শনিবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০১৬, ০৬:২৯:২৩

ফুরফুরা শরিফে আসছেন মমতা বন্দ্যােপাধ্যায়

ফুরফুরা শরিফে আসছেন মমতা বন্দ্যােপাধ্যায়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : শুক্রবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফুরফুরা শরিফে আসছেন পিরজাদা ত্বহা সিদ্দিকির ডাকা এক সভায় যোগ দিতে৷ কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর সফরসূচিতে জায়গা পায়নি সিঙ্গুর৷ ফলে সিঙ্গুরের মানুষজন হতাশ। হতাশ শাসকদলের একটা বড় অংশও৷ কিন্তু কেউ মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছেন না৷ তবে আড়ালে আবডালে সিঙ্গুরের কোনো কোনো তৃণমূল নেতা বলছেন, 'মুখ্যমন্ত্রী হয়তো সিঙ্গুরের কথা ভুলেই গিয়েছেন কারণ তার এখন অনেক কাজ। সিঙ্গুরে আসার সময় কোথায় তার?' টাইমস অফ ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানা যায়।

বিরোধীরাও এই ইস্যুতে মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না৷ সিপিএমের হুগলি জেলা সম্পাদক সুদর্শন রায়চৌধুরীর মন্তব্য, 'মুখ্যমন্ত্রী এসে সিঙ্গুরের মানুষকে কি জবাব দেবেন? তিনি তো বড় গলা করে মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসার পরই সিঙ্গুরের কৃষকদের জমি ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন৷ তার পর সাড়ে চার বছর কেটে গিয়েছে৷ কোথায় গেল তার প্রতিশ্রুতি?' ত্বহা সিদ্দিকি কৌশল করে আজকের সভায় মুকুল রায়কেও আমন্ত্রণ জানিয়েছেন৷ মুকুল উপস্থিত থাকলে গত দশ মাসের মধ্যে আজই প্রথম তার সঙ্গে নেত্রীর এক মঞ্চে দেখা হবে৷ মুকুল আসেন কি না, তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে রাজনৈতিক মহল৷

আট বছর আগে (১৮ ডিসেম্বর) বাজেমেলিয়া গ্রামে টাটাদের ঘেরা পাচিলের ধারে বাড়ি থেকে অনেক কাছেই মাঠের মধ্যে মেলে সিঙ্গুর আন্দোলনের অন্যতম মুখ তাপসী মালিকের পোড়া মৃতদেহ৷ পরবর্তীকালে তাপসীর ওই মৃতদেহ ঘিরেই মমতার সিঙ্গুর আন্দোলন দানা বাঁধে৷ যা নিয়ে সারা দেশে, এমনকি বিদেশেও তোলপাড় শুরু হয়৷ তার পর থেকে এই দিনটিকে তৃণমূল শহিদ স্মরণ দিবস হিসেবে পালন করে থাকে৷ বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন মমতা মাত্র এক বার সিঙ্গুরে এসেছেন৷ কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি জেলায় প্রশাসনিক বৈঠক করতে এলেও কখনো সিঙ্গুরে আসেননি৷ ২০১২ ও ২০১৩ সালে মুখ্যমন্ত্রী সিঙ্গুরে প্রশাসনিক বৈঠক করতে এসেও সিঙ্গুরের মানুষের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি৷ বরং, বলা ভালো, পুলিশ ও প্রশাসন কাউকে তখন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ঘেঁষতে দেয়নি৷

এখানেই সিঙ্গুরের সাধারণ মানুষ ও নিচুতলার তৃণমূল কর্মীদের ক্ষোভ৷ তাদের বক্তব্য, মমতার কথাতেই তারা জমি আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন৷ অনেকে টাটাদের কারখানার জন্য জমি দিতে চাননি৷ বিরোধী নেত্রী থাকার সময় তিনিই যে কোনো মূল্যে জমি ফিরিয়ে দেয়ার কথা বলেছিলেন৷ অথচ আজ তার মুখে সিঙ্গুর নিয়ে কোনো কথাই শোনা যায় না৷ নাম না লেখার শর্তে হুগলির এক তৃণমূল নেতা বলেন, 'দিদি বলেছিলেন, প্রতি বছর ১৮ ডিসেম্বর আমি সিঙ্গুরে আসব৷ এখন ১৮ ডিসেম্বর তো দূরের কথা, মুখ্যমন্ত্রী সিঙ্গুরে কখনওই পা দেন না৷ দিলেও কোনো রকম প্রশাসনিক বৈঠক করে চলে যান৷'

আর এক নেতা বলেন, 'এলাকার অনিচ্ছুক চাষিদের আর কত দিন আমরা ভুলিয়ে রাখব? তারাই বা আর কত দিন দু'টাকা কেজি দরে চাল এবং ২০০০ টাকা করে ভাতা নিয়ে বেঁচে থাকবেন?' শাসকদলেরই এক নেতা জানাচ্ছেন, মমতা বিরোধী নেত্রী থাকার সময় ১৮ ডিসেম্বর একবারই সিঙ্গুরে এসেছিলেন৷ মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর তাপসী ও অন্য শহিদ রাজকুমার ভুলের মূর্তি উন্মোচনে মুখ্যমন্ত্রীর আসার কথা ছিল৷ কিন্তু তখন মা মারা যাওয়ায় তিনি আসতে পারেননি৷

তবে মমতা না এলেও নিয়ম করে দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় ১৮ ডিসেম্বর সিঙ্গুরে আসেন৷ দলীয় সূত্রের খবর, আজ নেত্রীর নির্দেশেই পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম সিঙ্গুরে উপস্থিত থাকবেন৷ কেন আসছেন না মুখ্যমন্ত্রী? এই প্রশ্নে মুখে কুলুপ এঁটেছেন নিহত তাপসীর বাবা মনোরঞ্জন মালিক৷ ফোন ধরেননি সিঙ্গুর আন্দোলনের প্রধান মুখ, মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মন্ত্রী বেচারাম মান্না৷ টেলিফোনে পাওয়া যায়নি সিঙ্গুরের কর্মকর্তা রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যকেও৷
৩০ জানুয়ারি, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে