আন্তর্জাতিক ডেস্ক: দুটি বিরল জলবায়ুগত পরিবর্তনের কারণের নাগাড়ে বৃষ্টি হয়ে চলেছে উত্তর ভারতের রাজ্য হিমাচল প্রদেশে। যার ফলে ওই রাজ্যের একটা বড় অংশ আকস্মিক বন্যায় তলিয়ে গেছে।
দিল্লির আবহাওয়া দফতর আগে থেকে অন্যান্য কয়েকটি রাজ্যে অতি বৃষ্টির সতর্কতা জারি করার পরও পাহাড়ে ভূমিধস এবং অন্যান্য ঘটনায় বুধবার সকাল পর্যন্ত হিমাচল প্রদেশের এই বন্যায় নিখোঁজ ৩৫ জন, উদ্ধার হয়েছে ১৩টি দেহ। পরিস্থিতি শুধু এখানেই নয় বরং বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ একই রকম বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
জাপানে মুষলধারে বৃষ্টির কারণে বন্যা ও কাদামাটির ধসে দুইজন নিহত এবং অন্তত ৬ জনের নিখোঁজ হওয়ার খবর মিলেছে। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১১ সালের হারিকেন আইরিনের ধ্বংসযজ্ঞের পর নিউইয়র্কে হাডসন ভ্যালি এবং ভার্মন্টে বন্যায় সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন সেখানকার মানুষ।
উত্তর, মধ্য এবং দক্ষিণ-পূর্ব চীনে বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভারী বর্ষণে তুরস্ক এবং কৃষ্ণ সাগরের উপকূলের নদীগুলো ফুলেফেঁপে উঠেছে। যে কোনও সময় সেখানেও একটা বিড়াট এলাকা প্লাবিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন যে, এই সমস্ত বন্যার ঘটনাগুলি তাদের অবস্থানগত কারণে পৃথক হলেও, এগুলির মধ্যে কিছু পরিস্থিতিগত মিল রয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলেছেন যে, এই বন্যাগুলি একটি উষ্ণ বায়ুমণ্ডলে তৈরি হওয়া ঝড়-বৃষ্টির ফল।
উষ্ণ বায়ুমণ্ডলে তৈরি হওয়া নিম্নচাপ অতি ভারী বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি করেছে ওই এলাকাগুলিতে। একটি উষ্ণ বায়ুমণ্ডল অনেক বেশি আর্দ্রতা ধারণ করার ক্ষমতা রাখে, যার ফলে সৃষ্ট ঝড়ের ফলে আরও বেশি বৃষ্টিপাত হয় যা মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনে।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, কার্বন ডাই অক্সাইড এবং মিথেন বায়ুমণ্ডলকে দ্রুত উত্তপ্ত করে তুলছে। পৃথিবী থেকে মহাকাশে তাপ বিকিরণ করার পরিবর্তে এই উপাদানগুলি তাপ আরও ধরে রাখছে। যার ফলে বাড়ছে পৃথিবীর তাপমাত্রা। অনেক আগেই বিজ্ঞানীরা যে অতিরিক্ত উষ্ণায়নের ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, বর্তমান পরিস্থিতি সেই দিকেই দ্রুত এগোচ্ছে।
বর্তমান যে পরিস্থিতি তাতে ভালো কিছু আশা করা যাচ্ছে না। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা যা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো হওয়ার কথা তা এই শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে ২০ থেকে ৫০ গুণ বেড়ে যেতে পারে।
২০২২ সালের একটি সমীক্ষায়, গবেষকরা বলেছিলেন যে ২১০০ সালের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্বের মতো জায়গাগুলিতে গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহ দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। যদিও জলবায়ু পরিবর্তন এই ঝড়, প্রবল বৃষ্টিপাতের আসল কারণ নয়। এর পেছনে রয়েছে উষ্ণ এবং আর্দ্র বায়ুমণ্ডলের প্রভাব। সূত্র: আজতক (ইন্ডিয়া টুডে)