আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বাবা বলেছিলেন, ঢের হয়েছে তোর পড়াশোনা। এবার বিয়েই দিয়ে দেব! বাড়ির কেউ কথা শোনেনি। বন্ধুগুলো পর্যন্ত বলেছিল, বাবা-মা যা বলছে, সেটাই কর।
কিন্তু কথা রাখলেন না তরুণী। ঝাড়খণ্ডের প্রত্যন্ত গ্রামের ১৪ বছরের মেয়ে মমতা সাউকে বিয়ে দিতে পড়শি গ্রামের ছেলের সঙ্গে ৪ ফেব্রুয়ারি ঠিক করেছিলেন তার বাবা।
বন্ধ করা হয় স্কুলে যাওয়া। বাড়ির নজরদারি এড়িয়ে আজ মমতা পৌঁছে যায় ঘাগরা থানায়। এসএস হাইস্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী পুলিশ অফিসারদের বলেছিল, বাবা-মা জোর করে বিয়ে দিচ্ছে তাকে। কিন্তু সে আরো পড়তে চায় সে। মমতার কথা শুনে তার বাবা-মায়ের নামে এফআইআর দায়ের করে পুলিশ।
আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে এ খবর জানা গেছে।
গুমলা জেলা সদর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে ঘাগরা থানা এলাকার একফোঁটা গ্রাম হাপামুনি। সেখান থেকে শ’দুয়েক কিলোমিটার কি তারও একটু বেশি দূরের একদল ‘বন্ধু’র কথা কি জানা ছিল মমতার?
পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়ার সেই বন্ধুরা— রেখা কালিন্দী, বীণা কালিন্দী, আফসানা খাতুনরা কিন্তু মমতার জন্য গর্বিত। ওরাও পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে রুখে দিয়েছিল নিজেদের বিয়ে।
গড়ে তুলেছিল বাল্যবিবাহ-বিরোধী একটা আন্দোলন! কিছুদিন আগে ‘দুনিয়া বদলে দেয়া ২০টি বাচ্চা’ নামে একটা বই বের করেছিল নেদারল্যান্ডসের এক প্রকাশনা সংস্থা। সেই কুড়িতে দু’টি নাম— রেখা কালিন্দী এবং শান্তির নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজাই!
বছর তিনেক আগে কেন্দ্রের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, পশ্চিমবঙ্গে যত মেয়ের বিয়ে হয়, তার ৫০ শতাংশেরও বেশি নাবালিকা! অনেকেই আজ বলেন, এই ছবিটা পাল্টানোর লড়াইয়ে পুরুলিয়াই কার্যত নেতৃত্ব দিচ্ছে। লড়াই ছড়িয়ে পড়ছে বাঁকুড়া, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, উত্তর ২৪ পরগনাতেও।
রেখা, বীণা, আফসানার পর শোনা গেছে সুনীতা মাহাতো, আরফা খাতুন, যমুনা মুদির মতো আরও অনেক নাম। বাঘমুণ্ডি গার্লস হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী বীণা এবার মাধ্যমিক দিচ্ছে। সে বলেছে, ‘আমরা যা করেছিলাম, আজ অন্য রাজ্যের একটা মেয়েও তা-ই করছে শুনে খুব ভালো লাগছে।
গুমলার পুলিশ সুপার ভীমসেন টুটি বলেন, মমতার মা-বাবাকে থানায় ডাকা হয়েছে। আর ওকে আপাতত শিশুকল্যাণ কমিটির কাছে রাখা হয়েছে। কমিটির দফতর থেকেই ফোনে মমতা বলল, বাবা খেতে কাজ করেন। বলে দিয়েছিলেন, ঢের লেখাপড়া হয়েছে। কোনোভাবেই বোঝাতে পারিনি।
সে বলে, বাধ্য হয়েই থানায় যাই। এক বন্ধু জানাল, মমতা তাদের বলেছিল, উচ্চশিক্ষার জন্য রাঁচি যেতে চায় সে। আজ যে বেরিয়ে এসেছিল, সেটা সম্ভবত স্কুলের স্যারেদের সঙ্গে দেখা করার ‘গুল মেরে'।
বছর দুয়েক আগে এমনই কাণ্ড ঘটেছিল বারাসতের ময়নায়। একাদশ শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী জয়নাভ ফারিনের বিয়ে দেয়ার তোড়জোড় করছিলেন তার সৎ-মা। অঙ্কের দিদিমণির ও আরও দু-এক জন বান্ধবীকে নিয়ে জয়নাভ চলে গিয়েছিলেন বারাসত থানায়।
তাকে হৃদয়পুরের ‘আরাধনা’ হোমে পাঠিয়েছিল পুলিশ। গতকালই সেখান থেকে বাড়ি ফিরেছেন জয়নাভ। হোমের কর্ণধার সর্বাণী চক্রবর্তী বলেন, উচ্চ মাধ্যমিকে ভালোভাবে পাস করে ও এখন অনার্স পড়ছে।
গুমলার এসপি বলেন, মেয়েটা যে থানায় এল, সেটাই দৃষ্টান্ত। এবার মমতার জীবনের গল্পটা নতুন করে লেখার পালা!
৩ ফেব্রুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম