শুক্রবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০২২, ০৩:২৪:২৮

বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ায় ছিটকে পড়ছে মেঘালয়ের যে গ্রাম

বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ায় ছিটকে পড়ছে মেঘালয়ের যে গ্রাম

রঞ্জন বসু, দিল্লি থেকে : বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ভারতের মেঘালয়ে ইস্ট খাসি হিলস জেলায় একটি ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম লিংখং। এখানে সাকুল্যে গোটা সতেরো কী আঠারোটি পরিবারের বসবাস। গ্রামের মোট জনসংখ্যা বড়জোর একশ’র কাছাকাছি। নিস্তরঙ্গ এই গ্রামের বাসিন্দাদের কয়েক দিন ধরে রাতে ঘুম নেই। কারণ, বাকি ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় তারা।

মূলত চার হাজার কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ বাংলাদেশ সীমান্তের পুরোটা জুড়ে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কাজ তড়িঘড়ি শেষ করার যে সিদ্ধান্ত ভারত নিয়েছে, সেই ধাক্কা এসে পড়েছে লিংখংয়েও। সীমান্তের জিরো লাইনের ঠিক ওপরেই অবস্থিত গ্রামটি। সীমান্তের অন্যত্র জিরো লাইন থেকে অন্তত ১৫০ গজ দূরে বেড়া বসানো হলেও স্থানীয় পাহাড়ি টপোগ্রাফির জন্য ওই গ্রামে সেই সুযোগ নেই। 

ফলে বেড়া দিতে হলে জিরো লাইন বরাবরই দিতে হবে। তাতে পুরো গ্রাম আর তার শ’খানেক অধিবাসী বাকি ভারত থেকে আলাদা হয়ে পড়বে। এ কারণে গ্রামবাসীরা বেশ কয়েক বছর ধরে লিংখং সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া বসাতে দেননি। তাদের প্রতিবাদ ও বাধায় কর্তৃপক্ষ এগোতে পারেনি। কিন্তু ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ায় যেসব ‘ফাঁকফোকর’ আছে সেগুলো দূর করতেই হবে। 

এক্ষেত্রে লিংখংও ব্যতিক্রম হবে না। সেই অনুযায়ী কাজও শুরু হয়েছে জোরকদমে। মেঘালয়ের এলাকাটিতে খাসিয়া গ্রামগুলোতে মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা চালু রয়েছে। যথারীতি গ্রামের ‘মোড়ল’ বা মুখিয়া-ও একজন নারী। তার নাম ডাবলিং খাংসডির। তিনি বলছেন, ‘বেড়া বসানো হয়ে গেলে আমাদের পুরো গ্রামটাই ভারতের বাইরে ছিটকে যাবে। এটা কি আমাদের প্রতি সুবিচার হচ্ছে? আমাদের পূর্বপুরুষরা যুগ যুগ ধরে এখানে বাস করে আসছেন।’ 

‘ভারত সরকার এই গ্রামকে দেশের ভেতরে রাখার কোনও বুদ্ধিই কি বের করতে পারছে না?’– স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে দেন ওই নারী। তিনি ও তার পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও গ্রামের সবাই এখন অধীর উৎকণ্ঠা নিয়ে অপেক্ষা করছেন, তারা কি আগের মতো ‘ভারতের ভেতরেই’ থাকতে পারবেন?

ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) পক্ষ থেকে অবশ্য জানানো হয়েছে, সীমান্তের সব জায়গাতেই যে জিরো লাইন থেকে দেড়শ’  গজ দূরে বেড়া বসানো গেছে তা কিন্তু নয়। অনেক জায়গাতেই ৩০ বা ৪০ গজ, কোথাও প্রায় জিরো লাইন ঘেঁষেই বেড়া বসাতে হয়েছে। তবে তাদের মতে, এসব ব্যতিক্রম বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের অনুমতি বা সম্মতি পাওয়াটা জরুরি, যেটাকে টেকনিক্যাল পরিভাষায় বলে ‘কনকারেন্স’। সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে