আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ধমকানি নয়, কাজ দিয়ে মানুষকে চমকাতে হবে। বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রামে কর্মীসভা থেকে দলীয় নেতা-কর্মীদের এমনই নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একেবারে পঞ্চায়েত নির্বাচনের দামামা বাজিয়ে গ্রাম পঞ্চায়েতকে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, "মানুষের কাজ ফেলে রাখবেন না।
বর্ষা আসার আগে টেন্ডার করে কাজ শুরু করুন। বর্ষা এলে কাজ হবে না। তারপর পঞ্চায়েত ভোটের দিন ঘোষণা করে দেব। ভোটের আগেই কাজ শেষ করুন। মানুষকে কাজ দিয়ে চমকাতে হবে, ধমকানি দিয়ে নয়।"
শুধু গ্রাম পঞ্চায়েত নয়, জেলা পরিষদ এবং পঞ্চায়েত সমিতিকেও দ্রুত কাজ শেষ করার নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, কাজ ফেলে রাখবেন না। কাজ করুন চটপট।
সময়মতো কাজ সম্পন্ন করার পাশাপাশি দলীয় কর্মীদের সর্বদা এলাকাবাসীর পাশে থাকারও নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। একইসঙ্গে দুর্নীতি ও কাটমানি নিয়েও দলীয় কর্মীদের কড়া বার্তা দিলেন তিনি।
বর্তমানে শেষকৃত্য সম্পন্ন করার জন্য ২ হাজার টাকা করে দেওয়ার প্রকল্প ঘোষণা করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। সেই প্রসঙ্গ তুলে এদিন ঝাড়গ্রাম সহ গোটা রাজ্যবাসীর প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা, "কাউকে কবর দিতে হলে বা কফিন দিতে হলে বা দাহ করতে হলে ২ হাজার টাকা পাওয়া যায়।
কেউ যদি তার থেকে এক পয়সা কম দেন, আপনারা নেবেন না। যদি কেউ কম টাকা দেয়, তাহলে সরাসরি আমাকে চিঠি লিখুন, DM-কে চিঠি লিখবেন। থানায় তার বিরুদ্ধে FIR করবেন। তারপর যা ব্যবস্থা নেওয়ার আমি নেব।
প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ করবে।" উল্লেখ্য, সম্প্রতি বীরভূমে গীতাঞ্জলী বাড়ি প্রকল্পে তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সেই প্রসঙ্গেই এদিন তৃণমূল সুপ্রিমো দলীয় কর্মীদের কড়া বার্তা দিলেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
কাটমানি নিয়ে কড়া হুঁশিয়ারি দেওয়ার পাশাপাশি দলীয় কর্মীদের বিনা পয়সায় সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোরও বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। আগামী ২১ মে থেকে রাজ্যে ফের দুয়ারে সরকার কর্মসূচি শুরু হচ্ছে।
এখনও পর্যন্ত যাঁরা লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, স্বাস্থ্য সাথী, কৃষক বন্ধু প্রকল্পে আবেদন করেননি, তাঁদের দুয়ারে সরকার শিবিরে আবেদন করার কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এপ্রসঙ্গে প্রশাসনিক আধিকারিক থেকে দলীয় কর্মীদের মমতার বার্তা, "যাঁরা বিভিন্ন প্রকল্পে আবেদন করতে পারছেন না, ফর্ম ফিলাপ করতে পারছেন না, তাঁদের সাহায্য করুন। দুয়ারে সরকারে ফর্ম ফিলাপ বিনা পয়সায় করে দেবেন। কেউ এক পয়সা নেবেন না। এটা আমাদের সামাজিক দায়িত্ব।"
এদিন মুখ্যমন্ত্রী ঝাড়গ্রামের উন্নয়নে তাঁর সরকারের কাজের খতিয়ান তুলে ধরার পাশাপাশি নতুন বেশ কিছু ঘোষণাও করেন। তিনি বলেন, "আগে ঝাড়গ্রামে অনুর্বর জমি ছিল। এখন জমি উন্নত হয়েছে। জলকষ্ট দূর করতে আগেই ৫০০ কোটি টাকার চেক ড্যাম হয়েছিল।
এবার আরও পুকুর খনন হবে।" এছাড়া স্বনির্ভর গোষ্ঠীদের ছাগল-মুরগি প্রতিপালন থেকে মাদুর শিল্প, ধামসা-মাদল, পাথর শিল্পের উন্নয়নের ব্যাপারেও মুখ্যমন্ত্রীর তৎপর বলে জানিয়েছেন।
ঝাড়গ্রাম ট্যুরিজমের ভাল সম্ভাবনা আছে জানিয়ে এক্ষেত্রে সকলকে এগিয়ে আসারও আহ্বান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। একইসঙ্গে ঝাড়গ্রামের প্রতি তাঁর নিয়মিত নজর রয়েছে, বেলপাহাড়ি, লালগড় থেকে জামবনিতে কী হচ্ছে সে ব্যাপারে তিনি ওয়াকিবহাল বলেও জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সবমিলিয়ে, আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটের আগে ঝাড়গ্রামের মানুষের মন জয় করতে মুখ্যমন্ত্রীর এই সফর বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।