বুধবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬, ০৮:৩৭:১৫

৬ দিন বাঁচিয়ে রেখেছিল এয়ার পকেট!

৬ দিন বাঁচিয়ে রেখেছিল এয়ার পকেট!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সিয়াচেনে ১৯৬০০ ফুট উচ্চতায় সেনা ছাউনির ওপর ভেঙে পড়েছিল এক কিলোমিটার লম্বা ৮০০ মিটার উঁচু বরফের দেয়াল।  ১০ জন সেই তুষারধসের নিচে চাপা পড়েন।  শুধু হনুমন্থাপ্পাকেই জীবিত উদ্ধার করা গেছে।   

বরফের আস্তরণের ২৫ ফুট নিচে চাপা পড়ে যাওয়া সেই জওয়ানের শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিতে হাসপাতালে যান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।  সঙ্গে সেনাপ্রধান ও চিকিৎসকরা।

দিল্লির সেনা হাসপাতাল থেকে প্রকাশিত মেডিকেল বুলেটিনে জানানো হয়েছে, হনুমন্থাপ্পার মস্তিষ্কে অক্সিজেনের দীর্ঘ অভাবজনিত ক্ষতির চিহ্ন ধরা পড়েছে।  কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ।  দেশজুড়ে এখনো প্রার্থনা চলছে মৃত্যুর সঙ্গে যুঝতে থাকা সেনার আরোগ্য কামনা করে।

সিয়াচেনে ১৯৬০০ ফুট উচ্চতায় সেনা ছাউনির উপর ভেঙে পড়েছিল এক কিলোমিটার লম্বা ৮০০ মিটার উঁচু বরফের দেওয়াল।  ১০ জন সেই তুষারধসের নিচে চাপা পড়েন।  শুধু হনুমন্থাপ্পাকেই জীবিত উদ্ধার করা গেছে।

বরফের আস্তরণের ২৫ ফুট নিচে চাপা পড়ে যাওয়া সত্ত্বেও হনুমন্থাপ্পা বেঁচে যান এয়ার পকেটের জন্য।  বলছেন, উদ্ধারকারী দলের সদস্য এবং চিকিৎসকরা।  তাঁবু সমেত বরফের নিচে চাপা পড়েছিলেন হনুমন্থাপ্পা।  

ধসে আসা বরফের দেয়াল ছ’দিন ধরে জমতে জমতে পাথরের মতো শক্ত হয়ে যায়।  কিন্তু হঠাৎ ধসে আসার বরফের স্রোতের নিচে কোথাও কোথাও হাওয়া থেকে গিয়েছিল।  

সেই হাওয়া বাইরে বেরোতে না পারায় ধসের নিচে কোথাও কোথাও তৈরি হয়েছিল এয়ার পকেট।  তাঁবুসহ বরফে চাপা পড়া হনুমন্থাপ্পা কোপ্পড়কে ঘিরেও তৈরি হয়েছিল এমনই একটি এয়ার পকেট।  ফলে জমে পাথর হয়ে যাওয়া বরফের আস্তরণ খুব বেশি চাপ দেয়নি হনুমন্থাপ্পার শরীরে।

এই এয়ার পকেট তৈরি হওয়া তো মিরাকল বটেই।  চিকিৎসকরা বলছেন, বরফের উপরেই যেখানে মাইনাস ৪২ ডিগ্রি পর্যন্ত নেমে যায় তাপমাত্রা, সেখানে বরফের নিচে ৬ দিন ধরে কোনো খাদ্য-পানীয় এবং অক্সিজেন সরবরাহ ছাড়া বেঁচে থাকাও আর এক মিরাকল।

যখন বরফের তলা থেকে ওই ল্যান্স নায়েককে উদ্ধার করা হয়, তখন তার নাড়ির গতি খুব ক্ষীণ ছিল।  তিনি আচ্ছন্ন ছিলেন। লিভার এবং কিডনি কাজ করা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিল।  শিরায় শিরায় রক্ত ক্রমশ জমাট বাঁধার পরিস্থিতি তৈরি হতে শুরু করেছিল।

ফলে কমে এসেছিল রক্ত সঞ্চালন। হনুমন্থাপ্পার শরীর বরপের মতো ঠাণ্ডা হয়ে গিয়েছিল। উদ্ধারের পরই তাঁকে হেলিকপ্টারে দ্রুত দিল্লি পাঠানো হয়। হঠাৎ প্রবল ঠাণ্ডা থেকে বাইরে নিয়ে এসে তাপ দেওয়া শুরু হয় শরীরে।

হাসপাতালে পৌঁছনোর পর রক্ত রি-ওয়ার্মিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রক্ত সঞ্চালনের স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা শুরু হয়।  চরম ঠাণ্ডা থেকে উদ্ধারের কিছুক্ষণের মধ্যেই সম্পূর্ণ বিপরীত পরিস্থিতিতে পড়ায় উদ্ধার হওয়া সেনাকর্মীর শরীরে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর।

প্রচণ্ড ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া শরীরকে গরম করে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক করার চেষ্টা করতে গিয়ে অন্যান্য কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে।  কিন্তু এ ছাড়া অন্য কোনও পথও ছিল না চিকিৎসকদের সামনে।

সব সঙ্কটের মোকাবিলা করে ল্যান্সনায়েক হনুমন্থাপ্পা কোপ্পড়কে জীবনে ফেরানো সম্ভব হয় কি না তা ৪৮ ঘণ্টার আগে স্পষ্ট হবে না।  উৎকণ্ঠায় প্রহর কাটাচ্ছে গোটা দেশ।
১০ ফেব্রুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে