আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারত বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ হলেও সেখানকার মুসলিমরা বিভিন্ন ধরণের বৈষম্যের শিকার। নানা কারণে ভারতীয় মুসলিমরা পিছিয়ে আছেন। আর ওপার বাংলায় কী অবস্থায় আছেন মুসলমানরা? দেশটির সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় নানা তথ্য উঠে এসেছে। দেশটির নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন আনুষ্ঠানিকভােব সমীক্ষার রিপোর্টটি প্রকাশ করেছেন।
সমীক্ষাটি চালিয়েছে প্রতীচী ইনস্টিটিউট, অ্যাসোসিয়েশন স্ন্যাপ এবং গাইডেন্স গিল্ড। তাদের রিপোর্টে মুসলিমদের পিছিয়ে পড়ার কারণও চিহ্নিত করেছে ভারত সরকার। কিন্তু সমাধানের উদ্যোগ নেই বললেই চলে।
রিপোর্ট প্রসঙ্গে অমর্ত্য সেনের বলেন, পশ্চিমবঙ্গের দরিদ্র এবং বিভিন্ন সামাজিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিতদের মধ্যে অধিকাংশই মুসলমান। মুসলমানদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য সহ বিভিন্ন সামাজিক সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার পথে কোন বিষয়গুলি বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে, তা খুঁজে বার করতে হবে। পাশাপাশি নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের পর্যবেক্ষণ, উচ্চবর্গের মুসলমানদের বিশেষ সুযোগ সুবিধা দিলে, তাতে নিম্নবর্গের যে মুসলমানরা শিক্ষা, অর্থ, জমি থেকে বঞ্চিত, তাদের কোনও উপকার হয় না।
বিভিন্ন সভা-সমাবেশ থেকে প্রায়শই মুসলিমদের জন্য তাঁর সরকারের কাজের ফিরিস্তি দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু, বাস্তবে এরাজ্যের মুসলমানরা কেমন আছেন? তৃণমূল জমানায় সত্যিই কতটা উন্নতি হয়েছে তাঁদের? তা দেখতেই একটি সমীক্ষা করেছে প্রতীচী ইনস্টিটিউট, অ্যাসোসিয়েশন স্ন্যাপ এবং গাইডেন্স গিল্ড।
এই সমীক্ষার রিপোর্টেই প্রশ্নের মুখে পড়েছে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি। দু’দফায় এই সমীক্ষা হয়েছে ২০১২ ও ২০১৩ সালে। অর্থাত্ তৃণমূল জমানাতেই। সমীক্ষার রিপোর্টে বলা হয়েছে, এরাজ্যে যত সংখ্যক মানুষের মধ্যে সমীক্ষা করা হয়েছে, তার মধ্যে এক পঞ্চমাংশ মুসলিম এখনও নিরক্ষর।
২০১৫ সালের হিসেব অনুযায়ী, উচ্চপদস্থ সরকারি চাকরিতে মুসলিম প্রতিনিধিত্ব মাত্র ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। ২০১৩-১৪ আর্থিক বছরের হিসেব অনুযায়ী, এরাজ্যে সরকারি চাকরিপ্রাপ্ত হিন্দুর সংখ্যা যেখানে ৩ লক্ষ ২৪ হাজার ৪৬৭, সেখানে মুসলিমের সংখ্যা ১৯ হাজার ৩৪২।
সরকারিতে চাকরিতে মুর্শিদাবাদের মতো মুসলিম অধ্যুষিত জেলার প্রতিনিধিত্ব মাত্র ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। শুধু শিক্ষা বা চাকরি ক্ষেত্রেই নয়। অন্যান্য ক্ষেত্রেও যে বঞ্চনার শিকার মুসলিমরা, তা স্পষ্ট সমীক্ষায়।
সেখানে বলা হয়েছে, ১৮ শতাংশ মুসলিম এমন জায়গায় বাস করেন, যেখানে রাস্তা কাঁচা। সাইকেল চালানোরও অযোগ্য। মাত্র ৯ শতাংশ মুসলিম বাস করেন পাকা রাস্তা এলাকায়। মাত্র চার শতাংশ মুসলিম কংক্রিটে বাঁধানো রাস্তা পান। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পৌঁছতে হলে, ৩৫ শতাংশ মুসলিমকে চার কিলোমিটার যেতে হয়। ১২ শতাংশকে যেতে হয় অন্তত আট কিলোমিটার।
সমীক্ষার রিপোর্টে যেখানে পশ্চিমবঙ্গে মুসলমানদের দুর্দশার এই ছবি উঠে এসেছে, সেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, সংখ্যালঘু উন্নয়নে এরাজ্য নাকি এক নম্বরে! বিরোধীদের কটাক্ষ, মুখে যাই বলুন। মুখ্যমন্ত্রীর দাবিকে বড়সড় প্রশ্নের মুখে ফেলে দিল এই সমীক্ষা রিপোর্ট।
সমীক্ষা চালানো হয়েছে রাজ্যের ৮১টি ব্লকের ৩২৫টি গ্রাম এবং ৩০টি পুরসভার ৭৩টি ওয়ার্ডে। ৯৭ হাজার ১৭টি বাড়ি ঘুরে চার লক্ষ ৬৩ হাজার ৯০৪ মানুষের মতামত নেওয়া হয়েছে।
২০০৬ সালে ভারতে মুসলিমদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা খতিয়ে দেখে লোকসভায় রিপোর্ট পেশ করে সাচার কমিটি। সেই কমিটির রিপোর্ট অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল সিপিএমের কাছে। এবার এই আমলে মুসলিমদের নিয়ে এই রিপোর্ট।
অনেকে বলেন, সংখ্যালঘুরা রাজনীতির বোড়ে। ভোটব্যাঙ্কের স্বার্থে সব রাজনৈতিক দলই তাদের ব্যবহার করতে চায়। কিন্তু, তাদের উন্নয়নের দিকে যে কারও নজর থাকে না, সেটাই আরও একবার স্পষ্ট হল এই রিপোর্টে। মত পর্যবেক্ষকদের একাংশের।
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএস