আন্তর্জাতিক ডেস্ক : গির্জা ভেঙ্গে তৈরি হচ্ছে আল্লাহর ঘর মসজিদ। ‘ফার্স্ট চার্চ অব ক্রিস্ট’ নামের পুরাতন এক গির্জার স্থানে নির্মাণ করা হবে নতুন এই মসজিদ। তবে খ্রিস্টানদের সাথে জোরাজুরি করে নয়, বরং অর্থের বিনিময়ে ওই স্থানে তৈরি হবে মসজিদটি। এই গ্রীষ্মেই সেটি উদ্ধোধন করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে গির্জা ভেঙ্গে সেখানে একটি নতুন মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা করছে মুসলিম আমেরিকান সোসাইটি (এমএএস)।
ওই এলাকায় আরো দুটি মসজিদ রয়েছে। ২০০০ সালে পালোস হাইটস-এ একটি এবং তার কিছু দূরে অরল্যান্ড পার্কের কাছে ২০০৪ সালে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন।
যদিও শিকাগো শহরতলীর দক্ষিণ পশ্চিমাংশে বেশ কয়েকটি মসজিদ রয়েছে। তবে মুসলিম আমেরিকান সোসাইটি বলছে মুসলিমদের সংখ্যা অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় সে মসজিদগুলোয় মুসল্লিদের জায়গা সংকুলান হচ্ছে না। তাই নতুন মসজিদ নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। তবে মনে হচ্ছে সবাই সংগঠনটির এ বক্তব্যের সাথে একমত নন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে মুসলিম আমেরিকান সোসাইটির অনেকগুলো শাখা রয়েছে। বেশিরভাগ অঞ্চলে মূলত তারাই মসজিদ নির্মাণ করে থাকে।
সংগঠনটির এক কর্মকর্তা জানান, তারা শিকাগো শহরের বাইরে অব্যবহৃত ‘ফার্স্ট চার্চ অব ক্রিস্ট’ নামের পুরাতন একটি গির্জা কিনেছেন করেছে সেখানে নতুন একটি মসজিদ নির্মাণের উদ্দেশ্যে। তারা আশা করছেন মসজিদটি এই গ্রীষ্মেই উদ্ধোধন করতে পারবেন।
পালোসের ঐ এলাকার ঘরে ঘরে একটি বেনামী প্রচারপত্রও বিলি করা হচ্ছে। মসজিদ নির্মাণের ফলে এলাকাটি ইসলামের কেন্দ্র এবং যানজটের কারণ হতে পারে বলে প্রচারপত্রটিতে দাবি করা হয়েছে।
প্রচারপত্রটি প্রতিটা বাড়ির মেইল বক্সে ফেলা হচ্ছে এবং অনেক সময় দরজার কাছেও পাওয়া গেছে।
এ বিষয়টি মুসলিম আমেরিকান সোসাইটি কর্তৃপক্ষকে ভাবিয়ে তুলেছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে এমন একটি ভবনকে ব্যবহার করা- যা আগে থেকেই ধর্মীয় উপাসনালয় হিসেবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে সরকারি অনুমোদন রয়েছে।
মুসলিম আমেরিকান সোসাইটির মুখপাত্র এবং ব্রিজভিউ মসজিদ ফাউন্ডেশনের সহসভাপতি ওসামা জামাল বলেন, ‘আমরা প্রচারপত্রটি দেখে খুবই বিস্মিত হয়েছি, কারণ স্থানীয় সমাজের সাথে আমাদের সম্পর্ক অনেক গভীর।’
তিনি আরো বলেন, ‘এমএএস এ জায়গাটি অব্যবৃহত এবং বিক্রয়যোগ্য এজন্য বাছাই করেনি, আরো ব্যাপার হলো এটি এমন একটি সরকার অনুমোদিত ‘জোন’ যাতে শুধুমাত্র ধর্মীয় উদ্দেশ্যে পরিচালনা করার অনুমতি রয়েছে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের বিশেষ কিছু সুবিধা পেয়ে থাকে।’
ওসামা জামাল বলেন, ‘আমরা অনেক বছর যাবৎ আমেরিকানদের অধিকার রক্ষায় একসাথে কাজ করে যাচ্ছি। স্বাস্থ্যসেবাকে সমর্থন দিচ্ছি। বাচ্চাদের অধিকার নিয়ে কাজ করছি। এর ফলে বাচ্চাদের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে বীমা পেতে সহজ হয়েছে। আমি একটি অবিভক্ত সামাজিক সংগঠনের কর্মী হিসেবে কাজ করছি- যার উদ্দেশ্য হচ্ছে বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতে একটি সম্মিলিত প্রতিবাদ গড়ে তোলা এবং ন্যায্যতা কায়েম করা।’
তিনি আরো বলেন, ‘এ শ্রেণির মধ্যে খ্রীষ্টান, মুসলিম, ইহুদিসহ আরো অনেক মানুষ রয়েছে যারা এ অঞ্চলে বসবাস করে। আমরা সকলে বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমের সাথে জড়িত রয়েছি বিশেষ করে এলাকার সন্ত্রাস মোকাবেলায়, উন্নত শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা সমুন্নত রাখা এবং প্রতিবন্ধিদের সহায়তায়। এটা কোনো ধর্মীয় বিষয় নয়, এটা দেশটির সাথে অংশীদার হওয়ার বিষয়।’
ফেব্রুয়ারির ৮ তারিখে একটি জনসভায় মসজিদ বিরোধী প্রচারপত্রটিকে অবৈধ এবং মুসলিমরা আমাদের প্রতিবেশি বলে স্থানীয় সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে কিছু অধিবাসীর মাঝে এ সিদ্ধান্তে অস্বস্তি থাকলেও পালোস পার্ক কর্তৃপক্ষ বলেছে শহর কতৃপক্ষ মসজিদ উদ্ধোধনে কোনো রকম বাঁধা সৃষ্টি করবে না।
জামাল বলেন, ‘আমরা এই বৃহৎ সমাজের একটি অংশ যারা রাস্তাকে নিরাপদ রাখে, যুব সমাজকে রক্ষা করে। এটাইতো মুসলিম সমাজের কাজ। দুর্ভাগ্যবশত অনেকেই জানেন না আমরা কি কাজ করছি।’ -আল জাজিরা
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএস