সোমবার, ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১১:৫৫:৩৮

বাংলাদেশে গরু ‘পাচার’ পুরোপুরি বন্ধের দাবি

বাংলাদেশে গরু ‘পাচার’ পুরোপুরি বন্ধের দাবি

ঢাকা: বাংলাদেশে গরু ‘পাচার’ পুরোপুরি বন্ধের দাবি জানিয়েছে ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ (আরএসএস)। ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে সংঘের এক ‘চিন্তন-শিবিরে’ অংশ নিয়ে শীর্ষস্থানীয় নেতারা বলেছেন, গরু ‘পাচার’ নিয়ে সরকার কখনো আপস করতে পারে না।

গরু পাচার বিষয়ে সরকার কীভাবে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করতে পারে, তা খতিয়ে দেখতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দলটি।

বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি জরুরি বলে মনে করলেও সংঘের পরামর্শ, ‘অনুপ্রবেশের’ মোকাবিলা কঠোর হস্তে করতে হবে।

সংঘের আদর্শ ও নীতি অনুযায়ী বিজেপির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার কেমন কাজ করছে, তিন দিন ধরে শীর্ষস্থানীয় নেতারা তা খতিয়ে দেখেন। সংঘের আদর্শ মেনে চলা অন্যান্য সংগঠনের নেতারাও এই চিন্তন-শিবিরে প্রতিদিন অংশ নেন এবং নীতিগত বিষয়ে মন্ত্রী ও দলীয় নেতাদের প্রশ্ন করেন।

এই শিবিরে মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রীদের কাজের খতিয়ান দেখা হয়। শেষ দিন শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শিবিরে যোগ দেন।

সংঘ ও তার আদর্শ রূপায়ণকারী রাজনৈতিক দল বিজেপির মধ্যে সমন্বয় রক্ষার এই প্রচেষ্টা বছরে দু’বার করা হয়ে থাকে। সংঘচালক মোহন ভাগবতের উপস্থিতি ও তদারকিতে চলা এই বৈঠকে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো নিয়ে সংঘ ও সরকারের নীতি বিশেষভাবে পর্যালোচিত হয়। এখানেই উঠে আসে অনুপ্রবেশ ও গরু পাচার প্রসঙ্গ।

বাংলাদেশে গরু পাচার বন্ধে রাজনাথ সিংয়ের উদ্যোগকে স্বাগত জানানো হলেও চিন্তন-শিবিরের অধিকাংশের অভিমত, গরু পাচার কমলেও তা মোটেই বন্ধ হয়নি। সংঘের প্রবীণ নেতা গোবিন্দাচার্য এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। প্রধানত পশ্চিমবঙ্গের কোন কোন জেলার কোন কোন এলাকা দিয়ে বছরের কোন কোন সময় কত গরু বাংলাদেশে পাচার হয়, তার একটা বিস্তারিত বিবরণ সেই প্রতিবেদনে রয়েছে।

বৈঠকে সেই প্রতিবেদন আলোচিত হয় বলে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে। সংঘের নেতারা বৈঠকে বলেন, গরু পাচার নিয়ে সরকার কখনো আপস করতে পারে না। কীভাবে এ ক্ষেত্রে সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করতে পারে রাজনাথ সিংকে তা খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।

সংঘ নেতাদের কেউ কেউ এই বিষয়ে বিজেপি-শাসিত দুটি রাজ্য সরকারকে সজাগ থাকতে বলেন। এই নেতাদের বক্তব্য, রাজস্থান ও হরিয়ানা থেকে লাখ লাখ গরু পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশে চলে যায়। রাজ্যগুলো সজাগ থাকলে পাচারকারীরা গরুর পাল নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে পৌঁছাতে পারবে না।

সীমান্ত নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীও (বিএসএফ) বারবার এই বিষয়টি সরকারের নজরে এনেছে। তাদের বক্তব্য, রাজ্য সরকারের নানান গাফিলতি ও প্রশ্রয়ের কারণেই সীমান্তে গরু সমস্যা প্রকট হয়ে ওঠে। সংঘ নেতারা এ ক্ষেত্রে সরকারকে বিশেষ নির্দেশ দিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, গত ২ ফেব্রুয়ারি রাজনাথ সিং বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকা পরিদর্শনে এসে বাংলাদেশে গরু পাচার বন্ধ করতে বিএসএফ প্রধানকে নির্দেশ দেন। এরপরই গরু নিয়ে সীমান্তে কড়াকড়ি শুরু হয়। প্রায় সব সীমান্ত দিয়ে বন্ধ হয়ে যায় গরু ‘পাচার’।

চিন্তন-শিবিরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের উপস্থিতিতেই জানানো হয়, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের চমৎকার উন্নতি হলেও অনুপ্রবেশ সমস্যা রয়েই গেছে। এই সমস্যার ফলে আসাম ও পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী এলাকার জনবিন্যাসে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।

সম্প্রতি প্রকাশিত ধর্মীয় জনগণনার ফলের উল্লেখ করে বিভিন্ন সংঘ নেতা বলেন, অনুপ্রবেশ কমেছে ঠিকই, কিন্তু তা পুরোপুরি বন্ধ করতে যতটা সক্রিয়তা প্রয়োজন, সরকার ততটা সক্রিয় হতে পারেনি। কেন পারেনি, কী কী করণীয়, আরএসএসের পক্ষ থেকে সে বিষয়ে একটি নির্দেশনামা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দেওয়া হয়।

 

আরএসএসের এই উদ্যোগ নিয়ে কংগ্রেস অবশ্য প্রশ্ন তুলেছে। দলের নেতা মনীশ তিওয়ারি বলেছেন, এই সরকারের রিমোট কন্ট্রোল যে আরএসএস, তা আবার প্রমাণিত।

কেন্দ্রীয় সরকার সংসদ না সংঘ কার কাছে জবাবদিহিতে বাধ্য সেই প্রশ্নও উঠেছে আরো আগেই। প্রধানমন্ত্রীসহ বিজেপির সব মন্ত্রী, দলীয় সভাপতি অমিত শাহসহ শীর্ষ নেতারা পালা করে তিন দিনের এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে