন, ‘‘আমাদের অযথা হয়রানি করা হচ্ছে। আমি কিচ্ছু বলবো না।’’ ইতিমধ্যে মিনিট দশেক কেটে গিয়েছে। তত ক্ষণে দরজাও খুলেছেন কণিকা। কোনও মতে বাড়ির ভিতরে ঢুকেই সবিতা সজোরে বন্ধ করে দিলেন দরজাটা।

যদিও তার চোখ চিকচিক করছে তখনও। নাতির জন্য, নাকি ছেলের?

১২ জানুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ/এসএস/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে