আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বাড়ি ভারতে কিন্তু পড়া-লেখা করার জন্য আসতে হয় বাংলাদেশে। তাদের পরিবারের বড়দের সকলের রয়েছে ভারতের রেশন কার্ড এবং পরিচয়পত্র। কিন্তু জন্মসূত্রে ভারতীয় হওয়া সত্ত্বেও এই সব পরিবারের ছেলেমেয়েদের পড়তে আসতে হয় সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশের স্কুলে। কারণ, কাছাকাছি আর কোনও স্কুল নেই। এর ফলে ভারতের নাগরিক হওয়া শর্তেও ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতিদিন গাইছে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত। তার থেকেও বড় কথা, ‘জাতীয় সঙ্গীত’ গাইতে গিয়ে তারা বলে ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি...’ এবেলার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানা যায়।
বাংলাদেশ সীমান্তের জিরো পয়েন্টে দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি সীমান্ত লাগোয়া নিচা-গোবিন্দপুর গ্রামের কাছাকাছি কোনও স্কুল না থাকায় এখানকার ছেলেমেয়েদের বেশির ভাগই পড়াশোনা শিখতে যায় বাংলাদেশের বিরামপুর থানার চণ্ডীপুর এলাকার স্কুল অথবা মাদ্রাসায়। বাংলাদেশের স্কুলে পড়াশোনার সুবাদে তারা ভারতের জাতীয় সঙ্গীত ভুলে গিয়ে "আমার সোনার বাংলা" কেই নিজেদের জাতীয় সঙ্গীত বলে জানে।
গ্রামবাসীরা বলছে, রাজ্যে সরকার পাল্টেছে। কিন্তু তাদের অবস্থা পাল্টায়নি। ২০০৫ সাল দিকে নিচা-গোবিন্দপুর গ্রামে বঙ্গীয় স্বাক্ষরতা প্রসার সমিতির মাধ্যমে নামমাত্র একটি শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের উদ্বোধন করেছিলেন সিপিএম-এর তত্কালীন জেলা সম্পাদক মানবেশ চৌধুরী। কিন্তু উদ্বোধনই শেষ তার পরে আর কাজ এগোয়নি। নামেই স্কুল ঘরতো তো দূরের কথা, একটা চালা পর্যন্ত নেই। গ্রামের মাঝে বাঁশ ঝাড়ের নীচে বসে বাচ্চারা লেখাপড়া করত।
এই অবস্থা দেখে গ্রামেরই আবুল হোসেন মোল্লা নামে এক কৃষক স্কুল তৈরির জন্য জমি দান করেছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও স্কুলবাড়ি তৈরি হয়নি। গ্রাম থেকে বেশ কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পাঞ্জুল ত্রিমোহিনী ও হিলি হাইস্কুল।
ফলে একপ্রকার বাধ্য হয়েই সন্তানদের বাংলাদেশের স্কুলে পাঠাচ্ছেন অভিভাবকরা। প্রায় তিন বছর আগে, অর্থাৎ বর্তমান মোদি সরকারের আমলে, স্থানীয় পঞ্চায়েতের সহযোগিতায় নিচা-গোবিন্দপুর গ্রামের ভিতর আবদুল হোসেন মোল্লার জমিতে স্কুল বিল্ডিং তৈরি হয়েছিল। সেখানে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের পঠনপাঠন শুরু হওয়ার দু'মাসের মধ্যেই তা বন্ধ হয়ে যায়। আজ পর্যন্ত এই স্কুলটি আর চালু করার উদ্যোগই নেয়নি প্রশাসন।
দক্ষিণ দিনাজপুর প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান কল্যাণ কুণ্ডু জানিয়েছেন, ছেলেমেয়েরা বাংলাদেশে গিয়ে পড়াশোনা করছে, এমন খবর তার জানা নেই। তবে স্কুল বিল্ডিং বন্ধ হয়ে পড়ে থাকার খবর স্বীকার করেছেন। তার দাবি, ‘বাম আমলের বঙ্গীয় স্বাক্ষরতা প্রসার সমিতি বহু আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এসএসকে অথবা অন্য কোনও ভাবে স্কুলটি ফের চালুর ব্যাপারে চেষ্টা চালাচ্ছি।’
১৩ জানুয়ারি, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই