শনিবার, ১২ আগস্ট, ২০২৩, ১০:৫৩:৫৩

ভয়াবহ দাবানলে মৃতের সংখ্যা ৬৭

ভয়াবহ দাবানলে মৃতের সংখ্যা ৬৭

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: হাওয়াইয়ের দাবানল একটি ভয়াবহ মাইলফলক পৌঁছেছে। দাবানলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৭ জনে। ফলে দেশটির ইতিহাসে এটি সবচেয়ে মারাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগে পরিণত করেছে। এছাড়া আরো শতাধিক নিখোঁজ রয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

তাই নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। লাহাইনার কিছু সংখ্যক বাসিন্দাদের তাদের আগুনে ক্ষতিগ্রস্থ বাড়িতে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা আগুন থেকে বেঁচে যাওয়া মালামাল নিতে পারেন। বাসিন্দারা বলছে, তারা তাদের জীবনে এমন  দুর্যোগ আগে কখনও দেখেনি। এই সপ্তাহের গোড়ার দিকে অগ্নিকাণ্ডের ফলে ঐতিহাসিক শহরের বেশিরভাগ অংশ ধ্বংস হয়ে গেছে।

এরপর রাজ্যের কর্মকর্তারা শুক্রবার প্রথমবারের মতো বাসিন্দাদের জন্য লাহাইনাতে ঢোকার অনুমতি দেয়। তবে যারা ফিরছে তারা যে সেখানের বাসিন্দা, তার জন্য প্রমান দেখাতে হবে। কিন্তু কিছু বাসিন্দা বলছে, তাদের জন্য প্রমাণ দেখানো কঠিন হয়ে পড়বে। কারণ অনেকেই শুধু কিছু কাপড় নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গিয়েছিল।

এদিকে এলাকাটিতে প্রতিদিন স্থানীয় সময় সকাল ১০ থেকে ৬ টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছে। শহরের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ স্থানে শুধু কিছু অনুসন্ধান এবং উদ্ধারকর্মীরা থাকতে পারবে। পশ্চিম মাউই এর লাহাইনাতে এখনও বিদ্যুৎ এবং পানি নেই। অনুসন্ধান কর্মীরা এখনও এলাকায় দাবানলে নিখোঁজদের সন্ধান করছেন। নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবার স্বজনদের পাওয়ার অপেক্ষায় আছে।

অনেক পরিবার জানিয়েছে, তারা সবচেয়ে খারাপ আগুনের মধ্যেও লাহাইনাতেই থেকেছে। শুধুমাত্র অতি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে বৃহস্পতিবার এলাকার থেকে বাইরে গিয়েছে। তাদের ঘর তখনও দাঁড়িয়ে ছিল, তারা অন্ধকারেই বসে ছিল। কিন্তু বাড়ি ছেড়ে যাননি। তারা বলছে মৃতের সংখ্যা আরো বাড়বে।

গভর্নর জোশ গ্রিন শুক্রবার হাওয়াইয়ানদের সতর্ক করে বলেছেন, ‘লাহাইনা একটি বিধ্বস্ত অঞ্চল। এমন আবস্থায় অঞ্চলটিকে দেখতে হবে তা কখনো ভাবিনি। সবাই খুব নিরাপদ থাকুন, খুব সতর্ক থাকুন।’

গত মঙ্গলবার এই দাবানলের সূত্রপাত হয়েছিল এবং পরে হারিকেন ডোরার প্রভাবে তৈরি হওয়া প্রচণ্ড বাতাসের কারণে তা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর কর্তৃপক্ষ প্রায় ১৪ হাজার পর্যটককে সেখান থেকে সরিয়ে নেয়। তবে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট না থাকায় এখনো অনেক মানুষের সন্ধান পায়নি কর্তৃপক্ষ। শহর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মাউইয়ের প্রায় ১১ হাজার মানুষ এই দুর্যোগের মধ্যে বিদ‍্যুৎহীন অবস্থায় আছে।

গভর্নর জোস গ্রিন বলেছেন, ইতিমধ্যে বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়া হাজার হাজার মানুষের জন্য ঘরবাড়ি তৈরি করতে হবে। প্রাথমিকভাবে হোটেলগুলোতে দুই হাজার কক্ষ চাওয়া হয়েছে তাদের জন্য। এ ছাড়া যেসব এলাকায় লোকজন এখনো বসবাস করতে পারছে, সেখানকার মানুষদের তাদের বাড়ির অতিরিক্ত কক্ষে আশ্রয়হীনদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর গ্রিন বলেন, ‘এটা হাওয়াই অঙ্গরাজ্যের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ। মৃতের সংখ্যা এখনো বাড়ছে। শত শত ঘর ধ্বংস হয়ে গেছে।’ তিনি আরো বলেন, লাহাইনাকে আবার নতুন করে গড়ে তুলতে বহু বছর লাগবে। এই শহরটিই মূলত দাবানলের কেন্দ্রবিন্দু। গভর্নর বলেন, ‘লাহাইনার ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র দেখলে আপনি বিস্মিত হবেন। সব ভবনই নতুন করে তৈরি করতে হবে। এটা হবে একটা নতুন লাহাইনা।’

স্থানীয় কোস্ট গার্ড বলেছে, তারা উপকূলীয় শহর লাহাইনা থেকে ১৭ জনকে উদ্ধার করেছে। তীব্র গরম থেকে বাঁচতে সেখানে অনেকে সাগরের পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। স্থানীয় পুলিশ বলছে, ঠিক কতো মানুষ এখনো নিখোঁজ আছে তা এখনো তাদের জানা নেই। তবে সংখ্যাটি এক হাজারের কম হবে না। পুলিশ প্রধান জন পেটেলিয়ের অবশ্য বলেছেন, এর মানে এই নয় যে এসব মানুষ মারা গেছে। পুরো দ্বীপে এখন বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট নেই। সে কারণে লোকজনকে খুঁজে পাওয়াটা কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছেন তিনি। সূত্র : বিবিসি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে