আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর পুলিশি নির্যন্তন নতুন কিছু নয়। তবে এবার প্রতিবাদরত ছাত্রছাত্রীদের ওপর পুলিশের বেধড়ক লাঠিচার্জ ও মারধরের ঘটনা ঘটেছে। ওই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজাকি যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এটি প্রকাশ্যে আসার পর চলছে দেশজুড়ে তোলপাড়। বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় বইছে। সোচ্চার হচ্ছে বিরোধীরা। ফলে বিপাকে পড়েছে সরকার।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ছাত্রীদের চুল ধরে টেনে মাটিতে ফেলে সজোরে থাপ্পড় মারছে পুলিশ সদস্যরা। ভারতের রাজধানী দিল্লির ওই ঘটনায় বিজেপি সরকার সমর্থক হিন্দুত্বাদী সংগঠন ‘আরএসএসের গুন্ডারাও’ পুলিশের সঙ্গে মারপিটে যোগ দিয়েছিল বলে অভিযোগ করেছে মারধরের শিকার ছাত্র সংগঠনের নেতারা।
আরএসএস সদর দফতরের সামনে আয়োজিত শনিবারের ওই বিক্ষোভ হয়। হায়দ্রাবাদে দলিত ছাত্র রোহিত ভেমুলার মৃত্যুর প্রতিবাদ জানাতে বামপন্থী ছাত্র সংগঠন আইসা-র উদ্যোগে ঐ বিক্ষোভ কর্মসূচী নেওয়া হয়েছিল।
আরএসএস অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। আর দিল্লি পুলিশ বলছে তারা শুধু দুই ছাত্রগোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ থামানোর চেষ্টা করছিল।
ঘটনাটি দুদিন আগের হলেও এই ভিডিওটি সামনে এসেছে সোমবার সকালেই। আর তারপরই তা দিল্লি পুলিশ ও তারা যাদের নিয়ন্ত্রণে, সেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছে।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে পুলিশকর্মীরা ছাত্রছাত্রীদের ওপর নির্বিচারে লাঠি চালাচ্ছেন, পুরুষ কনস্টেবলরা ছাত্রীদের চুলের মুঠি ধরে সজোরে চড় মারছেন ও মাটিতে আছড়ে ফেলছেন। তাদের সাথে হাত মিলিয়ে পেটাচ্ছে সাদা পোশাকের কিছু যুবক। ভয়ে আর্তনাদ করে উঠছে মার খাওয়া ছাত্রীরা।
এই পুরো ঘটনাটি ঘটেছে দিল্লিতে আরএসএসের সদর দফতর যেখানে, সেই ঝান্ডেওয়ালাতে কেশব কুঞ্জের সামনে।
তাদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে পুলিশ বিনা প্ররোচনায় লাঠি চালায় বলে বিবিসির কাছে অভিযোগ করেন আইসার জাতীয় সভাপতি সুচেতা দে।
তিনি বলেন, ‘৩০ জানুয়ারি রোহিতের জন্মদিন আর গান্ধীজির মৃত্যুদিন – তাদের দুজনের মৃত্যুতেই আরএসএসের ভূমিকা ছিল বলে আমরা মনে করি। সে কারণেই সে দিন আরএসএস দফতর অভিমুখে মিছিল করে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম – কিন্তু দিল্লি পুলিশ ব্যারিকেড করে দুতিনশো ছাত্রীর ওপর নির্মম লাঠি চালাতে শুরু করে।’
আইসা-র জহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রধান শ্বেতা রাজ নিজেও ছিলেন মার খাওয়া ছাত্রীদের দলে। তিনি বলেছেন পুরুষ কনস্টেবলরা বেছে বেছে নিশানা করেছিল ছাত্রীদেরই।
আইসা-র এই অভিযোগে সমর্থন জানিয়েছে দিল্লির ক্ষমতাসীন দল আম আদমি পার্টিও। বস্তুত তাদের পক্ষ থেকেই পুলিশের লাঠিচার্জের ওই ভিডিওটি এদিন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়।
দলের মুখপাত্র সঞ্জয় সিং পুরো ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করে বলেন, দোষী পুলিশকর্মীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে জেলে পুরতে হবে। দিল্লির পুলিশ কমিশনার কেন এখনও নীরব, সে প্রশ্নও তোলেন তিনি।
দিল্লি পুলিশের এক মুখপাত্র অবশ্য জানিয়েছেন, ঘটনার দিন দুই ছাত্র গোষ্ঠীর বিবাদ থামাতেই তাদের ব্যবস্থা নিতে হয়েছিল। আর আরএসএস দাবি করেছে, তাদের কোনও কর্মী বা সমর্থক এই মারধরের সঙ্গে আদৌ জড়িত নয়। সূত্র : বিবিসি
০২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএস