আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পাহাড়-জঙ্গলে ঘেরা অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা এই ছোট্ট গ্রামে প্রায় তিন হাজার মানুষ বসবাস করেন। এই গ্রামের প্রায় সকল বাসিন্দাই খুব দরিদ্র। তবে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের হাজার হাজার মানুষ এই গ্রাম দেখতে এখানে ছুটে আসেন।
এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে নয়, এই গ্রামের বাসিন্দাদের দেখতে, তাদের সাধারণ অথচ অদ্ভুৎ জীবনযাত্রা প্রত্যক্ষ করতে এখানে ছুটে আসেন হাজার হাজার পর্যটক। কারণ, এই গ্রামের প্রায় সকলেই কানে শোনেন না, শ্রবণশক্তিহীন। তাই একে অপরের সঙ্গে তারা কথাও বলেন বিশেষ সাংকেতিক ভাষায়!
এই গ্রামের প্রায় তিন হাজার বাসিন্দা একে অপরের সঙ্গে যে সাংকেতিক ভাষায় কথা বলেন সেটির নাম ‘কাতা কোলক’। এই গ্রামের সকলেই বধির নয়, তবে অধিকাংশ বাসিন্দাই মূক-বধির হওয়ার সকলেই ‘কাতা কোলক’ সংকেতে একে অপরের সঙ্গে কথাবার্তা বলেন।
ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপের উত্তরে অবস্থিত এই বিচিত্র গ্রামের নাম বেংকালা (Bengkala)। যদিও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের হাজার হাজার পর্যটকের কাছে এই গ্রাম ‘The Village Of Deaf’ বা ‘বধিরের গ্রাম’ নামেই বেশি পরিচিত!
মূলত, চাষাবাদ আর পশুপালনই এই গ্রামের বাসিন্দাদের প্রধান জীবিকা। তবে এখানে আসা বিদেশি পর্যটকদের থেকেও গ্রামবাসিদের বেশ কিছুটা উপার্জন হয়। এই গ্রামে আসা পর্যটকদের সঙ্গেও ‘কাতা কোলক’ সংকেতে ইশারায় কথা বলেন বেংকালার বাসিন্দারা।
এই ‘কাতা কোলক’ নামের বিশেষ সাংকেতিক ভাষাটি বেংকালা গ্রামের ঐতিহ্যেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। তবে বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে, এই গ্রামের মানুষ এখানে আসা পর্যটকদের সুবিধার্থে আন্তর্জাতিক সাংকেতিক ভাষাও শিখতে শুরু করেছেন।
ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপের উত্তরের বেংকালা গ্রামে দেশ-বিদেশ থেকে ছুটে আসা পর্যটকদের মূল আকর্ষণ হল ‘জাঞ্জের কোলক’ বা বধিরদের নৃত্য। এর জন্য বিশেষ সাজ-পোশাকে তৈরি হয়ে পর্যটকদের মনোরঞ্জনের চেষ্টা করেন বেংকালার বাসিন্দারা।
বিজ্ঞানীদের মতে, এই গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দাই বিরল এক জিনগত ত্রুটির শিকার, যে কারণে গ্রামের অনেকেরই শ্রবণশক্তি অত্যন্ত ক্ষীণ বা বধির। এই বিশেষ জিনগত ত্রুটিকে বিজ্ঞানীরা DFNB3 নামে চিহ্নিত করেছেন।
এই DFNB3 জিনগত ত্রুটির কারণে মানুষের শ্রবণশক্তি অত্যন্ত ক্ষীণ হয়ে যায় বা তারা বধির হয়ে যান। বিজ্ঞানীদের দাবি, মূলত DFNB3-এর কারণেই ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপের বেংকালা গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দারই শ্রবণশক্তি অত্যন্ত ক্ষীণ বা তারা বধির।