আন্তর্জাতিক ডেস্ক : দীর্ঘ ৬৮ বছরের অপেক্ষা শেষে শনিবার জনসমক্ষে প্রকাশ করা হল ভারতের কাছে থাকা নেতাজি সংক্রান্ত ১০০টি গোপন ফাইল। নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে ন্যাশনাল আর্কাইভে নেতাজি ফাইলগুলির ডিজিটাল সংস্করণ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। জানা গিয়েছে, এই ১০০টি ফাইলের মধ্যে ৪টি 'অতিগোপন' ও ২০টি 'গোপন' ফাইলও রয়েছে। এই আবেগঘন মুহূর্তে কান্নায় ভেঙে পড়েন নেতাজির পরিবারের সদস্যরা। টাইমস অফ ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানা যায়।
ভারতের রাজধানী দিল্লির ন্যাশনাল আর্কাইভে গিয়ে যে কেউ-ই নেতাজি ফাইল দেখতে পারবেন। তার বিষয়বস্তু পড়তে পারবেন৷ তবে মূল ফাইলে হাত দেওয়া যাবে না৷ তা রাখা থাকবে কাচের বাক্সের অন্তরালে৷ এর ডিজিটাল রূপ বড় স্ক্রিনে দেখা যাবে৷ এই ১০০টি ফাইলের অধিকাংশই এত দিনে ছিল ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র ও বিদেশ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের আওতায়৷ প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকেও কিছু ফাইল দেওয়া হয়েছে৷ এর পর প্রতি মাসে ২৫টি করে ফাইল প্রকাশের চেষ্টা হবে৷
নেতাজিকে নিয়ে সেই ১৯৪৫ সাল থেকে দেশবাসীর কৌতূহলের কারণ মূলত দুটো৷ এক, '৪৫-এর ১৮ অগস্ট তাইহোকুর বিমান দুর্ঘটনায় কি আদৌ মৃত্যু হয়েছিল তার? দুই, যদি তার মৃত্যু না-হয়ে থাকে, তা হলে কি পরিণতি হয়েছিল নেতাজির? প্রকাশিত এই ফাইলগুলো থেকে এই দুই প্রশ্নের কোনও সামাধান খু্জে পাওয়া যাবে কি না, তা যদিও এক্ষুনি বলা সম্ভব নয়।
একই সঙ্গে যে প্রশ্নটা উঠছে, ফাইলগুলোয় অত্যন্ত গোপনীয় তথ্য না-থাকলে, কেন স্বাধীনতার এতগুলো বছর পরেও তা প্রকাশ করা হয়নি? প্রধানমন্ত্রীর করে দেওয়া কমিটিই বা কেন প্রথমবার জানিয়েছিল, এই সব ফাইল প্রকাশের দরকার নেই, তা নিয়েও কৌতূহলি মানুষজন।
জানা গিয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে নেতাজি অন্তর্ধান রহস্য নিয়ে ৪১টি অতি-গোপন ফাইল রয়েছে৷ মুখার্জি কমিশনের প্রধান বিচারপতি মনোজ মুখার্জি এই ফাইলগুলি তদন্তের স্বার্থে দেখতে চেয়েছিলেন৷ কিন্তু তাকেও মাত্র দু'টি ফাইল দেখার অনুমতি দেওয়া হয়৷ এভিডেন্স অ্যাক্টের ১২৩ ও ১২৪ নম্বর ধারা এবং ভারতীয় সংবিধানের ৭৪ (২) ধারা দর্শিয়ে আটকে দেওয়া হয় বাকি ফাইলগুলি৷ বিশেষজ্ঞদের ধারণা, নেতাজি-অন্তর্ধান নিয়ে জোরালো তথ্যপ্রমাণ যদি কিছু থাকে, তা হলে তা আছে এই ফাইলগুলোতেই৷ কিন্তু তা প্রকাশ পাওয়ার সম্ভাবনা অতি ক্ষীণ৷
এদিকে, দার্জিলিঙে এক অনুষ্ঠানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগের সুরে বলেন, আগে থেকেই নেতাজির মৃত্যুর খবর রটানো হয়েছিল। কেন, DNA টেস্ট করা হয়নি, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। বলেন, রাশিয়ায় কি হয়েছিল, আমরা তা জানতে চাই।
কেন্দ্রের মহাফেজ খানায় থাকা নেতাজি ফাইলের প্রকাশ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া, আমরা বিশ্বাস করি, এইসব নথিতথ্যের মধ্য দিয়েই সত্যটা একদিন সামনে আসবে। তার কথায়, নেতাজি সম্পর্কে সত্যটা আগামী প্রজন্মের সামনে আসা উচিত। এটা আমাদের দায়িত্ব, কর্তব্যের মধ্যে পড়ে।
২৩ জানুয়ারি, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই