আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে ৯/১১ পূর্ববর্তী বিশ্ব এবং ৯/১১ পরবর্তী বিশ্ব! এর মধ্যেই পাল্টে যেতে থাকে মুসলিমদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি। পশ্চিমা দেশগুলোতে মুসলিমদের প্রতি এমনভাবে নজরদারি রাখা হচ্ছে যে, মুসলিম মানেই সন্ত্রাসবাদী! এমন আচরণের ফলে বহু দেশেই আজ মুসলিমরা রয়েছে বেশ বিপাকে।
শুধু তাই নয়, প্রশাসনের সন্দেহ দৃষ্টি যেন কিছুতেই মুসলিমদের পিছু ছাড়তে চাচ্ছে না। এরমধ্যে ফ্রান্সের ঘটনার পর মুসলিমদের উপর যেন আরও বেশি নজরদারি রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি মুসলিমদের উপর চলছে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন।
দুনিয়া জুড়ে অবিশ্বাসের দম বন্ধ বাতাবরণের মধ্যে নির্বিরোধ, সমাজমনস্ক, বিবেকবান মুসলিম মনন আর্তনাদ করে বলার চেষ্টা করল, আমি এক জন মুসলিম, সন্ত্রাসবাদী নই! তা হলে আমিও কেন নজরদারির বাইরে নই?
এই প্রশ্নটিই আরও এক বার তুললেন মহম্মদ এলশিনবি (Mohammad Elshinawy)। ‘নিউ ইয়র্ক শহরের বিভিন্ন মসজিদে ইসলামের উপর বলতে শুরু করার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই অদ্ভুত কিছু ঘটনা ঘটতে লাগল। আমার সহযোগী এবং অনুগামীরা জানালেন, নিউ ইয়র্ক শহরের আইনরক্ষকেরা আমার এবং আমার বক্তৃতা সম্পর্কে তাঁদের নানা কথা জিগ্যেস করছেন। এর কয়েক দিনের মধ্যেই দেখলাম, আমার শ্রোতাদের মধ্যে কয়েকটি সন্দেহজনক চেহারা দেখা যাচ্ছে। এদের মধ্যে এক জনকে প্রায়ই দেখতাম, কিন্তু আমার কথার মধ্যেই তিনি প্রায়ই ঘুমিয়ে পড়তেন।’
‘ওয়াশিংটন পোস্ট’-এ মহম্মদ এলশিনবি লিখেছেন, ২০০৩-এ তিনি ব্রুকলিন কলেজে ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়তেন। তিনি বড় হয়েছেন নিউ ইয়র্ক শহরে। শহরটাকে ভালওবাসেন আরও পাঁচ জন আমেরিকাবাসীর মতো। কিন্তু বিশেষ করে ৯/১১-র পরে তিনি বুঝলেন, মুসলিমদের সঙ্গে কী ভাবে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে। তাঁদের প্রতি ঘৃণা ছ়ড়িয়ে পড়ছে বহু গুণ! এলশিনবি বলছেন, এই ঘৃণা ও বৈষম্য সত্ত্বেও আমি মানুষকে তাদের বিশ্বাসে অটুট থাকার কথা প্রচার করেছি। আমি কোনও অন্যায় করিনি। বরং হিংসা ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধেই বলে এসেছি। অথচ, গত এক দশক ধরে অনুভব করেছি, আমি লাগাতার নজরদারির মধ্যে রয়েছি।’ তাঁর ধারণা, কেউ বা কারা তাঁর পিছনে ছায়ার মতো লেগে রয়েছে। যে অপরাধের কোনও অস্তিত্বই নেই সেই অপরাধেরই সন্ধানে নিমগ্ন আইনরক্ষকেরা!
কিন্তু, ২০১৩-য় এলশিনবি-র আশঙ্কাই সত্য বলে প্রমাণিত হয়। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের এক অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদনে সামনে আসে, ৯/১১-র পরে মুসলিমদের উপর নিউ ইয়র্ক পুলিশের আগ্রাসী নজরদারির শিকার তিনিও। ওই প্রতিবেদন অনুসারে, পুলিশ অফিসারেরা নিউ ইয়র্কের সব মসজিদকে গোপনে জঙ্গি সংগঠনের তকমা দিয়ে দেন। ইমামদের উপরে গোয়েন্দাগিরি চলেছে, ধর্মীয় কথকতাও রেকর্ড করা হয়েছে। অথচ, কোনও কিছুই প্রমাণ করতে পারেনি পুলিশ।
৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসপি/এমএন