আন্তর্জাতিক ডেস্ক : রাস্তায় ফেলে মাঝবয়সী এক পুরুষকে বেধড়ক মারধর করছে ৩০ বছর বয়সী এক তরুণী। কখনও চড়, কখনও বা লাথি। সাথে গালিগালাজ তো আছেই। তরুণীর হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা চালাচ্ছেন পুরুষটি। কিন্তু পারছেন না। এসময় সাদা শর্টস, গেরুয়া শার্ট পড়া ওই তরুণীকে মত্ত অবস্থায় চিৎকার-চেঁচামেচিও করতে দেখা যায়।
ইউটিউবে ছড়িয়ে পড়েছে এমনই এক ভিডিও। অবশেষ ওই তরুণীর পরিচয় পাওয়া গেছে। অঞ্জলি রামকিসুন নামের ওই তরুণী মায়ামির মেডিক্যাল কলেজ ‘জ্যাকসন হেলথ সিস্টেম’-এর চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী। নাম শুনে এশীয় মনে হলেও আসলে কোন দেশের নাগরিক তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ভিডিওটি সামনে আসার পরেই তরুণী নিজের সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং প্রোফাইল নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছেন।
এদিকে নিগৃহীত পুরুষটিরও পরিচয় পাওয়া গেছে। নিপাট ভদ্র ওই উবের চালককেই হেনস্থার জন্য মেডিক্যাল কলেজের তরফে সাসপেন্ড করা হয়েছে অঞ্জলিকে। কলেজ কর্তৃপক্ষ নিজেদের তরফে তদন্ত শুরু করেছে। অঞ্জলিকে বহিষ্কার করা হবে কি না, তা ঠিক হবে রিপোর্টের ভিত্তিতে।
ঘটনাটি গত রবিবারের। ঘটনাস্থল মায়ামির একটি পার্কিং এলাকা। তরুণীর হাতে উবের চালকের হেনস্থার কিস্সা ক্যামেরাবন্দি করেছেন প্রত্যক্ষদর্শী জুয়ান সিনকো। মঙ্গলবার ইউটিউবে ভিডিওটি আপলোড করেন তিনি।
আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, এ ক’দিনে ভিডিওটি দেখেছেন প্রায় চোদ্দো লক্ষ মানুষ। ফুটেজটি নজরে পড়েছে ‘জ্যাকসন হেলথ সিস্টেম’-এর কর্মীদেরও। তাঁদের অভিযোগের ভিত্তিতে অঞ্জলিকে তড়িঘড়ি সাসপেন্ড করেন কর্তৃপক্ষ।
ভিডিওর পাশাপাশি ইউটিউবে ঘটনার বিবরণও দিয়েছেন জুয়ান। জানিয়েছেন, গাড়িটি পার্কিংয়ে ছিল। এমন সময় হঠাৎই ওই তরুণী আসেন। জোর করে উঠে পড়েন গাড়িতে। বারবার অনুরোধেও নামেননি তিনি।
তরুণী ক্ষেপে যাচ্ছেন দেখে পুলিশকে ফোন করতে যান চালক। তখনই শুরু হয় মারধর। তরুণীর হাত ধরে তাঁকে বাধা দিতে চেয়েছিলেন তিনি। সফল হননি। ফল হয়েছে উল্টো। চালককে উত্তমমধ্যম দেওয়ার পর গাড়িটির উপর চড়াও হন তরুণী। কাগজপত্র ছিঁড়তে থাকেন, কাঁচি দিয়ে সিট ফুটিফাটা করে দেন, ভেঙে ফেলেন দিক নির্দেশকারী স্মার্ট ফোনটিও। চলতে থাকে তাণ্ডব।
ঘটনাস্থলে তত ক্ষণে এসে পৌঁছছে পুলিশ। তাদের দেখে সুর নরম হয় তরুণীর। কাকুতিমিনতি জুড়ে দেন। পুলিশ তাঁকে গাড়িতে তুলতে গেলে ক্ষমা চেয়ে নেন। জানান, গ্রেফতার হলে তাঁর মেডিক্যাল লাইসেন্স বাতিল হয়ে যেতে পারে।
পুলিশের হস্তক্ষেপে মনে কিছুটা জোর পান উবের চালক। ঝুট-ঝামেলার ভয়ে আইনি প্রক্রিয়ায় যেতে চাননি তিনি। সামান্য আর্থিক ক্ষতিপূরণ দাবি করে রেহাই দিয়েছেন তরুণীকে। পুলিশ বলে, ঝামেলার খবর পেয়ে এসেছিলাম ঠিকই। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনও রিপোর্ট হয়নি। তাই তদন্তের প্রশ্নই ওঠে না।
পুলিশ ছাড়লেও কলেজের এক ছাত্রীর এ হেন আচরণকে মোটে প্রশ্রয় দিতে রাজি নন কর্তৃপক্ষ।
গত অক্টোবরে সাউথ ক্যারোলাইনায় এমনই এক কাণ্ড ঘটেছিল। উবের চালকের উপর হামলার অভিযোগে সে বার চাকরি খুইয়েছিলেন কর্পোরেট কর্মী বেঞ্জামিন গোল্ডেন। গাড়ির ড্যাশবোর্ডে লাগানো ক্যামেরায় গোল্ডেনের কীর্তি ধরা পড়ে। সাজা পেয়ে ক্ষমা চেয়ে নেন গোল্ডেন। তিনি বলেন, ভিডিওটি দেখে আমি নিজেও লজ্জিত। অঞ্জলির কপালে কী আছে, এখন সেটাই দেখার।
২৪ জানুয়ারি ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএস