আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মনোনয়নের টিকিট পেতে চাইলে ককাস এবং প্রাইমারি নির্বাচনগুলোতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া আবশ্যক। নইলে ফিকে হয়ে যায় দলীয় মনোনয়ন নিয়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে লড়াই করার সব স্বপ্ন। ডেমোক্রেট পার্টির হিলারি ক্লিনটনের ক্ষেত্রে হয়তো তা অনেকটা সত্য হওয়ার পথে।
কেননা, আইওয়া ককাসে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী বার্নি স্যান্ডার্সের চেয়ে সামান্য এগিয়ে থাকলেও নিউ হ্যাম্পশায়ার প্রাইমারি বা প্রার্থিতার প্রাক-নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য ব্যবধানে পিছিয়ে পড়েছেন। এমনটা যদি চলতেই থাকে, তাহলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে চূড়ান্ত মনোনয়নের ক্ষেত্রে আবারো মুখ থুবড়ে পড়তে পারেন তিনি।
নিউ হ্যাম্পশায়ার প্রাইমারিতে জয়ী হয়ে বেশ ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট মনোনয়নপ্রত্যাশী বার্নি স্যান্ডার্স। সময়ের সঙ্গে জনপ্রিয়তার পারদে ঊর্ধ্বগতি পরিলক্ষিত হওয়ায় তাকে চূড়ান্ত প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে ধরে নিয়েছেন ভক্ত-সমর্থকরা। কিন্তু স্যান্ডার্স ফুরফুরে মেজাজে থাকলেও কপালে চিন্তার ভাঁজ পেড়েছে হিলারির।
কারণ, প্রাইমারিতে পিছিয়ে যাওয়ার ফল ইতোমধ্যে পেতে শুরু করেছেন তিনি। নির্বাচনী প্রচারণায় আগের মতো সাড়া পাচ্ছেন না সাবেক এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তাছাড়া বিভিন্ন করপোরেশন থেকে তহবিল সংগ্রহের ক্ষেত্রেও বেকায়দায় আছেন তিনি। দুর্নীতিগ্রস্ত বিভিন্ন করপোরেশনের কাছ থেকে তহবিল নিয়ে হিলারি তাদের দুর্নীতি করার সুযোগ করে দেবেন_ এখন এ কথাই বলে বেড়াচ্ছেন স্যান্ডার্স এবং তার সমর্থকরা।
এদিকে, বার্নি স্যান্ডার্সের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকায় আগামী ককাস এবং প্রাইমারিগুলোতেও প্রথম দুটির প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। যদিও বিভিন্ন জরিপ বলছে, সাউথ ক্যারোলিনার প্রাইমারি এবং নেভাদা ককাসে হিলারি এগিয়ে রয়েছেন, কিন্তু নিউ হ্যাম্পশায়ার প্রাইমারিতে উল্লেখযোগ্য ব্যবধানে এগিয়ে থাকায় বার্নি স্যান্ডার্স সাউথ ক্যারোলিনা এবং নেভাদা ককাসে হিলারির জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবেন বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।
একই সঙ্গে স্যান্ডার্সের সমর্থকরাও নেভাদা এবং সাউথ ক্যারোলিনায় তার জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। তাদের মতে, ডেমোক্রেট প্রার্থী হিসেবে বার্নি স্যান্ডার্সই একমাত্র যোগ্য ব্যক্তি, যিনি রিপাবলিকান প্রার্থীকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারবেন।
স্যান্ডার্সের একজন সমর্থক বলেন, 'হিলারি জনগণের ব্যাপারে চিন্তা করেন না। তিনি বিভিন্ন করপোরেশন এবং তার তহবিল নিয়েই বেশি চিন্তিত। এজন্যই তাকে আমি সমর্থন করতে পারছি না।' পেগি গ্রিনাউ নামের আরেকজন গৃহিণী বলেন, 'আমি হিলারিকে বিশ্বাস করি না।'
এছাড়া বার্নি স্যান্ডার্সের আরেকজন নারী সমর্থক মেরিলিন ডেলুকা বলেন, 'স্যান্ডার্সই একমাত্র প্রার্থী, যার চূড়ান্ত মনোনয়ন পাওয়া উচিত।' এভাবে নারীরাও ক্রমেই হিলারির কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। যদিও বিভিন্ন জরিপ মতে, এখনো নারী ভোটারদের বড় একটি অংশ হিলারিকেই ভোট দিতে যাচ্ছে, তবে তরুণীদের ভোট দখলে হিলারির চেয়ে স্যান্ডার্সই এগিয়ে।
উল্লেখ্য, মনোনয়নের দৌড় শুরু হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন জরিপে উল্লেখযোগ্য ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন হিলারি ক্লিনটন। কিন্তু সাম্প্রতিক জরিপগুলোতে এগিয়ে যাচ্ছেন বার্নি স্যান্ডার্স। এজন্য হিলারির স্বপ্ন ফিকে হওয়ার পথে রয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। ২০০৮ সালে এভাবে বারাক ওবামার কাছে ককাস এবং প্রাইমারিতে হেরে প্রেসিডেন্ট হিসেবে মনোনয়নের দৌড় থেকে ছিটকে পড়েছিলেন হিলারি। এবারো তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না বলে মনে করেন বার্নি স্যান্ডার্সের সমর্থকরা।
এদিকে, হিলারির ই-মেইল বিতর্কই তাকে অনেকখানি পিছিয়ে দিচ্ছে বলেও মনে করেন তার সমর্থকরা। সাম্প্রতিক সময়ে ই-মেইল বিতর্ক নিয়ে নতুন করে আলোচনা-সমালোচনা না হলে প্রাইমারি এবং ককাসে তুলনামূলকভাবে আরো বেশি ইতিবাচক ফল পেতেন বলে মনে করেন তারা। যদিও নিউ হ্যাম্পশায়ারে বড় ব্যবধানের পরাজয়ে এখনই হাল ছেড়ে দিতে তারা প্রস্তুত নন বলে জানিয়েছেন হিলারির সমর্থকরা।
নেভাদা এবং সাউথ ক্যারোলিনায় স্যান্ডার্সকে হারিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতার দৌড়ে আবারো দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়াবেন বলে মনে করেন তারা। প্রাইমারি এবং ককাসে হিলারি তার যোগ্যতা প্রমাণ করে চূড়ান্ত নির্বাচনে জয়লাভের মাধ্যমে আমেরিকার প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তারা।
একইভাবে বার্নি স্যান্ডার্সের সমর্থকরাও তার প্রার্থিতার ব্যাপারে বেশ আশাবাদী। তবে কোন 'আশাবাদী' দল শেষ হাসি হাসতে যাচ্ছে, এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। সূত্র : দ্য ডেইলি বিস্ট
১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস